Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মোদী মিথ্যুক, তোপ দাগলেন দিদি

এক জনের জন্য তাঁর শক্তিশেল— বাংলা ভাগ এবং মিথ্যেবাদী। আর এক দলের জন্য— বি টিম। এমনই অস্ত্রে কখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে, কখনও কংগ্রেস (সঙ্গে সিপিএমকেও) বিঁধে আলিপুরদুয়ারে ভোট চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরের প্যারেড গ্রাউন্ডে সভা ছিল তাঁর।

জলপাইগুড়ির সভামঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সন্দীপ পাল

জলপাইগুড়ির সভামঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সন্দীপ পাল

নমিতেশ ঘোষ ও নারায়ণ দে
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২১
Share: Save:

এক জনের জন্য তাঁর শক্তিশেল— বাংলা ভাগ এবং মিথ্যেবাদী। আর এক দলের জন্য— বি টিম। এমনই অস্ত্রে কখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে, কখনও কংগ্রেস (সঙ্গে সিপিএমকেও) বিঁধে আলিপুরদুয়ারে ভোট চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরের প্যারেড গ্রাউন্ডে সভা ছিল তাঁর। হাজির জনতার সামনে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠনের কৃতিত্বও নিজের কাঁধে নিতে ছাড়লেন না তৃণমূল নেত্রী।

কয়েক দিন আগেই বীরপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভায় মাঠ ছাপানো ভিড় হয়েছিল। সেই সভায় মোদীর প্রধান নিশানা ছিলেন মমতা। কখনও দুর্নীতি প্রসঙ্গে, কখনও সিন্ডিকেট এবং সেই সূত্র ধরে চন্দন সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তিনি বিঁধেছিলেন তৃণমূল নেত্রীকে। এ দিন তারই যেন জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন মমতা। চা বাগান এবং গোর্খাল্যান্ড— দুই বিষয়ে তিনি সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রীর। বললেন, ‘‘তিন মাস আগে সাতটি চা বাগান অধিগ্রহণ করার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একটাও নেয়নি। মিথ্যা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ভোটের জন্য।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লির মসনদ চালাতে পারে না, বাংলায় এসে বড় বড় কথা! নির্বাচন শেষ হবে। ভোটপাখি উড়ে যাবে।’’

বীরপাড়ায় বিমল গুরুঙ্গকে সঙ্গে নিয়ে সভা করেছিলেন মোদী। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সকে টুকরো করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাকে ভাগ করার চেষ্টা করছে বিমল গুরুঙ্গ ও বিজেপি। গুরুঙ্গকে নিয়ে মিটিং করেছেন পিএম। আপনারা কি চান আলিপুরদুয়ার থেকে তরাই-ডুয়ার্স আলাদা হোক?’’

তবে লক্ষ্যণীয় বিষয়, মমতার সভায় এ দিন ছিলেন না উইলসন চম্প্রমারি। চম্প্রমারির পরিবারের বিরুদ্ধেই রক্ত চন্দন সিন্ডিকেট ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে। মমতা অবশ্য মঞ্চ থেকেই জানান, প্রচারে ব্যস্ত থাকায় এই সভায় আসতে পারেননি চম্প্রমারি। কিন্তু স্থানীয় অনেকেই বলছেন, মোদীর আক্রমণের পরে এ দিন অস্বস্তি এড়াতেই মমতার মঞ্চে থাকেননি বিধায়ক।

অস্বস্তি অবশ্য ছিল ভিড় নিয়েও। হাজার পঞ্চাশেক লোক হবে ধরে নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে সভা হয়। কিন্তু সাত-আট হাজারের বেশি লোক মাঠে ছিল না বলে তৃণমূলেরই কেউ কেউ বলেছেন। তবে তাঁদের দাবি, এত রোদে অনেকেই কাছেপিঠে গাছের ছায়ায় চলে গিয়েছিলেন। সে জন্য মাঠে ভিড়টা জমতে দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় মানুষের অনেকেই বলছেন, আগের মতো মমতাকে দেখতে আসার ঝোঁকও কমেছে। না হলে এই গরম সহ্য করেও লোক বেশি হতো।

পাল্লা কোন দিকে মাপতে ভিড় যদি কোনও সূচক হয়, তবে তৃণমূলের কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য। বিশেষ করে আলিপুরদুয়ার জেলার সব কটি আসনেই এ বার জোট ও তৃণমূলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা। এর মধ্যে খোদ আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে যুদ্ধ চতুর্মুখী। এখানে কংগ্রেসের প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন সরকার। আবার বামফ্রন্টের তরফে প্রার্থী আরএসপি-র নির্মল দাস। নির্মলবাবুকে অনেকেই জেলার ট্র্যাজিক চরিত্র বলছেন।

দীর্ঘদিনের বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও ২০১১ সালে দলের মধ্যেই তাঁকে পিছনে ফেলে এখানে প্রার্থী হয়েছিলেন ক্ষিতি গোস্বামী। এত দিন আলিপুরদুয়ারকে আলাদা জেলা করার দাবি নিয়ে লড়াই চালাতেন নির্মল। অথচ জেলা গঠনের পরে সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকেনি তৃণমূল সরকার। আর এ বার জোটের হাওয়ায় পাল তুলে স্থানীয় সিপিএম কর্মীরা বিশ্বরঞ্জনের প্রচারে পা মিলিয়েছেন। অর্থাৎ, সব ক্ষেত্রেই ব্রাত্য রয়ে গিয়েছেন নির্মল।

সেই নির্মলের এলাকায় দাঁড়িয়ে দলের প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তীর জন্য ভোট চাইতে গিয়ে মমতা এ দিন বলে গেলেন আর এক নেপথ্য মানুষের কথা। তিনি বিদায়ী বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়। কংগ্রেস-সিপিএম বোঝাপড়া মানতে না পেরে তিনি সরে দাঁড়ান। মমতা এ দিন তাঁর কথা উল্লেখ করে আক্রমণ করেন জোটকে। সেই সূত্র ধরেই বলেন, ‘‘আমি এক সময় কংগ্রেস করতাম। কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল। সেই সময় কংগ্রেসকে সিপিএমের বি-টিম বলা হত। তা সহ্য করতে পারিনি। আদর্শের আপস করা যায় না। তাই দল ছেড়েছি।’’ তার পরেই আর্জি, ‘‘কংগ্রেসিদের কাছে আবেদন, এই কংগ্রেসকে একটি ভোটও দেবেন না।’’ নির্মল দাসের প্রসঙ্গ ঘুরপথে আসে মমতার মুখে। বামফ্রন্টের শরিকদের আর কোনও সম্মান দিচ্ছে না সিপিএম— এই অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম এখন আর বামফ্রন্ট বলছে না। আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক বলছে না। এখন কংগ্রেস, সিপিএম একে অপরের পিঠে উঠেছে। বামফ্রন্ট ভেঙেও টুকরো হয়ে গিয়েছে।’’

জেলা তৈরি কৃতিত্ব নিতেও ছাড়েননি মমতা। আবার বলেছেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার জেলার এক বছর পূর্ণ হবে কয়েক দিন পরে। ভাবছি জন্মদিনে উৎসব করব। তা হলে তো আবার আসতে হবে।’’ এর পরেই তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কি আসবো তো? তা হলে আপনাদের আগামী ১৭ তারিখ উৎসবের মেজাজে ভোটটা জোড়াফুলে দিতে হবে।... কি, ভোটে জেতাবেন তো?’’ সামনের সারি থেকে ইতিবাচক জবাব উড়ে এল। কিছুটা স্বস্তি নিয়ে মঞ্চ ছাড়লেন তৃণমূল নেত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Modi mamata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE