Advertisement
E-Paper

নারদ-ধন্দ কাটছে না দিদির

দিদি নারদ-ভাইদের পাশে আছেন না নেই? বুধবার বারাসতে সভা ছিল দিদির। সেখানে স্থানীয় সাংসদ তৃণমূলের কাকলি ঘোষদস্তিদার। নারদের ফুটেজে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৮
কানে কানে। দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠে নির্বাচনী সভায় সৌগত রায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: শৌভিক দে।

কানে কানে। দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠে নির্বাচনী সভায় সৌগত রায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: শৌভিক দে।

দিদি নারদ-ভাইদের পাশে আছেন না নেই?

বুধবার বারাসতে সভা ছিল দিদির। সেখানে স্থানীয় সাংসদ তৃণমূলের কাকলি ঘোষদস্তিদার। নারদের ফুটেজে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এ দিন সভায় দিদির পাশে তাঁকে দেখা গেল না। তাই ভাবা হয়েছিল, দিদি যা বলেছেন, করে দেখালেন।

কিন্তু হাবড়া থেকে দমদমে পৌঁছতেই বদলে গেল ছবিটা। মঞ্চে দিব্যি বসে রয়েছেন সৌগত রায়, নারদ ফুটেজে যাঁকে ঘুষের টাকা নিয়ে বিছানার নীচে লুকিয়ে রাখতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দিদি তাঁকে নেমে যেতে বললেন না! উল্টে দমদমের সেই সভাতেই দুম করে বলে দিলেন, ‘‘কাকলিকে নারদের টাকা খেতে হয় না। পঞ্চাশটা নারদ নিউজ কিনে নিতে পারে কাকলি।’’ নারদে জড়িত সাংসদের সম্পত্তির বহর নিয়ে দিদির এই বড়াই আবার অন্য প্রশ্নও তুলে দিল। কংগ্রেস নেত্রী তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে শর্মিষ্ঠা দিদির কাছে কৈফিয়ত চেয়ে বললেন, ‘‘এত টাকা কোথায় পেলেন কাকলি? উনি কি টাটা-বিড়লা নাকি?’’ আবার কাকলির সিন্ডিকেট যোগের দিকে আঙুল তুলে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘যার লোভ বেশি, সে লুঠও বেশি করে।’’

সুতরাং ধন্দ থেকেই গেল— দিদি নারদের পাশে আছেন কি নেই?

গত রবিবার খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে দিদি দাবি করেছিলেন, আগে জানলে নারদ অভিযুক্তদের টিকিট দিতেন না। দিদির সেই কথাটা দলের ওয়েবসাইটেও গোটা গোটা হরফে লিখে দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই ধারণা হয়েছিল, নারদ-দুষ্টদের থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন দিদি। আগে-পরে কিছু ঘটনার কারণে দিদির সেই অবস্থান সম্পর্কে রাজ্য রাজনীতিতে ধারণা জোরালো হচ্ছিল। যেমন বারাসতের আগে গত শনিবার হাবড়ায় সভা ছিল দিদির। সে দিনও মঞ্চে কাকলি ছিলেন না। আবার গত সোমবার হুগলির সভাতেও ঘুষকাণ্ডে আর এক অভিযুক্ত খানাকুলের বিধায়ক ইকবাল আহমেদকে ঘেঁষতে দেননি দিদি।

কিন্তু দমদমের ছবিটাই গুলিয়ে দিল। তৃণমূলের অন্দরের একটা খবর— আসলে নিজের অবস্থানেই থাকতে চেয়েছিলেন দিদি। বামেরা বিভ্রান্ত করে সেটা করতে দিল না মমতাকে। বারাসত থেকে দমদম আসছিলেন দিদি। মাঝে দেখতে পান জোটের মিছিল চলছে। কাকলির নারদ যোগ নিয়ে তাঁরা স্লোগান তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাথা গরম। সেটাই দমদম পৌঁছে সভার ভাষণে বেরিয়ে আসে।

এর পরেও প্রশ্ন থেকে যায়।

তাই যদি হবে তা হলে সৌগত রায়কে দমদমের মঞ্চে থাকতে দেওয়া হল কেন? দমদম এলাকার এক তৃণমূল নেতা বলেন, নারদ ভিডিওয় যাঁদের ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের সরাসরি মঞ্চে না-থাকার ফতোয়া তো দিদি দিতে পারেন না। সমঝদারদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। যেমন কাকলি। দিদির বার্তা বুঝে নিজে থেকেই দূরত্ব রাখছেন। কিন্তু সৌগতবাবুকে বিষয়টা বোঝানো মুশকিল। এ দিনও তিনি বলেন, ‘‘আমি স্থানীয় সাংসদ। সভায় যাব, সেটাই তো স্বাভাবিক। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই বা কেন!’’ তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে কোথায় কবে দলের সভা রয়েছে, তার খোঁজ রেখে পৌঁছে যাচ্ছেন। সমস্যাও হচ্ছে। যেমন খড়দহে অমিত মিত্রের প্রচারে গিয়ে সৌগতবাবু বলেন, ‘‘আমার ওপর রাগ হলে লোকসভায় ভোট দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু উনি সৎ লোক।’’

তবে অনেকে বলছেন, আসলে নারদের ফুটেজ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে দিদিকে। যেন শাঁখের করাত। এগোলে বিপদ, পিছোলেও বিপদ। নারদ ভাইদের ঝেড়ে ফেলতে চাইলে তাঁরা পিছনে টেনে ধরছেন। আবার তাঁদের পাশে দাঁড়ালে ভোটাররা
তাঁকে দূরে সরিয়ে দেবেন— এই আশঙ্কা রয়েছে।

কী করবেন দিদি? স্পষ্ট হলো না বুধবারেও।

assembly election 2016 Mamata Banerjee TMC Narada
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy