সতীর্থদের অনেকেই তাঁকে দলের ‘বিবেক’ বলে থাকেন। কোনও ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনায় দল যখন বিচলিত, তখনই জাগ্রত হয় সেই ‘মিনি বিবেক’। মিডিয়ার সামনে দুম-দাম এমন কিছু (যা বাস্তব বলে মনে করেন দলের কেউ কেউ) বলে দেন, যা দলের অস্বস্তি আরও বাড়ায়। সে সারদা থেকে নারদই হোক, বা সদ্য ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ সেতুর প্রসঙ্গ। তিনি রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী তথা আট বারের প্রার্থী, তৃণমূলের সাধন পাণ্ডে। এ বারও লড়ছেন মানিকতলায়। টানা ৩১ বছর ধরে অপরাজিত বিধায়ক। দলে স্পষ্ট বক্তা হিসেবে সুনাম তাঁর। নজর এলাকার উন্নয়নেও। তাই দেওয়ালের লিখন, ‘অগ্রগতির শক্ত বাঁধন, মানিকতলায় আবার সাধন।’
সারদা কেলেঙ্কারিতে যখন কার্যত বিপর্যস্ত হয়েছিল সরকার, সে সময়ে সাধনবাবু জানিয়েছিলেন, ক্রেতাসুরক্ষা দফতরে আগে থেকেই নানা অভিযোগ এসেছিল। সময়ে সতর্ক হলে তা রোখা যেত।
নারদ নিয়েও মুখ চেপে রাখতে পারেননি বর্ষীয়ান ওই নেতা। সরকারে তাঁর সতীর্থ একাধিক মন্ত্রী, বিধায়কের ঘুষ নেওয়ার ফুটেজ দেখে দল যখন বিচলিত, তখনও সাধনবাবুর মুখ ফসকে বেরিয়েছে, ‘‘আমার দফতর টাকা নেয় না, বরং লোককে টাকা দেয়।’’ আসলে দলের কিছু নেতা-মন্ত্রীর লাইন ‘ভুল’ হলেও তাকে ‘ঠিক’ বলার লোক সাধনবাবু যে নন, বার বার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। মিডিয়ার দৌলতে যা পৌঁছে গিয়েছে আম জনতার কাছেও। সাধনবাবুর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এটাই দাদার ইউএসপি।
সেই ‘ইউএসপি’তে সাধনবাবুর সর্বশেষ সংযোজন বিবেকানন্দ উড়ালপুল। সেখানে গিয়েও সাধনবাবু বলে ফেলেন, ‘‘ঝালাই করা নাটবল্টু না দিয়ে, পাল্টে নতুন দেওয়া দরকার ছিল। তা হলে ২৭ জনকে এ ভাবে বেঘোরে মরতে হতো না।’’ ভোটের বাজারে এখানেই অন্যদের থেকে আলাদা সাধন পাণ্ডে।
রাজনীতিতে বরাবরই সোজা কথার বলার লোক তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি, তখন থেকেই সঙ্গে রয়েছেন নেত্রীর ‘সাধনদা’। উত্তর কলকাতায় মমতার বিশ্বস্ত সেনাপতি। তৃণমূলের জন্মের প্রাক্কালে শ্যামবাজারে মমতার এক সভায় বিশাল সমাবেশের সাফল্যে সাধনের ভূমিকা নিয়ে খুশি হয়েছিলেন নেত্রীও। সেই আমলে মহারাষ্ট্র নিবাস হলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনেও সোমেন মিত্রদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করেছেন মমতাকে জেতাতে। পারেননি ঠিকই। কিন্তু তাঁর সেই উদ্যোগ ভোলেননি মমতাও। ক্ষমতায় আসার পরে তাই দীর্ঘদিনের সাথী সাধনদাকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন।
কলকাতা পুরসভার ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে মানিকতলা কেন্দ্র। দু’টি ওয়ার্ড দীর্ঘকাল বামেদের হাতে ছিল। তা-ও গত পুরভোটে দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। কেউ কেউ এটিকে সরকারের উন্নয়নের ফলেই বলে মনে করছে। তা মানতে নারাজ সাধনবাবু। কারণ জানতে চাইতেই বললেন, ‘‘অন্ধ্রে চন্দ্রবাবু নাইডু তো অনেক উন্নয়ন করেছিলেন। তা সত্ত্বেও মানুষ তাঁকে হারালেন কেন? আমাদের নেত্রী শুধু উন্নয়ন করেই থেমে থাকেন না, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও রাখেন। জেলা সফর করেন। সেটাই জেতার আসল চাবিকাঠি।’’
মঙ্গলবার ভোটের শেষ প্রচার সেরে বসেছিলেন বাড়িতে। সঙ্গে ভোট ম্যানেজার মেয়ে শ্রেয়া। বিরোধী দল নিয়ে কি চিন্তিত? প্রশ্নের সোজাসাপটা জবাব, কাউকে বিরোধী ভাবি না। জানালেন, রাস্তা ভেঙে গেলে বা জঞ্জাল জমলে কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যান মেয়রের কাছে। আবার মমতা যে দায়িত্ব দেন, তা-ও মন দিয়ে করার চেষ্টা করেন।
দল এবং নেত্রীর কার্যকলাপের প্রশংসায় মুখর সেই সাধনবাবুর বিরুদ্ধে সাবোতাজের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলেরই আরেক প্রার্থী তথা বিদায়ী মন্ত্রী শশী পাঁজা। পাশের কেন্দ্র শ্যামপুকুরের তৃণমূল প্রার্থী শশীর অভিযোগ, ‘‘সাধনবাবু তাঁকে হারানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এলাকায় যাঁরা এই চক্রান্তে জড়িত, তাঁদের পাণ্ডা সাধনবাবুই।’’
ভোটের মাত্র ৩৬ ঘণ্টা আগে শশীর ওই অভিযোগ শুনে সাধনবাবুর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, ‘‘শশীর সন্দেহবাতিক। তাই এ সব বলছে।’’ পাঁজা পরিবারকে রুখতে এমন করা হচ্ছে শুনে তিনি বলেন, ‘‘ও কি জানে, আমি জানি না। তবে ২০১০ পুরভোটে মমতা আমাকে বলেছিল ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাকে প্রার্থী করবো। শশীর নাম সুপারিশ করেছিলাম আমিই।’’ সবশেষে বলেন, ‘‘তৃণমূলে সবাই মমতাকেই মান্য করে। ওঁর হাত শক্ত করতে সবাই লড়ছে। শশী কি সেটাও জানেন না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy