দক্ষিণের বারান্দার দরজাটা হাট করে খোলা। হু-হু করে হাওয়া বইছে। সঙ্গে পাখা ঘুরছে ফুল স্পিডে। বিরলকেশ মাথায় তবু বিনবিনে ঘাম। রুমাল দিয়ে চেপে চেপে তা মুছিয়ে দিচ্ছেন উদ্বিগ্ন স্ত্রী। বার বার ডাক্তার ডাকার কথা বলছেন স্ত্রী বন্দনাদেবী। কিন্তু তিনি অবিচল। গম্ভীর গলায় বলছেন— ‘‘আমি একদম ঠিক আছি!’’
অস্বস্তি এড়িয়ে প্রাণপণে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিলেন ওমপ্রকাশ মিশ্র।
গত ৪৮ ঘণ্টার ঘটনাপ্রবাহে তাঁর জানা ছিল কী হতে পারে! ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থিপদ থেকে তিনি যে ছিটকে গিয়েছেন, তা চূড়ান্ত ভাবে জানার পরে শুক্রবার সকাল থেকেই ওমপ্রকাশকে সহানুভূতি জানাতে ফোন করেছেন শুভানুধ্যায়ীরা। কালিকাপুর মেন রোডে তাঁর ফ্ল্যাটে বসে এ দিন বিকেলে ওমপ্রকাশ বলছিলেন, ‘‘কানাডা থেকে এক বন্ধু সকালেই ফোন করেছিলেন। ইন্টারনেটে তিনি জেনেছেন, আমাকে ভবানীপুরে প্রার্থী করা হচ্ছে না। খুবই বিরক্ত তিনি। ভবানীপুরের বহু সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মী তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অনেকেই আমাকে ফোন করেছেন। সকলেই হতবাক!’’ কারণ, ভবানীপুরে দল তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী ঘোষণার আগেই তড়িঘড়ি প্রচারে নেমে পড়েছিলেন ওমপ্রকাশ।
টিভিতে সান্ধ্য আলোচনা সভায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষকতা ও গবেষণা করা ওমপ্রকাশের উপস্থিতি বেশ নিয়মিত। এ দিন কিন্তু তিনি নিজেকে যথাসম্ভব গুটিয়ে রাখছিলেন। চেষ্টা করছিলেন হতাশা, অস্বস্তি গোপন রাখতে। কারণ, তাঁর কথায়— ‘‘মুখ খুললে, কংগ্রেস-বাম জোটের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে!’’ একটা সময়ে ফোনের স্যুইচ অফ করে ফ্ল্যাটের ভিতরেই নিজেকে কার্যত বন্দি করে রেখেছিলেন ওমপ্রকাশ। তাঁদের দিল্লিবাসী ছেলে অভিষেক এবং কন্যা সিলভিয়াও খুবই বিরক্ত বলে জানালেন স্ত্রী বন্দনা। তাঁর নিজের মন্তব্য, ‘‘খুবই অন্যায় হয়েছে। অবিচার করা হয়েছে ওঁর সঙ্গে।’’ ওমপ্রকাশ সব শুনেও যেন শুনছেন না। তিনি তখন প্রেস বিবৃতি তৈরিতে ব্যস্ত।
তাঁর জায়গায় দীপা দাশমুন্সিকে প্রার্থী করার প্রক্রিয়া শুরুর সময় থেকেই ওমপ্রকাশ বলছিলেন, কংগ্রেস-বাম সমঝোতা তৈরিতে তিনি কী ভাবে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। কেন তিনি ভবানীপুরে প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন জানাতে গিয়ে এ দিন প্রথম সরব হলেন ওমপ্রকাশ। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইতিবাচক একটা বার্তা আমরা বাংলার মানুষের কাছে দিতে চেয়েছি। সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন নারায়ণগড়ে দাঁড়িয়েছেন, রবীন দেব যেমন সিঙ্গুরে দাঁড়িয়েছেন, আমিও তেমনই কংগ্রেস-বাম জোটের এক জন কারিগর হিসেবে ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। বোঝাতে চেয়েছিলাম কঠিন লড়াইয়ে আমরা ভয় পাই না।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, ভবানীপুরে ওমপ্রকাশ নিজে থেকেই প্রার্থী হতে চাওয়ায় তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে! অধীরকে জানিয়েই তিনি প্রচার শুরু করেছিলেন বলেও ওমপ্রকাশের দাবি। কিন্তু গত দু’দিনে অধীর তাঁর খোঁজও নেননি বললে ঘনিষ্ঠদের কাছে তিনি অনুযোগ করেছেন। তবে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওমপ্রকাশের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘তৃণমূল উৎসাহিত হবে, এমন একটি কথাও আমি বলব না!’’
কংগ্রেস অন্য কোনও কেন্দ্রে প্রার্থী করলে তিনি দাঁড়াবেন কি না, প্রশ্ন করলে প্রেস বিবৃতি হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ওমপ্রকাশ। বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বাম-কংগ্রেস এবং ‘আমরা আক্রান্ত’ প্রার্থীদের সমর্থনে রাজ্য জুড়ে প্রচারেই নিমগ্ন থাকতে চান তিনি।
সারা দিন ফ্ল্যাটে থাকলেও, সন্ধ্যা নামতেই বেরিয়ে পড়লেন ওমপ্রকাশ। গন্তব্য কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্র। বাংলার ভোট নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং। সেখানেই রাত ন’টা পর্যন্ত কাটল তাঁর।
আপাতত কাজে ব্যস্ত থেকেই শোক ভুলতে চাইছেন ওমপ্রকাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy