যেন মালদহেরই ছবি দক্ষিণ দিনাজপুরে। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে নাজেহাল তৃণমূল নেতৃত্ব।
ভোটের মুখে দলেরই দু’পক্ষের বিবাদ মেটাতে কলকাতা থেকে আসতে হল তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরেই ফের শুরু হয়ে গেল বিপ্লব মিত্র বনাম সত্যেন রায়ের গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব।
মালদহে সাবিত্রী মিত্র ও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর বিবাদ মেটাতে অনেক চেষ্টা করেছেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু দিনের পর দিন তা বেড়েই চলেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরেও তৃণমূলের দুই নেতা বিপ্লববাবু ও সত্যেনবাবুর দ্বন্দ্ব মেটাতে খোদ তৃণমূল নেত্রীই দীর্ঘ দিন ধরে সচেষ্ট। জেলার তপনে প্রকাশ্য সভাতেই তিনি বলে গিয়েছিলেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করবেন না। কিন্তু সে কথা শোনা তো দূরের কথা,
পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, বিপ্লববাবুকে জেলা তৃণমূলের সভাপতির পদ থেকেই সরিয়ে দেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তার পরেও সমস্যা মেটেনি। তাই সোমবার জেলায় আসতে হল পার্থবাবুকে।
দিনভর তিনি কয়েক দফায় ঘরোয়া বৈঠক করলেন। দলের দু’পক্ষকে ডেকে বকলেন, বোঝালেনও। জনসভাতেও যোগ দিলেন পার্থবাবু। দিনান্তে মালদহে ফিরে গেলেন গৌড় এক্সপ্রেস ধরে কলকাতা যাওয়ার জন্য। আর তিনি যেতেই তৃণমূলের বিবদমান দু’পক্ষ লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে খবর পৌঁছেছে খোদ মহাসচিবের কাছেও। পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলে মনোমালিন্য থাকতে পারে। তা মেটানোর জন্য বলেছি। বুঝিয়েছি। বকেছি। দলনেত্রী কী চান সেটাও স্পষ্ট করে বলেছি। তার পরেও যদি কেউ বেগড়বাঁই করেন তা হলে দলনেত্রী যে কড়া পদক্ষেপ নেবেন সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছি।’’
কিন্তু পরিস্থিতি বলছে, সে কথা বুঝতে চাইছেন না কোনও গোষ্ঠীই। ক’দিন ধরে গঙ্গারামপুরের নন্দনপুরে বিপ্লববাবু বনাম সত্যেনবাবুর অনুগামীদের একাংশের মধ্যে গুলি-বোমা নিয়ে সংঘর্ষও শুরু হয়েছে। এ দিনই দু’পক্ষের একাংশ অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য বৈঠক করতে চান। কিন্তু, অন্য পক্ষ তাতে বাধ সাধেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নন। তাঁর দাবি, ‘‘দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা মিটবে।’’ বিপ্লববাবু কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনই কোনও মীমাংসা হচ্ছে না। তিনি জানান, ৩০ মার্চ নন্দনপুর অঞ্চলে দু’পক্ষকে নিয়ে বসা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা মিটে গেলে দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেবে বলে আশা করছি।’’
গোষ্ঠী বিবাদের জেরে এখনও তৃণমূলের কিছু স্থানীয় নেতা ঘর ছাড়া। নন্দনপুরের অঞ্চল সভাপতি মজিরুদ্দিন মণ্ডল সভা থেকেই সকলকে গ্রামে ফেরানোর ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস ধরে এলাকা ছাড়া। সরকারি দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। কেউ যেন প্ররোচনায় পা না দেন।’’
মজিরুদ্দিনেরই গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছোড়ায় অভিযুক্ত প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি তথা নন্দনপুরের উপপ্রধান নুরুল ইসলামও জানিয়ে দেন, আগে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলাতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘জামিন অযোগ্য ধারায় দায়ের করা মিথ্যা মামলা তুলে নিতে হবে। তার পরে কথা হবে।’’ তাই বিকেল পাঁচটা নাগাদ নন্দনপুরের সাহাবাজপুর মোড়ে তৃণমূলের অঞ্চল কমিটি আয়োজিত জনসভায় পার্থবাবু বারেবারে আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত জেলায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই কবে থামবে তা স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy