Advertisement
E-Paper

রাত পোহালেই রায় জনতার

কোথাও টেবিল চাপড়ানোর আওয়াজে কান পাতা দায়। আবার কোথাও কেউ রাগে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ছেন। ঘনঘন ধূমপান, বারবার চা। নানা অঙ্ক কষে কারও দাবি, জোট আসছে ক্ষমতায়। সেই অঙ্কেই ভুল ধরে কেউ বলছেন, ফের সরকার গড়ছেন দিদিই। কারও ঘাম ছুটিয়েছে ভোট পরবর্তী সমীক্ষার ফল। আবার তা দেখেই কারও মুখে ফুটেছে হাসি। বৃহস্পতিবার বিধানসভা ভোটের রেজাল্ট। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিসই যেন ভোট-অঙ্কের পাঠশালা। ফলের আগে এমনই কিছু পার্টি অফিসের ছবি তুলে ধরল আনন্দবাজার।এই পার্টি অফিস থেকেই বীরভূম শাসন করেন অনুব্রত মণ্ডল। গণনার ঠিক এক দিন আগে দলীয় কর্মীদের মধ্যে চরম ব্যস্ততা বোলপুরে তৃণমূলের সেই দলীয় কার্যালয়ে। এ দিন অবশ্য সেই কার্যালয়ে ‘কেষ্টদা’র দেখা মেলেনি।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০১:৫৯
কী বুঝছেন? ফল প্রকাশের আগে বোলপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে জল্পনা কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র

কী বুঝছেন? ফল প্রকাশের আগে বোলপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে জল্পনা কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র

আনন্দে সবাই

এই পার্টি অফিস থেকেই বীরভূম শাসন করেন অনুব্রত মণ্ডল। গণনার ঠিক এক দিন আগে দলীয় কর্মীদের মধ্যে চরম ব্যস্ততা বোলপুরে তৃণমূলের সেই দলীয় কার্যালয়ে। এ দিন অবশ্য সেই কার্যালয়ে ‘কেষ্টদা’র দেখা মেলেনি। গণনার দিনের রণকৌশল ঠিক করতে তিনি সকাল সকাল বিভিন্ন বিধানসভা এলাকা পরিদর্শন করে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বেরিয়েছেন বলে দলেরই কর্মীরা জানালেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে তেমন ভিড়ও ছিল না। সেই সুযোগে এ দিন পার্টি অফিসে কয়েক বছর ধরে সাফাই না হওয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র পরিষ্কারে মন দিয়েছেন কর্মীরা। তার জন্য আনা হয়েছে দক্ষ মিস্ত্রিকেও। কম্পিউটার, প্রিন্টারও সাফসুতরো করছেন কেউ কেউ। তারই মাঝে দলের কর্মী থেকে বিভিন্ন সেলের জেলা নেতারা নাগাড়ে ফোনে ধরছেন জেলার নানা প্রান্তের নেতা-কর্মীদের। শেষ মুহূর্তের ফিডব্যাক নেওয়ার পাশাপাশি খোঁজ নিচ্ছেন জোট শিবিরের হালচালেরও। ফলাফল নিয়ে এত দিন ধরে নানা অঙ্ক কষা হয়েছে। তারই ছাপ দো গেল পার্টি অফিসে। আসবাব থেকে নানা রকম নথি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এ দিন দলীয় কার্যালয়ে যাননি বিদায়ী মন্ত্রী তথা বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ। তবে তিনি জানালেন, ফলাফল যাই হোক না কেন, কোনও রকমের প্ররোচনায় যেন কর্মীরা পা না দেন— সেই নির্দেশ নেতারা দিতে শুরু করেছেন। অবশ্য ফল যে তাঁদের পক্ষেই যাবে, তা জোরের সঙ্গেই দাবি করলেন পার্টি অফিসে থাকা জেলা স্তরের এক নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় জয়ের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হতেই সোমবার সন্ধ্যায় পার্টি অফিসে কর্মীদের মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে। নিজের মতো করে আনন্দ করেছেন অনেকেই।’’ এখন প্রতীক্ষা কেবল ফল বের হবার!

খবরে চোখ। সিউড়িতে সিপিএম পার্টি অফিসে। —নিজস্ব চিত্র

মিরাকেল হবে

মঙ্গলবার বেলা ১১টা। সিউড়িতে জেলা সিপিএম পার্টি অফিসে ঢুকতে গিয়ে খানিকটা যেন হোঁচট খেতে হল। নিশ্চুপ দলীয় কার্যালয়। সামনের দিকে কেউ নেই। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার মুখে দুই কর্মীকে দেখা গেল মন দিয়ে একটি বাংলা দৈনিকে চোখ বোলাচ্ছেন। ফল প্রকাশ হতে কয়েকটা ঘণ্টা মাত্র বাকি। তার আগে কোথায় পার্টি কর্মী ও নেতাদের সমাগমে পার্টি অফিসে জমজমাট পরিবেশ হবে। কিন্তু কোথায় কী! ভোট পরবর্তী সমীক্ষা কোথাও টোল খাইয়ে দিল না তো আত্মবিশ্বাসে? সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠেও তেমন কারও সাড়া পাওয়া গেল না। ডান দিকের একটি ঘরে উঁকি মারতেই বেরিয়ে এলেন এক কর্মী। জানালেন, নেতারা কেউ পার্টি অফিসে নেই। মুহূর্তে নিজেকে শুধরে বললেন, ‘‘দাঁড়ান, দেখি। হ্যা, জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা তো এখানেই ছিলেন।’’ দেখা মিলল পরনে সবুজ লুঙ্গি, আর হাফহাতা শার্টের মনসা হাঁসদার। সমীক্ষা কি কোনও ভাবে দলের মনোবলে চিঁড় ধরিয়েছে? সিপিএম জেলা সম্পাদকের দাবি, ‘‘মোটেও না! পার্টি কর্মীদের নিচুতলায় এ নিয়ে একটু আধটু চর্চা চলছে। কিন্তু আমরা মোটেও তা নিয়ে ভাবছি না। এ বারের ফলে মিরাকেল হবে।’’ কোন যুক্তিতে এ কথা বলছেন? মনসাবাবুর দাবি, দলের অন্দরে বিভিন্ন স্তর থেকে পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই তিনি এ কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নানুরে বলা হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। মুরারইকে তৃণমূলকে দেওয়া হয়েছে। কোনও মানে নেই। দু’টি কেন্দ্রেই জোট জিতবে। মিলিয়ে নেবেন। জেলায় আমরা কমপক্ষে সাতটি আসন পাব। সংখ্যাটি বাড়তেও পারে।’’ রাজ্যে সরকার গড়ার ব্যাপারেও অন্য জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই দলের নিশ্চিন্ত বলেই মনসাবাবুর দাবি।

জোট বেঁধে। রামপুরহাটে কংগ্রেসের পার্টি অফিসে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।

জয়ী আমরাই

বাক্স বন্দি ভাগ্য। তার আগে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে রামপুরহাটে কংগ্রেসের পার্টি অফিসে জল্পনার শেষ নেই। সমীক্ষায় যদিও রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। তাই কর্মীদের চোখে মুখে কিঞ্চিত দুশ্চিন্তার ভাব। কাউন্টিংয়ের দিন কার কী ভূমিকা, তা ঠিক করতে মঙ্গলবার এজেন্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রামপুরহাট কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। পার্টি অফিসে উপস্থিত আর এক কেন্দ্র হাঁসনের প্রার্থী মিল্টন রশিদও। সঙ্গে শহরের দুই দলীয় কাউন্সিলর সুদেব দাস, অমল শেখ এবং কংগ্রেস নেতা উত্তীয় মুখোপাধ্যায়-সহ জনা কুড়ি কর্মী। জিম্মি ও মিল্টন দু’জনকেই কর্মীদের অভয় দিতে শোনা গেল। তাঁরা বললেন, ‘‘কোনও ভয় নেই। আমরা জিতবই। কারও প্ররোচনায় পা দিলে চলবে না। যে কোনও রকমের অশান্তিকে রুখতে হবে।” দলের এজেন্টদের প্রতি নির্দেশ ভেসে এল, গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন নিজের কাউন্টিং টেবিল ছেড়ে বেরিয়ে না যান। পাশাপাশি ভোট গণনা চলাকালীন সময় দেখা, শোনা ও লেখা— এই তিনটি কাজও যেন ভাল করে করা হয়। দুই প্রার্থীই এ দিন জানিয়ে দিলেন, তাঁরাই দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্টদের সঙ্গে করে নিয়ে গণনাকেন্দ্রে ঢুকবেন। নেতাদের কথায় ভরসা পেলেন কর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ে আধ ঘণ্টার বৈঠক সেরেই জিম্মি আর মিল্টন রওনা দিলেন ডাকবাংলা মোড়ে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে রেজাল্টের দিনের রণকৌশল তৈরি করতে বসলেন দুই দলের জোটের নেতারা। সঙ্গে একে অপরকে দিলেন ভরসা।

কোটাসুরে বন্ধ বিজেপি অফিস।

তালা অফিসে

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভোট পরবর্তী সমীক্ষার ফল ঘোষণার হতেই জেলার বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল সোমবার রাতেই। চায়ের ঠেক থেকে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুলচেরা বিশ্লেষণে মেতেছেন তাঁরাও। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ফলপ্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগেও মঙ্গলবার ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর, সাঁইথিয়া, নানুর-সহ দলের বিভিন্ন কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা গেল। অথচ কোটাসুরের কার্যালয় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই বাড়ি বিজেপি-র দাপুটে নেতা দুধকুমার মণ্ডলের। কিন্তু সেখানে গিয়েও দেখা মেলেনি তাঁর। দুধকুমারের স্ত্রী জানান, তিনি রামপুরহাটে গিয়েছেন। কোটাসুর মোড়েই বাসনের দোকান বিজেপি-র একনিষ্ঠ কর্মী সদানন্দ মণ্ডলের। সকাল ১০টা নাগাদ গিয়ে দেখা গেল আনন্দবাজারে প্রকাশিত বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে কর্মীদের সঙ্গে তিনি তখন আলোচনায় মগ্ন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন তো তেমন কোনও কর্মসূচি নেই। তাই সব সময়ে কার্যালয় খোলে না।’’ আর দুধকুমার মণ্ডল এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ইতিমধ্যেই গণনা কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়ে গিয়েছে দলীয় কর্মীদের।

assembly election 2016 Congress TMC CPM votes result
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy