Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মান রাখল মালার প্রতিরোধ

ভোটের দিন ডান্ডাই যে সম্বল, তা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন তিনি। ‘ভোট লুঠেরাদের’ দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন ডান্ডা হাতেই। সঙ্গে জুটেছিলেন আরও জনা পঞ্চাশ মহিলা। পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল হামলাকারীরা। ১৯ মে দুপুর গড়াতেই জানা গেল, জয় ছিনিয়ে এনেছে প্রতিরোধই।

ভোটের দিন প্রতিরোধের মুখ মালা চালক। —ফাইল চিত্র।

ভোটের দিন প্রতিরোধের মুখ মালা চালক। —ফাইল চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:৫৭
Share: Save:

ভোটের দিন ডান্ডাই যে সম্বল, তা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন তিনি। ‘ভোট লুঠেরাদের’ দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন ডান্ডা হাতেই। সঙ্গে জুটেছিলেন আরও জনা পঞ্চাশ মহিলা। পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল হামলাকারীরা। ১৯ মে দুপুর গড়াতেই জানা গেল, জয় ছিনিয়ে এনেছে প্রতিরোধই।

বৃহস্পতিবার দুপুর গড়াতেই জামালপুরের সিপিএম প্রার্থী সমর হাজরার জয়ের খবর জেনেই ভোটের দিনের সেই প্রতিবাদী বধূ মালা চালক বলেন, ‘‘সকাল থেকে হুমকি দিচ্ছিল ওরা। ভয় যে একটু পাইনি তা নয়। তবে আমাদের দলই জিতেছে এটাই স্বস্তির। সে দিনের লড়াই মান রাখল।’’ আর সমরবাবু বলেন, ‘‘হেরে যাওয়ার পরেও মানুষের কাছ থেকে সরে যাইনি। পাশা থেকেছি। মানুষও বিশ্বাস রেখেছেন।’’

তবে দিনের শুরুটা কিন্তু নিশ্চিন্তে হয়নি মালার। তাঁর অভিযোগ, সকাল থেকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। জিতলে মারধর করা দেখে নেওয়ার কথাও বলে যাচ্ছিল শাসক দলের লোকেরা। সামনে না দেখালেও তিনি যে ভয় যা পাচ্ছিলেন তা নয়। তার উপর সকাল থেকেই টিভিতে জেলার একের পর এক বিপর্যয়ের খবর দেখে মনটা কু ডাকছিল আরও বেশি। রাউন্ডে রাউন্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখে জামালপুরের সিপিএম প্রার্থী সমর হাজরার জয় নিয়ে দোটানা যাচ্ছিল না মালার। যদিও শেষটা ভালই হল।

এর আগে ২০১৩-র পঞ্চায়েত, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে গণতন্ত্র চুরি হতে দেখেছেন হুগলি লাগোয়া জামালপুরের গ্রাম দাসপুরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। তাঁদের অভিজ্ঞতা, মেরেধরে ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ঘর থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। এ বার ভোট আসতেই তাই শুরু হয়েছিল আলোচনা, ‘‘পারব তো ভোট দিতে!’’ গ্রামের ছাপোষা মানুষগুলো বুথমুখো হতে সাহসও পাচ্ছিলেন না। এখানেই স্বতন্ত্র খেতমজুর পরিবারের বধূ মালা।

তাঁর যুক্তি ছিল, বাম সমর্থকদের এলাকা বলে তৃণমূল জমানায় অধরা থেকেছে উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় যে রাস্তা হওয়ার কথা ছিল, সেটা আধা-খেঁচড়া অবস্থায় পড়ে। ১০০ দিনের প্রকল্পের জব-কার্ড, বিপিএল কার্ড, রেশন কার্ডে নাম তোলার মতো জরুরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলাকার তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে চড়থাপ্পড়ও জুটেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ভোটের দিন ঘরে আটকে থাকার অভিজ্ঞতা। মালার দাওয়াই ছিল, ‘‘অনেক সয়েছি। পাল্টা দিই না, দেখি কী করে!’’ সেই অস্ত্রেই গ্রামের লোকেদের ভোট দেওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। তাঁর মনে পড়ে যায়, ২১ এপ্রিল সকাল থেকে দাসপুরের বাসিন্দারা কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২৫, ২২৬ নম্বর বুথের ধারেকাছে যেতেই মারধর, গালিগালাজ, হুমকি আসতে থাকে। ভোট না দিয়েই ফেরেন অনেকে। বেগতিক বুঝে অন্য মহিলাদের নিয়ে মাঠে নামেন মালা। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে আসা লোকজন এক প্রস্ত মারধর করতেই, আঁচলের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে অস্ত্র। জুজু দেখে পালায় হামলাকারীরা।

প্রতিরোধেরই মান রাখল জয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 candidate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE