দাদা সামলাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই রাস্তায় নামল কলকাতা পুলিশ।
শনিবার কলকাতা পুলিশের যে ৪২টি থানা এলাকায় নির্বাচন হবে, সেখানে কোন কোন দাদা গোলমাল পাকাতে পারে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার পত্রিকায় তাদের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ওই তালিকা ধরে ধরে দাদাদের বাড়িতে ফোন করে তাদের সতর্ক থাকতে বলল কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা এ দিন বলেন, শহর ও শহরতলিতে যে সব দুষ্কৃতী এখন জামিনে মুক্ত, তাদের উপরেও কড়া নজর রয়েছে। ইতিমধ্যেই কয়েক জন আত্মগোপন করেছে বলে লালবাজার সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
দুষ্কৃতীদের উপর নজরদারি চালাতে আটটি দল করা হয়েছে। গঙ্গাবক্ষেও নজরদারি হবে। এ ছাড়া, কুইক রেসপন্স টিম, ফ্লাইং স্কোয়াড ও মোবাইল ফোর্স তৈরি থাকবে। ডিসিদের নিয়ে ১৫টি বিশেষ দল তৈরিও থাকছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
গত ২১ এপ্রিল কলকাতার প্রথম দফার ভোটে উত্তর কলকাতার পরিচিত দাদাদের বোতলবন্দি করে রেখেছিল কলকাতা পুলিশ। দক্ষিণ কলকাতার চারটি কেন্দ্র (ভবানীপুর, রাসবিহারী, বালিগঞ্জ, বন্দর)এবং শহরতলির ছয়টি (যাদবপুর, টালিগঞ্জ, কসবা, মেটিয়াবুরুজ, বেহালা পূর্ব এবং বেহালা পশ্চিম) বিধানসভা কেন্দ্র পড়ছে কলকাতা পুলিশের আওতায়। ওই সব এলাকায় দাদাদের অনেকের বাড়ির সামনে দিয়েই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে রুট মার্চ করানো হয়েছে। দাদাদের অনেকেরই পরিবারকে বা ঘনিষ্ঠদের ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে, শনিবার যেন তাদের রাস্তায় ঘুরতে দেখা না যায়।
বন্দর এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর (নির্দল হিসেবে জিতে পরে যোগ দেন তৃণমূলে) আনোয়ার খানের নাম রয়েছে দাদা-তালিকায়। আনোয়ার এ দিন বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। শনিবার বাড়িতেই থাকব।’’ মেটিয়াবুরুজ এলাকার ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রহমত আনসারির বিরুদ্ধে রাজ্যের বাইরেও ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এ দিন পুলিশ রহমতের বাড়িতে ফোন করে সতর্ক করে। রহমতকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
চেতলার প্রতাপ সাহার দাপটে এই সে দিন আলিপুর থানার পুলিশ আশ্রয় নিয়েছিল টেবিলের নীচে। তাকেও এ দিন সতর্ক করে দিয়েছে আলিপুর থানা। লালবাজার সূত্রে বলা হয়, প্রতাপের নিজস্ব মহিলা বাহিনী রয়েছে। তাই মহিলা পুলিশের একটি দলকেও তৈরি রাখা হচ্ছে। প্রতাপের ফোন এ দিন সারাদিন বেজে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ভবানীপুর কেন্দ্রের আর এক দাদা স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্রকেও বৃহস্পতিবার পুলিশ সতর্ক করেছে। বিপ্লব এ দিন বলেন, ‘‘আমি পাড়াতেই থাকব। এখানে কোনও গোলমাল হবে না।’’
লালবাজার সূত্রের দাবি, এন্টালি, বেনিয়াপুকুর, কসবা, তিলজলা, তপসিয়া ও যাদবপুরের চিহ্নিত দাদাদের অনেকেই এই মুহূর্তে কলকাতায় নেই। যাঁরা রয়েছেন তাঁদের এলাকায় বা ফোনে পাওয়া যায়নি। দাদাদের রুখতে নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ দিয়েছে সিপিএমও। দিল্লিতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নির্বাচন কমিশনের কাছে দুষ্কৃতীদের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন। সেই তালিকার সঙ্গে নিজেদের তালিকা মেলাচ্ছে কলকাতা পুলিশ।
লালবাজার সূত্রে বলা হয়, পরিস্থিতি বুঝে অনেক জায়গায় কড়া ধাঁচের অফিসারকে শনিবার ডিউটি দেওয়া হয়েছে। যেমন ডিসি ডিডি (২) নগেন্দ্র ত্রিপাঠীকে বন্দরের তিনটি থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২১ এপ্রিলের ভোটে জোড়াসাঁকো, পোস্তা এলাকার দাদাদের নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন নগেন্দ্র। ডিসি চতুর্থ ব্যাটেলিয়ন অমিতাভ বর্মা ২১ এপ্রিল কড়া হাতে মানিকতলা সামলেছেন। তাঁকে শনিবার বন্দরের অন্য একটি অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কলকাতার প্রথম দফার ভোটে বেলেঘাটা ঠান্ডা করে দিয়েছিলেন ডিসি ইএসডি ধ্রুবজ্যোতি দে। তাঁকে বেনিয়াপুকুরের ৬০টি সংবেদনশীল বুথের দাযিত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিসি এসটিএফ নীলাঞ্জন বিশ্বাসকে দেওয়া হয়েছে যাদবপুর সামলানোর ভার। কসবা সামলাবেন ডিসি ট্রাফিক ভি সুলেমান নিশা কুমার। প্রতি অফিসারকেই পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্রের একটি ছোট্ট নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিপি-র সেই নির্দেশটি হল- সোজা ব্যাটে খেলুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy