Advertisement
E-Paper

নয়ে আট, হাসছেন রবীন্দ্রনাথ

তখন দুপুর গড়িয়েছে। গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এলেন ক্যাপ্টেন। চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। বাইরে শুরু হয়েছে সবুজ আবিরের ঝড়। মোবাইল অন করতেই পর পর ঢুকছে মেসেজ। বেজে উঠছে হোয়াটসঅ্যাপের রিংটোন।

নমিতেশ ঘোষ ও অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:৪২
তৃপ্তির হাসি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মুখে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

তৃপ্তির হাসি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মুখে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

তখন দুপুর গড়িয়েছে। গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এলেন ক্যাপ্টেন। চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। বাইরে শুরু হয়েছে সবুজ আবিরের ঝড়। মোবাইল অন করতেই পর পর ঢুকছে মেসেজ। বেজে উঠছে হোয়াটসঅ্যাপের রিংটোন। তা দেখার সময় তখন নেই। একের পর এক হাত যেন ছুঁতে চাইছে তাঁকে। তাঁদের দিকেই হাত তুলে জয়ের আনন্দে মাতলেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

গত বিধানসভার জয়কেও ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি। কি নিজের কেন্দ্রে, কি জেলা— সবেতেই তৃণমূলের জয়জয়কার। নাটাবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথবাবু ষোলো হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন। গতবারের তুলনায় ওই সংখ্যা দশ হাজার বেশি। শুধু তাই নয়, গোটা জেলায় তৃণমূল এ বারে আটটি আসন দখল করেছে। গত বিধানসভায় যে সংখ্যা ছিল চার। দৃশ্যতই তৃপ্ত রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “দিদিকে বলেছিলাম কোচবিহার থেকে ৯টি আসনই তাঁর হাতে তুলে দেব। একটিতে জয় আসেনি। বাকি আটটিতে জিতেছি। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের উপরে আস্থা রেখেছে। কোচবিহারের মানুষকে অভিনন্দন।”

এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক জোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে অনেকটাই চাপে পড়ে যায় তৃণমূল। কংগ্রেসের ভোট সিপিএমের সঙ্গে যোগ হলে যে অনেক আসনই হতে পারে, সে আশঙ্কা তাড়া করেছিল তারা। সেই আশঙ্কাতেই প্রচারে আরও জোর বেড়ে গিয়েছিল তাঁদের। নাটাবাড়ি থেকে শুরু করে দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচি, তুফানগঞ্জে চষে বেড়িয়েছেন তিনি। তাতেও আশ্বস্ত হতে পারেননি। ভোটের দিন তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। কখনও বুথের ভিতরে ঢুকে ভোট কর্মীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কখনও আবার বাইরে দাঁড়িয়ে ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের ধমক দিতে দেখা যায় তাঁকে। এমনকী, নিজের দলের এক কর্মীকে প্রকাশ্যে চড় মারেন তিনি। তাঁর এই বারবার মেজাজ হারানো দেখে আশঙ্কায় পড়ে যান খোদ কর্মী-সমর্থকরা। কোথাও কি খারাপ হচ্ছে, সে জন্যেই দলের ক্যাপ্টেন নিজের মেজাজ ধরে রাখতে পাচ্ছেন না!

ভোট শেষ হওয়ার পরেও তিনি যে পুরোপুরি জয়ের ব্যাপারে আশ্বস্ত, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছিলেন না তাঁর অনুগামীরা। ঘনঘন ক্যাপ্টেনের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন তাঁরা। চাপা টেনশনে রবীন্দ্রনাথবাবুর রক্তচাপ ওঠানামা করেছে। এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান তুফানগঞ্জে গণনাকেন্দ্রে। মুখের হাসি তখনও ফিরে আসেনি। এক কর্মীর কথায়, “যতই বিশ্বাস থাক না কেন, ফল নিয়ে তো একটা চাপা টেনশন থেকেই যায়।” আর রবীন্দ্রনাথবাবু যখন বেরিয়ে এলেন, তখন তাঁর চেহারা অন্য কথা বলছে। সব আশঙ্কা উধাও। বললেন, “আমি যা হিসেব করেছিলাম, তাই হল।’’

কিন্তু কী ভাবে এল তৃণমূলের এই সফলতা। রবীন্দ্রনাথবাবুর যুক্তি, “সারা বছর আমরা মানুষের সঙ্গে থেকেছি। কাজ করেছি। আপদে-বিপদে মানুষ আমাদের পাশে পেয়েছে। আমাদের সরকার গরিব মানুষের জন্য একাধিক প্রকল্প নিয়েছে। মানুষ তো আর অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার কথা নয়।” এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, দুটি সেতুর তৈরির সফলতা তো রয়েছে।

তৃণমূলের অনেক নেতাই অবশ্য দলের ওই ফলে হতবাক। যেমন হতবাক বিরোধীরা। তাঁদের কোনও অঙ্কই মিলছে না। কী ভাবে তৃণমূলের এই সফলতা এল, তা নিয়ে আলোচনায় বসেছেন বিরোধীরাও। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “আসলে সাংগঠনিক দুর্বলতাই ফারাক তৈরি করে দিয়েছে। তার উপর বিজেপি একটি ভাল অংশের ভোট কেটে নিয়েছে।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “ফল পর্যালোচনা করে দেখা হবে।”

assembly election 2016 Rabindranath Ghosh tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy