Advertisement
E-Paper

কংগ্রেসের পাশে আরসিপিআই-ও

তৃণমূলকে হারানোর বৃহত্তর লক্ষ্যে সিপিএমের পথেই হাঁটল বাম শরিক দল আরসিপিআই-ও। বহু টানাপড়েনের পরে শেষমেশ হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেসকেই ছেড়ে দিল তারা। সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতায় বিবৃতি দিয়ে এ কথা ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩১
রামপুরহাট নিয়ে এখনও জটিলতা কাটেনি। তারই মধ্যে জোট-বার্তা জোরালো করতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে ঢুঁ মারলেন কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

রামপুরহাট নিয়ে এখনও জটিলতা কাটেনি। তারই মধ্যে জোট-বার্তা জোরালো করতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে ঢুঁ মারলেন কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলকে হারানোর বৃহত্তর লক্ষ্যে সিপিএমের পথেই হাঁটল বাম শরিক দল আরসিপিআই-ও।

বহু টানাপড়েনের পরে শেষমেশ হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেসকেই ছেড়ে দিল তারা। সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতায় বিবৃতি দিয়ে এ কথা ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সব মিলিয়ে জেলার ১১টির মধ্যে ১০টি আসনেই মসৃণ সমঝোতার দিকেই এগিয়ে গেল বাম-কংগ্রেস জোট। যা রীতিমতো কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে শাসকদল তৃণমূলকে। যদিও এ দিন পর্যন্ত জট কাটেনি রামপুরহাট আসনটি নিয়ে। সেখানে এখনও বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস দু’পক্ষেরই প্রার্থী রয়ে গিয়েছেন। এ দিনই আবার দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে রামপুরহাটে দলীয় প্রার্থীর হয়ে সওয়াল করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির সদস্য হাফিজ আলম সৈরানি। যদিও বাম ও কংগ্রেস উভয় পক্ষেরই জোটপন্থী নেতাদের অবশ্য আশা, শীঘ্রই কাটতে চলেছে ওই আসনের জটও। তৃণমূলকে হারানোর লক্ষ্যে বাম শরিকেরা স্বার্থত্যাগ করে যে ভাবে এগিয়ে এসেছে, তা-ই যাবতীয় জট কাটাতে অনুপ্রেরণা দেবে বলে ওই নেতাদের মত।

ঘটনা হল, তৃণমূলকে হারানোর বৃহত্তর লক্ষ্যে জেলার প্রায় সব ক’টি আসনেই মসৃণ সমঝোতার দিকে এগিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। দ্বন্দ্ব ছিল কেবল রামপুরহাট ও হাঁসন কেন্দ্রে। প্রথমে বামফ্রন্ট রামপুরহাটে ফরওয়ার্ড ব্লকের মহম্মদ হান্নান এবং হাঁসনে আরসিপিআই-এর কামাল হাসানকে প্রার্থী করে। কিন্তু, ওই দুই আসন চেয়ে পরে কংগ্রেসও তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। রামপুরহাটে টিকিট দেওয়া হয় জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এবং হাঁসনে জেলা আইএনটিউসি সভাপতি মিলটন রশিদকে। ফ্রন্ট শরিক ও কংগ্রেস— কোনও পক্ষই ওই আসন ছাড়তে নারাজ ছিল। গত শুক্রবার শেষ দিন থাকলেও কোনও এক পক্ষই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি। আর তার পরেই রামপুরহাট ও হাঁসনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা সিপিএম।

আরসিপিআই সূত্রের খবর, এই ক’দিনে দলের অন্দরে বিষয়টি নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। ভোটে লড়া বা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া— দু’পক্ষেই নেতা-কর্মীরা নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। তাতে দু’টি বিষয় স্পষ্টই উঠে এসেছিল। এক, বড় শরিক সিপিএম পাশে না থাকলে ভোটে লড়ে বিশেষ রাজনৈতিক লাভ নেই। দুই, লোকসভা ভোটের ফলে বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট (৫১.৮৭ শতাংশ) তৃণমূলের (৩৩.৯১ শতাংশ) থেকে ঢের বেশি। এ ক্ষেত্রে জোটের বিপক্ষে দাঁড়ালে তাতে শাসকদলেরই লাভ হবে। সব দিক দেখে শেষমেশ ভোটে না লড়ারই সিদ্ধান্ত নিলেন আরসিপিআই নেতারা। দলের জেলা সম্পাদক তথা মনোনয়ন দাখিল করা কামাল হাসান বলছেন, ‘‘সিপিএমের সাহায্য পেলে লড়তাম। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল। দিনের শেষে আমরা যাঁরা বামপন্থায় বিশ্বাস করি, তাঁদের একটাই লক্ষ্য— তৃণমূলের অত্যাচার থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচানো। তাই জোটের স্বার্থে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।’’ আরসিপিআই-এর ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএমও। জিম্মি এবং মিলটন, দু’জনেরই বক্তব্য, ‘‘আমাদের এই জোট মানুষের জোট। দু’পক্ষের নিচুতলাই এই জোট গড়ে দিয়েছেন। তৃণমূলকে হারাতে আরসিপিআই যে ত্যাগ করল, তাকে হাঁসনের মানুষ আজীবন মনে রাখবেন।’’ আজ থেকেই কামালদের নিয়ে এলাকায় তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নামার আশা প্রকাশ করেছেন মিলটন। সেই ডাকে সাড়ে দিয়ে আরসিপিআই-এর যুব সংগঠনের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হিমেল ইব্রাহিমও এ দিন বলেছেন, ‘‘মানুষের লড়াই-ই আসন লড়াই। রাস্তায় মানুষের পাশে আমরা ছিলাম, এখনও থাকব। আর তার জন্য তৃণমূলকে হারানোই আমাদের এখন একমাত্র লক্ষ্যে। তার জন্য যা যা দরকার, তা অবশ্যই করব।’’

এ দিকে, হাঁসন পথ দেখালেও বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেসের মধ্যে এ দিনও দ্বন্দ্ব জারি থাকল রামপুরহাট নিয়ে। এ দিন নাম না করেই শরিক সিপিএম এবং জোটসঙ্গী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রামপুরহাট নিয়ে তোপ দাগেন সৈরানি। এ দিন সকালে রামপুরহাটে রক্তকরবী মঞ্চে দলের প্রার্থী মহম্মদ হান্নানের সমর্থনে কর্মিসভায় যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি। সৈরানি বলেন, ‘‘বামপন্থী রাজনীতি কোনও নেতার সম্পত্তি নয়। এখানে ফরওয়ার্ড ব্লক হঠাৎ আকাশ থেকে পড়েনি। এই মাটি শশাঙ্ক মণ্ডলের মাটি, এই মাটি ভক্তিভূষণ মণ্ডলের মাটি। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে কোনও বামপন্থী দলের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে না।’’ হাঁসনের পটবদলের পরেও রামপুরহাট নিয়ে অবস্থান বদলে নারাজ ফব জেলা সভাপতি জেলা সভাপতি রেবতী ভট্টাচার্যও। তাঁর হুঙ্কার, ‘‘রাজ্য থেকে এমন কোনও নির্দেশ আসেনি। রামপুরহাটে কার কত শক্তি, আমরা তা বুঝিয়ে দেব।’’

ফব নেতার বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা। তবে, তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য বামফ্রন্ট নেতৃত্বের লক্ষ্য যে কোনও মূল্যে তৃণমূলকে হারাতে হবে। তার জন্যই আমরা কংগ্রেসকে ওই দুই আসনে সমর্থন জানিয়েছি। আশা করি ফব নেতৃত্বেও বৃহত্তর লক্ষ্যের স্বার্থে আমাদের হাত আরও শক্ত করবেন।’’

assembly election 2016 west bengal alliance rcpi congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy