Advertisement
E-Paper

হার্মাদের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছ? মার বাহিনীর সামনেই

‘‘খুব সাংবাদিক হয়েছো, না?’’ জবাব দেওয়ার আগেই ঘাড়ে এসে পড়ল বিরাশি সিক্কার এক রদ্দা। তারপর বুকে-পেটে কিল-চড়-ঘুষি।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০২

‘‘খুব সাংবাদিক হয়েছো, না?’’

জবাব দেওয়ার আগেই ঘাড়ে এসে পড়ল বিরাশি সিক্কার এক রদ্দা। তারপর বুকে-পেটে কিল-চড়-ঘুষি।

শালবনি বিধানসভার আঁধার নয়ন হাইস্কুল। সেই বুথে তখন সবে এসে পৌঁছেছেন সিপিএমের প্রার্থী শ্যামসুন্দর পাণ্ডে। তাঁর গাড়ির পিছনে পিছনে এসেছি আমরা জনা কয়েক সাংবাদিকও। একটা গাড়িতে আমি ও চিত্র সাংবাদিক কৌশিক সাঁতরা। অন্যান্য গাড়িতে এবিপি আনন্দের সোমনাথ দাস, ২৪ ঘণ্টার পলাশ কোলে, নিউজ টাইমের দেবাশিস ঘোষ ও তারা নিউজের কুমারেশ রায়।

বুথ চত্বরে পৌঁছনো মাত্রই ভোটাররা ঘিরে ধরল শ্যামবাবুকে। উড়ে এল প্রশ্ন— ‘কী দাদা, ভোট কেমন দেখছেন?’ নিয়েলসেনের সমীক্ষা জোট সমর্থিত শ্যামবাবুকে জিতিয়ে রেখেছে। তবু জবাব দেওয়ার সময় তাঁর গলায় উদ্বেগ কান এড়াল না— ‘‘সব বুথে ছাপ্পা চলছে, জানেন? বেলা যত গড়াচ্ছে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে!’’

কথাটা শেষ হতে না-হতেই রে রে করে তেড়ে এল এক দল ছেলে। হাবেভাবে স্পষ্ট, তারা শাসক দলের লোক। শাসাতে শুরু করল শ্যামবাবুকে। কয়েক জন মারতেও গেল। বেগতিক দেখে ততক্ষণাৎ গাড়ি চেপে বেরিয়ে গেলেন শ্যামবাবু।

তৃণমূল কর্মীদের শাসানি শুরু হতেই আমরা সাংবাদিকরা জড়ো হয়ে গিয়েছিলাম। চিত্র সাংবাদিকরা ক্যামেরা বার করার তোড়জোড় করছিলেন। আর তাতেই তৃণমূলের ‘দাদা’দের রোষ আছড়ে পড়ল আমাদের উপর। একেবারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর চোখের সামনে!

প্রথমে কথা কাটাকাটি। তারপর একেবারে গায়ে হাত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক তৃণমূল কর্মী আমার শার্টের কলার ধরে শাসিয়ে উঠল, ‘‘হার্মাদ শ্যাম পাণ্ডের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছো? ঝামেলা পাকাচ্ছো?’’ জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার আগেই এলোপাথাড়ি কিল-চড়-লাথিতে রাস্তায় পড়ে গেলাম। কোমর হাঁটুতে এমন লাগল যে, সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারছিলাম না। এক সাংবাদিক বন্ধুই তখন আমায় গাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুললেন। সোমনাথ, পলাশ, দেবাশিস আর কুমারেশ তখনও মার খাচ্ছে। কুমারেশকে তো রাস্তায় ফেলে পেটাল ওরা। পরে ওকে হাসপাতালে ভর্তিও করাতে হয়।

কেন্দ্রীয় বাহিনী ঠিকঠাক কাজ করছে বলে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ দিন খবর পাচ্ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা এক্কেবারে উল্টো। সাংবাদিক পেটানোর গোটা পর্বে প্রথমে বুথ চত্বরে আর তার পর রাস্তার ঠিক উল্টো দিকে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন জওয়ানরা। চেঁচিয়ে ডাকলাম। ওঁরা নড়লেন না। ফোন করা হলো ডিএম জগদীশপ্রসাদ মিনা আর জেলা এসপি ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখরকে। ওঁরা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বা়ড়তি পুলিশ যখন এল, পঁয়তাল্লিশ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে। ততক্ষণে মারধর পর্ব শেষ, হামলাকারীরাও এলাকা ছেড়েছে। পুলিশের দলেও কেন্দ্রীয় জওয়ানদের দেখা মেলেনি।

এ দিন সকাল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঠুঁটো দশাই বারবার চোখে পড়েছে। যে বাহিনীর ভরসায় নির্বিঘ্ন, শান্তিপূর্ণ ভোটের আশ্বাস দিচ্ছিল কমিশন, বুথ চত্বরের বাইরে তাদের দেখাই মেলেনি। আমরা মার খাওয়ার পরেও আসেনি ফ্লাইং স্কোয়াড বা ক্যুইক রেসপন্স টিম। এসেছিলেন শুধু পর্যবেক্ষক দীপ্রভা লাকড়া, তা-ও আড়াই ঘণ্টা পরে, বিকেল তিনটে নাগাদ। তিনিও আমাদের মতো জখম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন না। শুধু বুথে এক বার ঘুরে চলে গেলেন।

রোদ যত চড়েছে, ততই সুর চড়েছে বিরোধীদের। কোথাও বাম-কংগ্রেস জোট সমর্থকেরা ফোন করে বলেছেন, ‘ছাপ্পা দিচ্ছে তৃণমূল’। পরক্ষণেই বিজেপি নেতার ফোন, ‘‘আমাদের এজেন্টকে বুথ থেকে বার করে দিয়েছে তৃণমূলের লোক।’’ কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। মেটাডহরে গিয়ে দেখেছি, লাইনে জনা কুড়ি ভোটার। আর বুথের সামনে তৃণমূল কর্মীদের জটলা। কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখেও দেখছে না। এখানেও শ্যামবাবুকে দেখে তেড়ে আসে তৃণমূলের ছেলেরা। রব ওঠে, ‘‘হার্মাদ এসেছে। মেরে সরিয়ে দাও।’’ গুয়াইদহ বুথেও এক পরিস্থিতি। গাড়ি থেকে নামতেই শাসানি। সেখানেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নীরব দর্শক!

এ দিন বারবার ফোন করা হয় শালবনির তৃণমূল প্রার্থী শ্রীকান্ত মাহাতোকে। ফোন বেজে গিয়েছে। চন্দ্রকোনা রোডে তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়েও শুনতে হয়েছে, ‘‘শ্রীকান্তদা এখানে নেই।’’ পথে দেখা হয়েছে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে। সাংবাদিকদের মার খাওয়ার কথা শুনে তাঁরা আরও চুপ মেরে গিয়েছেন।

assembly election 2016 Salboni brutally beaten reporters tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy