Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জনতার আবেগে সওয়ার হয়ে ভোট দেখলেন শমীক

মোবাইল অ্যাপসে তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ৩৯ ডিগ্রি। কষ্টকর হলেও মানুষ গলে যাওয়ার মতো উষ্ণতা নয়। তবুও গলে যাচ্ছেন সাদা হাফ শার্ট, ছাইরঙা ট্রাউজার পরিহিত এক খর্বকায় ব্যক্তি। জনতার উষ্ণতায়!

বসিরহাটের পথে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

বসিরহাটের পথে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

রোশনী মুখোপাধ্যায়
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৬
Share: Save:

মোবাইল অ্যাপসে তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ৩৯ ডিগ্রি। কষ্টকর হলেও মানুষ গলে যাওয়ার মতো উষ্ণতা নয়। তবুও গলে যাচ্ছেন সাদা হাফ শার্ট, ছাইরঙা ট্রাউজার পরিহিত এক খর্বকায় ব্যক্তি। জনতার উষ্ণতায়!

স্থান— বসিরহাট দক্ষিণ। কাল— ২৫ এপ্রিল, সোমবার ভোটের দিন। পাত্র— বর্তমান বিধায়ক এবং বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য।

সকাল সাড়ে ছ’টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গোটা তিরিশেক বুথ ঘোরার পর বসিরহাট রেজিস্ট্রি অফিসের মোড়ে প্রাতরাশ সারতে একটা ছোট দোকানে ঢুকলেন বিধায়ক প্রার্থী। বিনয়ে নুইয়ে পড়লেন দোকানের মালিক। শিশু শ্রমিককে ডেকে বললেন, ‘‘দেখ্, কে এসেছেন। নমস্কার জানা।’’ প্রার্থী ও তাঁর সঙ্গীদের বিনামূল্যে কচুরি-তরকারি খাইয়ে প্রায় ধন্য হলেন তিনি!

ফের বুথ পরিক্রমায় বেরোলেন শমীকবাবু। আধা শহর, গ্রামের গলি, তস্য গলি দিয়ে যত এগোচ্ছেন, ততই মহিলা, যুবক, বৃদ্ধ— এগিয়ে এসে হাত মিলিয়ে বলছেন, ‘‘কোনও চিন্তা নেই। আপনি জিতে গেছেন।’’ আসলে জনতার আবেগে ভেসে বুথে বুথে ঘুরছেন আপ্লুত শমীকবাবু।

সাবেক বাম দুর্গ বসিরহাটে বিজেপির এই জনপ্রিয়তা কেন? স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বসিরহাট দিয়ে গরু পাচার যত বেড়েছে, ততই ইছামতীতে জোয়ার এসেছে বিজেপির। তৃণমূল আমলে গরু পাচারকারীদের হাতেই রাজনৈতিক ক্ষমতার রাশ চলে গিয়েছে। এলাকায় অপরাধ বেড়েছে। সিপিএম গরু পাচারকারীদের শায়েস্তা করতে পারবে— আস্থা রাখতে না পেরে বিজেপি-কে বেছে‌ছেন মানুষ। শমীকবাবুর দাবি, তিনি বসিরহাট দক্ষিণে সর্বদলীয় প্রার্থী। তৃণমূল প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাসের দলের একাংশ তাঁর বিরোধী। বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী অমিত মজুমদারও ওই দুই দলের সব সমর্থকের ভোট পাচ্ছেন না। এই সব অংশের ভোট পদ্মফুলেই আসছে বলে দাবি শমীকবাবুর।

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নেতা নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘যে উপনির্বাচনে শমীকবাবু জিতেছিলেন, সেখানে ধর্মীয় মেরুকরণের ভূমিকা ছিল। কিন্তু এ বার তা অতটা নেই। ফলে জোট-প্রার্থী শমীকবাবুর সঙ্গে জোর পাল্লা দিচ্ছেন।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, বসিরহাট এবং টাকী পুরসভার একাংশে বিজেপি ভাল ভোট পেতে পারে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে অমিতবাবুর সমর্থন বেশি।

এ দিন বসিরহাট উত্তর ও দক্ষিণে ভোটে সামান্য অশান্তি পাকানোর চেষ্টাও বিফল হয়। বিরোধীদের অভিযোগ পেলেই তড়িৎগতিতে বাহিনী অকুস্থলে পৌঁছে জমায়েত ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দীপেন্দু ও বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী এটিএম আবদুল্লা (রনি)-র অভিযোগ, কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁদের কর্মীদের বিরুদ্ধেই বেশি আইন দেখিয়েছে। কোনও কোনও বুথে বাম-কংগ্রেস অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখিয়েছে বলেও অভিযোগ রনির। তা-ও দীপেন্দু এবং রনির বিশ্বাস, তাঁরা জিতবেনই।

গত বছর পুরভোটে বুথ দখলের ফলে স্থানীদের অনেকে ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা দেখে সাহস পেয়ে বলছেন, বসিরহাটের ভোট শান্তিপূর্ণই হত। পুরভোটে যারা বসিরহাটকে অশান্ত করেছিল, এ বারের লড়াই তাদের পক্ষে সহজ নয়। এতেই একটু প্রত্যাশা যোগ করে বসিরহাট উত্তরের জোট প্রার্থী সিপিএমের রফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আমিই জিতব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 shamik bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE