জীবনতলায় শান্তির বার্তায় মাইক হাতে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লা। ছবি: সামসুল হুদা।
ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর থেকে ক্যানিং মহকুমার বাসন্তীতে সব থেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকেরা— এমনই অভিযোগ উঠছে। এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল ও বাসন্তীর নব নির্বাচিত বিধায়ক গোবিন্দচন্দ্র নস্করের বাড়িতে এলাকায় শান্তির আবেদন করলেন প্রাক্তন সেচ মন্ত্রী তথা বাসন্তীর বিদায়ী বিধায়ক সুভাষ নস্কর।
মঙ্গলবার সকালে তিনি বালিগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে সাংসদ ও বিধায়কের সঙ্গে দেখা করেন। লিখিত চিঠি ও ১২ পাতার একটি তালিকা জমা দেন। সুভাষবাবুর দাবি, ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে বাসন্তীর কাঁঠালবেড়িয়ার প্রাক্তন প্রধান মোজাম্মেল সর্দার, ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অয়েদ আলি শেখ ও ইয়ুদ আলি শেখের বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট-সহ এ পর্যন্ত ৯৯ জনের বাড়িতে হামলা হয়েছে। ১১টি পার্টি অফিস দখল করে নেওয়া হয়েছে। ৬০টি দোকানে লুঠ, ভাঙচুর চলেছে। ১৫টি পুকুর ও মেছোভেড়ি লুঠ করা হয়েছে। ৫০০-৭০০ পরিবার ঘরছাড়া। ৩০-৩৫ জনকে বেধড়ক মারধর করায় তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সুভাষবাবুকে আশ্বস্ত করে সাংসদ ও বিধায়ক জানান, তাঁরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।
সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘যে ভাবে বিরোধী দলগুলির উপরে আক্রমণ হচ্ছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। তাই শেষমেশ এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনতে এলাকার সাংসদ-বিধায়কের দ্বারস্থ হয়েছি। যাতে এলাকার মানুষের শান্তি ফিরে আসে।’’
প্রতিমাদেবী বলেন, ‘‘আমার কাছে যে কেউ আসতে পারেন। সুভাষবাবুও এসেছিলেন। তিনি কিছু কথা বলেছেন। তবে নির্বাচনের পর থেকে যাতে এলাকায় শান্তি ঠিক থাকে, সে জন্য জেলার পুলিশ সুপার, ডিজি থেকে শুরু করে সমস্ত নেতা-কর্মীদের কাছে আবেদন করেছিলাম। পুলিশকেও বলেছিলাম টহলদারি বাড়ানো এবং অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। জনপ্রতিনিধি হিসাবে এলাকার মানুষের নিরাপত্তা দেখার দায়িত্ব আমার।’’ গোবিন্দবাবু বলেন, ‘‘আমিও চাই না, এলাকায় কোনও গণ্ডগোল হোক। আমিও সকলের কাছে আবেদন করছি, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যা হচ্ছে তা ঠিক নয়, নিন্দনীয়।’’
অন্য দিকে, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে মঙ্গলবার গ্রামে গ্রামে মাইকে প্রচার চালালেন ক্যানি পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লা। এ দিন তাম্বুলদহ ২ পঞ্চায়েত এলাকায় কর্মীদের নিয়ে একটি পথসভাও করেন তিনি। সেখানেও শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে। এরপরে মাইক নিয়ে রিকশায় ঘোরেন ওই এলাকায়।
ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে শাসক দলের বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। জীবনতলা, মঠেরদিঘি, তাম্বুলদহ ১ ও ২ পঞ্চায়েত, সারেঙ্গাবাদ, দুর্গাপুর, সোন্দালিয়া, চন্দনেশ্বর-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন অভিযোগ আসছে। কোথাও বিরোধীদের বাড়ি- ঘর ভাঙচুর, লুঠপাট করা হচ্ছে। কোথাও আবার বিরোধীদের দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মারধরের ঘটনাও উঠছে।
বিরোধীদের আরও অভিযোগ, প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। তার উপরে বিরোধী পরিবারগুলির কাছ থেকে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল, রেশন কার্ড, খাদ্য সুরক্ষা কার্ড কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবারও তাম্বুলদহ ১ পঞ্চায়েত এলাকার আদিবাসী পাড়ায় কয়েকজনের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এ দিন চন্দনেশ্বরে আব্দুর রহমানের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর, লুঠপাট করা হয় বলে অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।তারপরেই সওকতের এই পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় কোনও ভাবেই কোনও অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যারা এলাকাকে অশান্ত করতে চাইবে, দল তার দায়িত্ব নেবে না। প্রশাসনকে বলব, অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাম আমলে এলাকায় অনেক রক্ত ঝরেছে। আর নতুন করে রক্তপাত হতে দেওয়া হবে না। সকলকে এক সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে।’’ বসিরহাট মহকুমার নানা প্রান্তে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের ঘটনার প্রতিবাদে বাম-কংগ্রেস নেতারা মঙ্গলবার এসডিপিও শ্যামল সামন্তের কাছে স্মারকলিপি দেন। এসডিপিও জানান, গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ দিন হামলার বিভিন্ন নজির তুলে ধরেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মৃণাল চক্রবর্তী। জেলা কংগ্রেসের (গ্রামীণ) সভাপতি অমিত মজুমদারও নানা পরিসংখ্যান দেন। এলাকায় আরও পুলিশ চৌকি তৈরির দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে সর্বদল বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy