Advertisement
E-Paper

কোথায় বুথ, জানাইনি

বাগবিন্ধ্যায় ভোট করাতে যেতে হবে! গোটা সাতেক ভোট করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু, অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে ওই গ্রামে ভোটের দায়িত্ব পাওয়ার খবরে সত্যি বলছি, কিছুটা হলেও দমে গিয়েছিলাম।

সঞ্জয় ঘোষ (প্রিসাইডিং অফিসার)

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:১৮

বাগবিন্ধ্যায় ভোট করাতে যেতে হবে! গোটা সাতেক ভোট করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু, অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে ওই গ্রামে ভোটের দায়িত্ব পাওয়ার খবরে সত্যি বলছি, কিছুটা হলেও দমে গিয়েছিলাম।

ভোটের আগের দিন ঝালদায় ডিসিআরসি (যেখান থেকে ইভিএম ও ভোট গ্রহণের টুকিটাকি জিনিস বুঝে নিতে হয়) কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারি এ বারের ভোটকেন্দ্র ঝালদা ১ ব্লকের বাগবিন্ধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মুহূর্তে মনে পড়ে ছ’ বছর আগের ডিসেম্বর মাসের এক রাতের কথা। এই এলাকাতেই তো মাওবাদীদের হাতে সাত জন খুন হন!

কিছুটা দমে গেলেও কথাবার্তায় স্বাভাবিক তো থাকতেই হবে। কেননা আমিই যে প্রিসাইডিং অফিসার। শুনেছিলাম বেশ কিছু বুথে ভোটের দিন সকালে পোলিং পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তার আগের রাতে স্থানীয় কোনও সেক্টরে রাখা হবে। কিন্তু জিনিসপত্র গোছানোর আগেই খবর পেলাম বুথে যেতে হবে ভোটের আগের রাতেই। সঙ্গে থাকবে পুরো এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাতে ভরসা পেয়েছিলাম। তবু উদ্বেগটা পুরোপুরি কাটেনি।

তার মধ্যেই ইভিএম ইত্যাদি নিয়ে ভোটের আগের বিকেলে বুথে পৌঁছে গেলাম আমরা। গ্রামের এক প্রান্তে বাগবিন্ধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার চৌহদ্দি ছুঁয়ে শুরু হয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের রেঞ্জ। ঝালদা থেকে গ্রামে আসার পথে ঢালাই করা পাকা রাস্তা, আর দু’পাশের জঙ্গল দেখেছি। স্থানীয়দের থেকে জানলাম এই এলাকা বুনো হাতিদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। যখন তখন এসে হামলা চালায় হাতির দল। তবে প্রাথমিক স্কুলটায় পৌঁছে দেখলাম বিদ্যুৎ রয়েছে। এত গণ্ডগ্রামে বিদ্যুৎ পাব ভাবিনি।

আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হল। রাত নামল। ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাইরে তাকালেই গা ছমছম করে। রাতে শুনলাম, এই প্রাথমিক স্কুলের খুব কাছেই সেই হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। আমার অবস্থাটা তখন বুঝুন!

তবে মাওবাদী এলাকায় ভোট করার অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আমার দায়িত্ব পড়েছিল বলরামপুরের ঘাটবেড়ায়। ভোট গ্রহণের দিন ভোর সাড়ে চারটেয় বুথের দিকে হেঁটে রওনা দিয়েছিলাম। রাস্তায় কোথায় কি অপেক্ষা করে আছে, তা ভাবতে ভাবতেই দুরু দুরু বুকে টানা এক ঘণ্টা হেঁটে বুথে পৌঁছই। ২১ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান সে বার ভোটকেন্দ্র নিয়ে গিয়েছিল।

সে কথা মনে পড়তেই নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা, ঘাটবেড়ার চেয়ে এটা তো ঢেড় ভাল জায়গা। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়লাম। কেননা সকালেই উঠতে হবে। বাইরে তখন এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ভোটকেন্দ্র ঘিরে রেখেছে। শুয়ে তো পড়লাম, কিন্তু, ঘুম কি আসে! নানা চিন্তা ঘুরছে মাথায়। এ দিকে ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি!

একবার নিশুতি রাতে জওয়ানদের হাঁটাহাঁটির আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। আর ঘুম আসে না! বহু ক্ষণ কাটল। এ সবের ফাঁকে এক সময় দেখি ভোর হয়ে গিয়েছে। ভোটের দিনটা ভাল ভাবে কাটল। ভাল লেগেছিল বিভিন্ন দলের যাঁরা এজেন্ট ছিলেন তাঁদেরও। একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় সকলের মধ্যেই বন্ধুত্বপূর্ণ সদ্ভাব।

এই ফাঁকে বলে রাখি— ভোটের ডিউটি যে বাগবিন্ধ্যায় পড়েছে সেটা বাড়িতে স্ত্রীকে জানাইনি। বলেছিলাম, ভাল জায়গাতেই ডিউটি পড়েছে। বিকেলে ভোট শেষ করে ঝালদায় ফিরে তারপরে বাড়িতে জানাই যে বাগবিন্ধ্যায় ডিউটি করে ফিরলাম! কেননা ২০১০ সালের সেই ঘটনার পরে দীর্ঘ দিন জেলায় থাকার সুবাদে বাগবিন্ধ্যার নামটা তো আমার স্ত্রী-রও তো পরিচিত!

assembly election 2016 central forces
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy