Advertisement
E-Paper

জানা আছে পাল্টা কৌশল, শুভেন্দুর মুখে বাঁকা হাসি

গুড়-জলে তাঁর বিশ্বাস নেই। চড়াম চড়াম শব্দ নেই তাঁর অভিধানে। কারণ, তিনি অনুব্রত মণ্ডল নন।তিনি যা করেন, তা ঠান্ডা মাথায় করেন। পরিকল্পনা করে করেন। তাঁর নাম শুভেন্দু অধিকারী।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০৩:৫৪
বাইকে চেপে অজ-গ্রামে তদারকি। —নিজস্ব চিত্র।

বাইকে চেপে অজ-গ্রামে তদারকি। —নিজস্ব চিত্র।

গুড়-জলে তাঁর বিশ্বাস নেই। চড়াম চড়াম শব্দ নেই তাঁর অভিধানে। কারণ, তিনি অনুব্রত মণ্ডল নন।

তিনি যা করেন, তা ঠান্ডা মাথায় করেন। পরিকল্পনা করে করেন। তাঁর নাম শুভেন্দু অধিকারী।

রাজ্যে শেষ দফার ভোটে নন্দীগ্রাম জুড়ে সেই পরিকল্পনার ছবি। সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ১৫ পর্যন্ত সব কিছুই যেন প্লেটে করে সাজানো। পরপর ঘটনার সমাপতন। ঠিক যেমনটি তিনি চেয়েছেন, তেমনটিই।

হলদিয়ায় নিজের ভোট দিয়ে লঞ্চঘাটে পা রাখামাত্রই জল ফুঁড়ে এগিয়ে এসেছে লঞ্চ। শুধু তাঁর জন্য। লঞ্চ থেকে নামতেই সামনে গাড়ি। যে গ্রামে গাড়ি ঢুকবে না, সেখানে রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়াতেই মোটরবাইক হাজির। দুপুরে যে বাড়িতে লাঞ্চ সারার কথা ছিল, সেখানে পৌঁছনো মাত্র গরম গরম রুটি-তরকারি।

সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল যত হয়েছে, ততই পরিকল্পনা সফল হয়েছে। ততই মেজাজ চাঙ্গা হয়েছে শুভেন্দুর। ঠোঁটের কোণে ব্যঙ্গের হাসি নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন যতই পরিকল্পনা করুক না কেন, তাঁরও পাল্টা কৌশল জানা আছে।

কী সেই কৌশল? তিন দিন আগে থেকে এলাকার সবাইকে বলা হয়, সঙ্গে ভোটার কার্ড নিয়ে ঘুরতে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে সবাই যেন বাড়িতে ঢুকে পড়ে, রাস্তায় না থাকে। সেই সঙ্গে সমস্ত ক্লাব, দলীয় কার্যালয় যেন বন্ধ করে রাখা হয়! শুভেন্দুর কথায়, ‘‘রাস্তায় লোক না থাকলে কেন্দ্রীয় বাহিনী কাকে মারবে? কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে?’’ পরিকল্পনা করেই আবার ভোটের দিন ভোর ৪টে থেকে সবাইকে ‘সক্রিয়’ করা হয়েছে। কী সেই সক্রিয়তা? আবার সেই দ্ব্যর্থবোধক হাসি। বললেন, ‘‘সকাল সকাল মানুষকে বুথে আনতে হবে তো! তার জন্য। ভোর ৫টা থেকে মানুষ তাই লাইন করে ভোট দিয়ে গিয়েছেন।’’

বুথে বুথে ঢুকে যখন প্রিসাইডিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয়েছে সেই অফিসারেরা আপনার পূর্ব-পরিচিত। এও কি কৌশলের অঙ্গ? শুভেন্দুর উত্তর, ‘‘নো কমেন্টস।’’

সারা দিন তাবড় মিডিয়ার সামনে কখনও তিনি এমনই সচেতন। কখনও খোলামেলা। শুধু নন্দীগ্রাম তো নয়, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জুড়েই তাঁর দাপট, তাঁর শাসন। গোটা জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে ১৬টিই জিতলে তাঁর পায়ের শব্দ আরও ভারী হবে, গলার স্বর আরও গম্ভীর। সেটা তাঁর কাছেও চ্যালেঞ্জ। পারবেন? সচেতন শুভেন্দু বলেন, ‘‘সেটা বললে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়ে যাবে। তবে নীচটা আমার সাজানো। জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে আমার দখলে ২০০। ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে আমার ২৪টি। ৫টা পুরসভার মধ্যে ৫টাই আমার।’’

আস্তিনের তলা থেকে মাঝেমধ্যেই উঁকি দিয়েছে এই ‘আত্মবিশ্বাস’। সকাল থেকেই বিড়বিড় করছিলেন, ‘‘৯০ শতাংশ ভোট চাই, আরও মানুষকে দিয়ে ভোট দেওয়াতে হবে।’’ বিকেলে নন্দীগ্রাম ছাড়ার ঠিক আগে বললেন, ‘‘৯০ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানার আগে আমি জেনে গিয়েছি। ভোট করানোর বিষয়ে আমি সূর্য মিশ্রদের চেয়ে এক হাজার মাইল এগিয়ে।’’

মিডিয়ার কাছ থেকে বারবার প্রশ্ন ছিটকে এসেছে, নন্দীগ্রামের ২৭১টি বুথের ২৪০টিতেই এজেন্ট দিতে পারেনি বিরোধী দল। এটা কেন? সপাটে উত্তর এসেছে, ‘‘আমি কি ওদের এজেন্ট জোগান দেব নাকি! সিপিএম এখানে যা করে গিয়েছে, তা মানুষ ভুলতে পারেনি। আমিও পারিনি।’’ বারবার তুলে ধরেছেন ভূমি আন্দোলনের শহিদদের কথা। আন্দোলনে তৃণমূলের দাপুটে নেতা, পরে নিহত নিশিকান্ত মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছেন। বেরিয়ে বলেছেন, ‘‘অতীত যে ভুলে যায়, তার ভবিষ্যতও ভাল হয় না।’’

নন্দীগ্রামের একটা বড় অংশ তাঁকেও ভোলেনি। মগজাস্ত্র চালিয়ে ২০০৬ সাল থেকে যে ভাবে একটু একটু করে সিপিএমের হাত থেকে নন্দীগ্রামের দখল কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি, সে কথা মনে রেখেছে মানুষ। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম সঙ্গী আবু তাহেরকে সঙ্গে নিয়ে দুধ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে সেই সকাল থেকে টো টো করে গড়চক্রবেড়িয়া, সোনাচূড়া, কেন্দেমারি, আমগেছিয়ার বুথ থেকে বুথে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছেন। মানুষকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। উসমানচকে শুভেন্দুকে সামনে পেয়ে দুই বৃদ্ধ মণি সাহা ও শেখ আজিমুদ্দিন আর্জি জানালেন, ‘‘আট মাস ধরে বার্ধক্যভাতা পাইনি বাবা। তুমি কিছু একটা কর।’’ আশ্বাস পেয়ে বললেন, ‘‘ও আমাদের নয়নের মণি। ওর জন্মলগ্নটা ভাল ছিল।’’

এই বৃদ্ধদের সঙ্গে হয়তো সহমত হবেন না সেই পুলিশ অফিসার। কেন্দ্রীয় বাহিনী এক তৃণমূল সমর্থককে মারধর করলে যে অফিসারকে এ দিনই শুভেন্দু ফোনে বলছিলেন, ‘‘ছ’টার পরে অতিথিরা ( কেন্দ্রীয় বাহিনী) বাক্স গুছিয়ে তামিলনাড়ু চলে যাবে। এখানে বসে থানা আপনাকেই সামলাতে হবে। সেটা খেয়াল থাকে যেন!’’

Suvendu Adhikari assembly election 2016 TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy