Advertisement
E-Paper

সিন্ডিকেটে ‘নজর’ ছিল, তাই কি কম জয়ের ব্যবধান

সিন্ডিকেট বাহিনী যে জয়ী তিন তৃণমূল প্রার্থীর মূল ভরসা, সে অভিযোগ উঠেছে বারবার। যদিও সব্যসাচীবাবুর মতো প্রকাশ্যে সিন্ডিকেটের হয়ে সওয়াল করতে দেখা যায়নি বাকি দু’জনকে। বিধাননগরে সুজিত বসু জিতেছেন ৬৯৯৮ এবং পূর্ণেন্দু বসু ৬৮৪৯ ভোটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০০:৫৫
জয়ের পরে পূর্ণেন্দু বসু, সব্যসাচী দত্ত এবং সুজিত বসু। ছবি: শৌভিক দে।

জয়ের পরে পূর্ণেন্দু বসু, সব্যসাচী দত্ত এবং সুজিত বসু। ছবি: শৌভিক দে।

সিন্ডিকেটের উপরেই নির্ভর করে ভোটের বৈতরণী পার হতে চলেছেন। এমনটা খোলাখুলি বলতে দ্বিধা করেননি তিনি। এমনকী ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘‘২০ হাজারের নীচে জয়ের ব্যবধান হলে বুঝতে হবে হেরে গেছি।’’ তাঁকে হারানো মুশকিল নয়, অসম্ভব।

এতটাই তাঁর প্রতাপ। তিনিই জয়ী হয়েছেন। তবে ৯০০০ মতো ভোটে। তাঁর আগের দাবি অনুযায়ী যা হারের সামিল। তিনি অর্থাৎ, রাজারহাট-নিউ টাউনে তৃণমূলের প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত।

তবে একা সব্যসাচী নন, রাজারহাট-গোপালপুরের প্রার্থী পূর্ণেন্দু বসু এবং বিধাননগরের প্রার্থী সুজিত বসুরও জয়ের ব্যবধান ২০১১-র বিধানসভার তুলনায় অনেক কমেছে।

সিন্ডিকেট বাহিনী যে জয়ী তিন তৃণমূল প্রার্থীর মূল ভরসা, সে অভিযোগ উঠেছে বারবার। যদিও সব্যসাচীবাবুর মতো প্রকাশ্যে সিন্ডিকেটের হয়ে সওয়াল করতে দেখা যায়নি বাকি দু’জনকে। বিধাননগরে সুজিত বসু জিতেছেন ৬৯৯৮ এবং পূর্ণেন্দু বসু ৬৮৪৯ ভোটে। ২০১১-র বিধানসভা ভোটের তুলনায় দু’জনের ভোটের ব্যবধান কমেছে যথাক্রমে ২৭ হাজার এবং ৩৫ হাজারের বেশি। সুজিতবাবুর বিরুদ্ধে গত পুরনিগমে সন্ত্রাস, সাধারণ ভোটার ও সাংবাদিকদের উপরে হামলায় মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ বারের ভোটে মাত্র দু’টি ওয়ার্ড ছাড়া সেই বিধাননগরেই সর্বত্র তিনি জোট প্রার্থীর তুলনায় পিছিয়ে। রাজনৈতিক মহলে অনেকের মত, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপটে এ বার তেমন ‘ভোট অপারেশন’ করতে পারেনি সিন্ডিকেট বাহিনী। সব্যসাচীবাবু, সুজিতবাবু এবং পূর্ণেন্দুবাবুদের জয়ের ব্যবধান তাই এত কম।

যদিও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি সব্যসাচী। তাঁর দাবি, সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত মানুষের ভোটেই তিনি জিতেছেন। প্রশাসনের একাংশ যে ভাবে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করেছিল, তাতে জয়ের ব্যবধান কিছুটা কমেছে।

নোটা এবং বিজেপি-র ভোট বৃদ্ধিও এই তিন জনের জয়ের ব্যবধান কমার কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে মত অনেকের। তিন বিধানসভা মিলিয়ে নোটাতে ভোট পড়েছে ৯ হাজারেরও বেশি এবং বিজেপি পেয়েছে ৫৯ হাজারেরও বেশি ভোট। ভোটের এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, গণনা চলাকালীন টানাপড়েন কতটা হয়েছে।

বিধাননগর সরকারি কলেজে ছিল গণনা কেন্দ্র। ১৪টি টেবিলে প্রায় ২০ রাউন্ড করে গণনা হয়েছে। কলেজের বাইরে দু’দিকে সুজিত বসু এবং পূর্ণেন্দু-সব্যসাচীর সমর্থকেরা ক্যাম্প করেছিলেন। সেখানে সকাল থেকে প্রায় ৫ হাজার লোক ভিড় করেছিলেন। প্রথম কয়েক রাউন্ডে সব্যসাচী-পূর্ণেন্দুবাবুরা পিছিয়ে ছিলেন। তখনও ঢাক বেজেছে, সমর্থকেরা একে অপরকে আবির মাখিয়ে উল্লাসেও মেতেছিলেন। তবে টেনশনও ছিল তেমনই।

সকাল থেকে দেখা মেলেনি তৃণমূল নেতাদের। বরং সাতসকালেই সিপিএম-কংগ্রেসের ক্যাম্পে প্রার্থী অরুণাভ ঘোষ, নেপালদেব ভট্টাচার্যের পাশাপাশি রমলা চক্রবর্তী, ইলা নন্দী-সহ বিভিন্ন জেলা ও আঞ্চলিক নেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা যত গড়িয়েছে, ততই তৃণমূলের দু’টি ক্যাম্প থেকে বাজনার বোল আর বাজির আওয়াজ সিপিএমের ক্যাম্পের হতাশা বাড়াচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়েছে তারাও। প্রথম দশ রাউন্ডে এগিয়ে ছিলেন সুজিত বসু। ব্যবধান প্রায় ১২ হাজার। কিন্তু তা দমদম পার্ক থেকে দক্ষিণদাঁড়ি অঞ্চলে। সল্টলেকে ঢুকতেই কমতে থাকে ব্যবধান। টেনশনে এক সময়ে প্রায় থমকে যায় বাজনা এবং বাজির দাপট। সুজিতবাবুর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে মিডিয়ার একাংশ গত পুরনিগমের ভোটের ঘটনায় অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু তিনি যে তাতে জড়িত ছিলেন না, এ দিন প্রমাণ মিলল। যদিও যে সল্টলেকে হিংসার ঘটনায় মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, সেখানে অধিকাংশ জায়গায় সুজিতবাবুর বিরুদ্ধেই ভোট পড়েছে।

টানা অনেক ক্ষণ পিছিয়ে ছিলেন পূর্ণেন্দুবাবুও। জয়ের পরে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ চপেটাঘাত করে প্রমাণ করে দিয়েছেন জোট আসলে ঘোঁট।’’ তবে বিধাননগরে পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থী অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের জন্যই জিতেছে তৃণমূল। বুঝলাম দূর্নীতি আর কোনও সামাজিক ইস্যু হয় না।’’

assembly election 2016 TMC Syndicate Candidates
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy