Advertisement
E-Paper

পুবে নারদ আর পশ্চিমে শিক্ষা, কাঁটা বদলে যায়

শিল্প আর শিক্ষার বেহাল দশা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে এগোচ্ছিল জোটের মিছিল। জেমস লং সরণির বাইপাস ধরে। সামনে বিমান বসু, সঙ্গে জোটের অন্য নেতারা। কিন্তু বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিমের সীমারেখা রায়বাহাদুর রোড পেরোতেই বদলে গেল আওয়াজ।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২৭

শিল্প আর শিক্ষার বেহাল দশা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে এগোচ্ছিল জোটের মিছিল। জেমস লং সরণির বাইপাস ধরে। সামনে বিমান বসু, সঙ্গে জোটের অন্য নেতারা। কিন্তু বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিমের সীমারেখা রায়বাহাদুর রোড পেরোতেই বদলে গেল আওয়াজ। আবার নারদ বেহালা চৌরাস্তায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রের প্রচারগাড়ি। সেখানে দেখানো হচ্ছে নারদের টাকা দেওয়া-নেওয়ার ছবি। গাড়িচালক ডায়মন্ড হারবার রোড পেরোনোর জন্য এগোতেই দৌড়ে এলেন এক জন, ‘‘কমরেড ও দিকে নারদ খাবে না। স্কুল-কলেজে গণ্ডগোল খাবে!’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই কিচেন ক্যাবিনেট দুই চট্টোপাধ্যায়— পার্থ এবং শোভনকে বিপাকে ফেলতে জোট নেতারা এই দু’রকম স্ট্র্যাটেজি নিয়েছেন। বেহালা পূর্বের প্রার্থী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের এলাকা ছেয়ে ফেলা হচ্ছে নারদ-পোস্টারে। আর বেহালা পশ্চিমের প্রার্থী প্রাক্তন শিল্প ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে দেওয়ালে লেখা হচ্ছে, ‘‘বেহালার পার্থ, শিল্পে ব্যর্থ, বেহালার পার্থ শিক্ষায় ব্যর্থ।’’

কিন্তু তাতে কি ধাক্কা দেওয়া যাবে দুই হেভিওয়েটকে? স্থানীয় ক্লাবগুলিকে দু’হাত উপুড় করে দিয়েছেন পার্থ এবং শোভন। সে রকম এক ক্লাব কর্তা হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘শুধু ক্লাব সদস্য আর তাদের পরিবার ভোট দিলেই ওরা জিতে যাবেন।’’ বেহালার সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক কুমকুম চক্রবর্তী এবং প্রাক্তন কাউন্সিলর কিশোর ঘোষও বলছেন, ‘‘যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে, সেটা টপকাতে মানুষের জোট দরকার। যা হাওয়া, দেখুন না কী হয়!’’ কিন্তু বেহালায় সিপিএমের সংগঠন থাকা সত্ত্বেও অরাজনৈতিক প্রার্থী কেন? এক সময়ের দুই ডাকাবুকো নেতা-নেত্রীরই উত্তর, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত।’’

মানুষ আর হাওয়াই তবে ভরসা! এক সময়ের বামদুর্গ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে তৃণমূলের সঙ্গে। আঠেরো জন কাউন্সিলরের ষোলো জনই দিদির। গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ষাট হাজারের ব্যবধানে জিতেছিলেন পার্থ। আর শোভন জিতেছিলেন পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছিতে। তা সত্ত্বেও দু’জনেই কিছুটা চিন্তিত। চিন্তার প্রধান কারণ নারদ। সেই সঙ্গে একে অন্যকে টপকে যাওয়ার অলিখিত লড়াইও। শকুন্তলা পার্ক অঞ্চলে পদযাত্রার ফাঁকে পার্থবাবু বলছিলেন, ‘‘জেতা নিয়ে ভাবছি না। গত বারের মার্জিনটা টপকাতে পারব কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’’ আর দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে সভা করার ফাঁকে শোভনের মন্তব্য, ‘‘নারদ নারদ করে লাভ নেই। ও সব চাপা পড়ে যাবে উন্নয়নে। আমার এলাকার ছ’টি ওয়ার্ডের জল, রাস্তা, আলোর জন্য কত খরচ করেছি জানেন? ৪৫০ কোটি। তার মধ্যে জোকার তিনটে ওয়ার্ডের জন্য ৮০ কোটি।’’ বোঝাই যায় মেয়র হওয়ার সুবিধাটা তাঁর বিধায়ক এলাকার জন্য পুরোপুরি নিয়েছেন শোভন। এবং কলকাতা পুরসভায় নতুন সংযুক্ত এলাকা জোকার তিনটে ওয়ার্ডই শোভনের তুরুপের তাস।

জোকা-র ভোট নিয়ে ভেবে অস্থির অম্বিকেশও। ভোট লুঠের আশঙ্কায় ‘আমরা আক্রান্ত’-র লোকজনকে নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। কাস্তে-হাতুড়ি-তারা বা হাত নয়, জোট প্রার্থীর প্রতীক এখানে ‘পেনের নিব’। সেটা চেনাতেই যাদবপুরের শিক্ষকের কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। কারণ কয়েক দিন আগে পাওয়া প্রতীক এখনও বহু দেওয়ালে লেখা যায়নি। শাসক দলের ধারণা, এটা তাদের প্লাস পয়েন্ট। কারণ বুথে ঢুকে চেনা প্রতীক না পেলে সমস্যায় পড়বেন বহু ভোটার।

তাও তো প্রতিবাদী অম্বিকেশকে চেনেন অনেকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যাঁকে প্রার্থী করেছে জোট, সেই কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায় একেবারে নতুন মুখ। বাম কর্মীরাও অনেকে তাঁকে চিনছেন পদযাত্রায় নেমে। ফলে পার্থর কিছুটা সুবিধাই হয়েছে। আত্মতুষ্ট অবশ্য নন। গাড়িতে একগাদা ফাইল নিয়ে ঘুরছেন। কী করেছেন, ক’টা বিশ্ববিদ্যালয়, ক’টা মাদ্রাসা, কত বিনিয়োগ এনেছেন তাঁর ফিরিস্তি দিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘বেহালার বিধায়ক হিসেবে ভোট চাইছি। বিদ্যাসাগর হাসপাতাল থেকে বেহালা বা সরসুনা কলেজে কী করেছি সবাই দেখেছে। ঘুরে দেখুন বেহালা বদলে গেছে।’’ স্থানীয় কেউ কেউ অবশ্য অনুযোগের সুরে বলছেন, ‘‘ওরা তো শুধু বিধায়ক নন। ভবানীপুরের পর সবথেকে নজরকাড়া জায়গা বেহালা। একটু বেশি তো প্রত্যাশা করব। জল বা রাস্তার আরও উন্নতি দরকার ছিল।’’

ফলে জয় নয়, মার্জিনই চিন্তা। মার্জিন কমলে সেটাই হবে হার। অন্তত কর্মী-সমর্থকরা সেটাই বলছেন।

assembly election 2016 Sovan Chattopadhyay Partha Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy