Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জোটের মুখ রাখলেন ‘টিমম্যান’ মান্নান

তিনি জিতেছেন। একই সঙ্গে হেরেওছেন। তৃণমূলের ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেসকে জোটবদ্ধ করতে যে কয়েক জন গলা ফাটিয়েছেন ফাটাতে শুরু করেছিলেন তাঁদের অন্যতম প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান।

আমিই জিতলাম। ফল জানার পরে আব্দুল মান্নান।—নিজস্ব চিত্র।

আমিই জিতলাম। ফল জানার পরে আব্দুল মান্নান।—নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:৫৫
Share: Save:

তিনি জিতেছেন। একই সঙ্গে হেরেওছেন।

তৃণমূলের ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেসকে জোটবদ্ধ করতে যে কয়েক জন গলা ফাটিয়েছেন ফাটাতে শুরু করেছিলেন তাঁদের অন্যতম প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। আশাবাদী ছিলেন, ভোটে জোটের ফল ভাল হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাজারো চেষ্টা সত্ত্বেও চাঁপদানি কেন্দ্রে বামেদের সঙ্গী করে বাজিমাত করেছেন তিনি।

শ্রীরামপুর কলেজে গণনার শুরু থেকেই এগিয়ে যান মান্নান। মাঝে একবার সামান্য পিছিয়ে গেলেও ফের এগিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত এগিয়েই লড়াই শেষ করেন তিনি। তৃণমূলের মুজফফর খানকে হারিয়ে জয়ী হন। মান্নান পেয়েছেন ৮১,৩১৯টি ভোট। মুজফফর খানের ঝুলিতে ৭৪,০৪৮টি ভোট। বিজেপি পেয়েছে ২৩,৩৮৩টি ভোট। ২০০৬ সালে এই চাঁপদানিতেই সিপিএমের কাছে হারেন মান্নান। ১০ বছর পরে বিধায়ক হিসেবেই ফিরে এলেন তিনি।

সকাল থেকে নিজেকে ঘরবন্দিই রেখেছিলেন মান্নান। জয়ের খবর পেয়ে দুপুরে দলবল নিয়ে শংসাপত্র নিতে আসেন। তবে জিতেও উৎসাহে ভাসতে দেখা যায়নি তাঁকে। শুধু দু’আঙু‌লে ভিকট্রি সাইন দেখিয়ে আর মুখে ‘ট্রেডমার্ক’ হাসি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রকৃত ‘টিমম্যানের’ মতোই মান্নান বলেন, ‘‘বিধায়ক আগেও একাধিকবার হয়েছি। নিজের জয়ের পাশাপাশি জোট সফল হবে বলে ভেবেছিলাম। তা না হওয়ায় শুধু নিজের জয়ে ততটা আনন্দিত হতে পারছি না।’’ ভদ্রকালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন অঙ্কের শিক্ষক যোগ করেন, ‘‘ভোটে এক দল‌ জেতে, এক দল হারে। সেটা মেনে নিতে হয়। কিন্তু যে কারণে আমরা জোট করেছিলাম, সেই কারণ কিন্তু এখনও রয়েছে। মানুষের ভোটে জিতে শাসক দল যদি সন্ত্রাস করে, তবে আন্দোলন তো করতেই হবে।’’ বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রসঙ্গও উঠে আসে তাঁর কথায়। বলেন, ‘‘যে সব মানুষের টাকা লুঠ হয়েছে, সেই টাকা ফেরতের জন্যও লড়াই জারি থাকবে।’’ ভবিষ্যতেও বামেদের হাত ধরেই চলার পক্ষে সওয়াল করেন তি‌নি। মান্নান জয়ের দিকে যত এগিয়েছেন‌, ততই জল্পনা ছড়িয়েছে, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হবেন তিনিই। মান্নান নিজে অবশ্য সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছেন।

রাজ্যে জোট না জিতলেও মান্নান যে তৃণমূলের উৎসবের দুধের গামলায় চোনা ফেলে দিয়েছে‌ন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছিলেন মান্নান, সর্বোপরি চিটফাণ্ড কাণ্ডে তাঁর ভূমিকায় কুপিত হন মমতা। এতটাই, যে দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এই কেন্দ্রে মুজফফরকে জেতাতে দলের নেতাকর্মীদের ‘অল আউট’ ঝাপাতে হবে। চাঁপদানিতে সভা করতে এসে মান্নানকে তুলোধনা করেন তৃণমূল নেত্রী। স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও মান্নানকে হারাতে মরিয়া ছিলেন। মহকুমার বাকি চারটি আসন ধরে রাখতে পারলেও মান্নানের কাছে কার্যত হারতে হয়েছে তৃণমূল সাংসদকেও। হাই প্রোফাই‌ল এই কেন্দ্রে সসম্মানে উৎরে গিয়েছেন চাঁপদানির ‘মাস্টারমশাই’।

চাঁপদানির হারে কেমন মনোভাব তৃণমূলের অন্দরে?

২০১১ সালে ৩৬ হাজারেরও বেশি ভোটে তৃণমূল এখানে জিতেছিল। গত পাঁচ বছরে নানা কারণে তৃণমূলের জনভিত্তি অনেকটাই কমে যায়। নির্বাচনের কাজে এলাকার প্রয়াত সাংসদ আকবর আলি খোন্দকারের অনুগামীরা কল্কে পাননি বলেও দলের অন্দরে অভিযোগ। আকবরের স্মৃতিতে আয়োজিত কোনও অনুষ্ঠানের ছায়া মাড়াননি সাংসদ-বিধায়ক। তাঁদের ভূমিকায় আকবর ঘনিষ্ঠরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

আর তাই ফ? ঘোষণার পর প্রবীণ এক তৃণমূল নেতার স্বগতোক্তি, ‘‘এখন হয়তো সকলের অলক্ষ্যে হাসছে‌ন আকবর!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Abdul Mannan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE