Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
তৃণমূলের হাতছাড়া দুই কেন্দ্র

দ্বন্দ্বে ক্ষুব্ধ উজ্জ্বল

কোনও রাউন্ডে এগোচ্ছেন, তো পরের রাউন্ডেই পিছিয়ে পড়েছেন। উত্তেজনায় হাত কামড়ানোর মতো অবস্থা দু’পক্ষেরই। ও দিকে রাজ্যের নানা প্রান্তে একের পর এক আসন ঝুলিতে ভরছে তৃণমূল। উৎকণ্ঠা যেন তত বাড়ছিল জামালপুরের তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল প্রামাণিকের। শেষমেশ ১৪২৩ ভোটে হেরেই গেলেন গত বারের জয়ী এই প্রার্থী। হারের পরে দলের একটি গোষ্ঠীর ঘাড়েই দোষ চাপালেন তিনি।

উজ্জ্বল প্রামাণিক।

উজ্জ্বল প্রামাণিক।

সৌমেন দত্ত
জামালপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:৩২
Share: Save:

কোনও রাউন্ডে এগোচ্ছেন, তো পরের রাউন্ডেই পিছিয়ে পড়েছেন। উত্তেজনায় হাত কামড়ানোর মতো অবস্থা দু’পক্ষেরই। ও দিকে রাজ্যের নানা প্রান্তে একের পর এক আসন ঝুলিতে ভরছে তৃণমূল। উৎকণ্ঠা যেন তত বাড়ছিল জামালপুরের তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল প্রামাণিকের। শেষমেশ ১৪২৩ ভোটে হেরেই গেলেন গত বারের জয়ী এই প্রার্থী। হারের পরে দলের একটি গোষ্ঠীর ঘাড়েই দোষ চাপালেন তিনি।

প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই জামালপুরের আসনটি নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমা হচ্ছিল তৃণমূলের অন্দরে। তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তৃণমূল সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর ধরে উজ্জ্বলবাবু ও দলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মেহেমুদ খানের মধ্যে মনোমালিন্য চলেছে। সময়ের সঙ্গে তা যেন বেড়েছে। সেই ফাটল আটকানোর কম চেষ্টা করেননি দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে যে লাভ হয়নি, ফলেই তার প্রমাণ বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ।

শনিবার উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘কেন হেরেছি, কী জন্য হেরেছি— তা সবার কাছে পরিষ্কার। সবাই জানেন, আমাকে কে বা কারা হারিয়ে দিয়েছে।’’ এর পরেই ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি তো দলের এক জন সাধারণ প্রার্থী মাত্র। আমার ফোন থেকে দলের জেলা পর্যবেক্ষক পর্যন্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা-ও মানেননি। তার মানে কোথাও নিশ্চয় খুঁটি বেধে রেখে এসেছিলেন, সেই জন্য দলের নির্দেশ উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পেরেছেন।” দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের পর্যবেক্ষক হওয়ার পরে কলকাতার একটি ক্লাবে বর্ধমান জেলার নেতাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন অরূপ বিশ্বাস। সেখানে জামালপুরের দুই নেতার মধ্যে কার্যত বাকবিতণ্ডার ঝড় ওঠে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোটের আগে কালীঘাটে শনিবাসরীয় বৈঠকেও দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধমক খান উজ্জ্বলবাবু। পরে তিনি বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, এসএমএস করে, ফোন করে দলের বিভিন্ন সভায় আসার জন্য অনুরোধ করা সত্ত্বেও ‘উনি’ আসেন না। উজ্জ্বলবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, প্রচার শেষের কয়েক দিন আগে মেহেমুদ খান দলের ‘চাপে’ প্রচারে নামলেও, তাঁর অনুগামীরা ভোটের দিন সিপিএমের হয়ে কাজ করেছেন। উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ, “আমাদের সঙ্গে মিটিং-মিছিল করেছেন, অথচ ভোটের দিন সিপিএমের হয়ে কাজ করেছেন, এমনও হয়েছে।”

ভোটের কয়েক দিন আগে জামালপুরে নতুন একটি ভবনে বসে মেহেমুদ খান অবশ্য দাবি করেছিলেন, “উনি (উজ্জ্বলবাবু) গত পাঁচ বছর ধরে আমাদের অবহেলা করেছেন। একটি গোষ্ঠী তৈরি করে আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। সে জন্য আমরা দলের বিভিন্ন মহলে প্রার্থী বদলের জন্য বলেছিলাম।’’ জামালপুরে সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশও দাবি করছেন, গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে শাসকদলের হয়ে ‘ভোট করাতে’ ও বিরোধীদের দমিয়ে রাখতে যাদের মাঠে নামতে দেখা গিয়েছিল, এ বার তাদের একটা বড় অংশ চুপ করে বসেছিল। কী বলছেন মেহেমুদ খান? বেশ কয়েক বার চেষ্টার পরে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, “কেন হারলাম তার ব্যাখ্যা পরে দেব।” পরে অবশ্য তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।

জামালপুরে জয়ী বাম প্রার্থী, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের সমর হাজরা বলেন, “১৯৯১ থেকে এখানে জিতছি। গত বার হেরে গেলেও মানুষের পাশ থেকে সরে যাইনি। সে জন্য মানুষ আমার উপরে ফের বিশ্বাস রেখেছেন।” উজ্জ্বলবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাকে হারিয়ে দেওয়া হলেও জামালপুরের মানুষের কাছ থেকে সরে যাব না। ফল প্রকাশের পরেও আমি জামালপুরে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE