ফুটবল খেলা দেখতে মাঠে তৃণমূল প্রার্থী আশিস চক্রবর্তী।
গণনার দিন যত এগোচ্ছে, জাঁকিয়ে বসছে টেনশন। রক্তচাপ ওঠানামা করছে। অপেক্ষা বাঁধ মানছে না গড়বেতা কেন্দ্রের তিন প্রার্থীর। তৃণমূলের আশিস চক্রবর্তী, সিপিএমের সরফরাজ খান আর বিজেপির প্রদীপ লোধা— তিন জনই চাপ কাটাতে দিনের বেশিরভাগ সময়টা দলের কর্মীদের সঙ্গে কাটাচ্ছেন। চলছে দেদার আড্ডা। তারই ফাঁকে ভোটের হিসেব কষা। বুথ কর্মীদের সঙ্গে দেখা হলেই খোঁজ নিচ্ছেন, ‘কী রে, কত লিড আসবে!’
সকাল থেকে প্রচার, এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ছুটে বেড়ানো, রাত করে বাড়ি ফেরা— ভোটের আগের চাপ এখন আর নেই। তবে অন্য চাপ এসে হাজির। ভোটের ফলাফল কী হবে! ভোট মিটে গিয়েছে ১১ এপ্রিল। ফলপ্রকাশ ১৯ মে। পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট নিয়ে টেনশন থাকাটাই স্বাভাবিক। যদিও শাসক-বিরোধী কোনও দলের প্রার্থীই প্রকাশ্যে টেনশনের কথা মানছেন না। বলছেন, ‘দূর, টেনশনের কী আছে। মানুষ যাঁকে সমর্থন করবেন, সেই জিতবে।’
ফুরসত পেয়েই কাশ্মীর সফর বিজেপি প্রার্থীর।
বাম-আমলে গড়বেতা ছিল ‘লালদুর্গ’। এখান থেকেই জিততেন প্রাক্তন মন্ত্রী সিপিএমের সুশান্ত ঘোষ। ২০১১-র ঝড়েও জিতেছিলেন তিনি। এখন অবশ্য এই এলাকা ‘সবুজগড়’। তৃণমূল শিবিরের অঙ্ক বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার যে ক’টি আসনে দলের জেতা শুধু সময়ের অপেক্ষা, তার মধ্যে গড়বেতা অন্যতম। তৃণমূল প্রার্থী আশিসবাবুরও বক্তব্য, “চাপের কিছু নেই। গড়বেতায় কী হবে, তা বিধানসভা এলাকার সকলে জেনে গিয়েছে। কিন্তু সময়টার জন্য অপেক্ষা আছে।’’ মুখে এ কথা বলছেন বটে, তবে সময় পেলেই বুথ ভিত্তিক হিসেব-নিকেশ জানছেন তৃণমূল প্রার্থী। জানার চেষ্টা করছেন, কোন বুথ থেকে কত লিড আসতে পারে। বুথকর্মীরা বড় লিডের কথা জানাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে হিসেব কতটা মিলবে তা নিয়ে টেনশন থাকছেই। ভোটের প্রচারের সময় একের পর এক মন্দির-মসজিদে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। সেই সময় শুভকামনা করে অনেকে হাতে ডোর বেঁধে দিয়েছিল। গরমে র্যাশের আশঙ্কায় সেগুলো অবশ্য এখন খুলে রেখেছেন আশিসবাবু। তবে পুরনো অভ্যাসমতো খেলার মাঠে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।
দলীয় কার্যালয়ে হাল্কা মেজাজে সরফরাজ খান।
একে তীব্র গরম, তায় ভোটের টেনশন। বিজেপি প্রার্থী প্রদীপ লোধা তাই ভোট মিটতেই গিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীর। নিছকই বেড়াতে? প্রদীপবাবুর জবাব, ‘‘পুজো দেওয়ার ব্যাপার ছিল। তাই ওখানে গিয়েছিলাম।” এখন কি তাহলে ছুটি? হাসছেন বিজেপি প্রার্থী। তাঁর কথায়, “ভোট হয়ে গিয়েছে। গণনা তো বাকি আছে। কাউন্টিং এজেন্ট ঠিক করতে হয়। সেই এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তাই ছুটি পাওয়ার সুযোগ নেই!”
সিপিএম প্রার্থী সরফরাজ খান অবশ্য এলাকাতেই আছেন। দিনের বেশিরভাগ সময়টা দলের কাজকর্মে কাটছে তাঁর। গড়বেতায় থাকলে রোজই আসেন দলীয় কার্যালয়ে। চোখ বুলিয়ে নেন খবরের কাগজে। নজর রাখেন টেলিভিশনে। সরফরাজ বলছেন, “তেমন টেনশন নেই। মানুষের উপরে বিশ্বাস আছে। ’’
সময় কাটছে কী করে? সিপিএম প্রার্থীর জবাব, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা— এ সব করেই কেটে যাচ্ছে।’’ দু’দিন আগে মেদিনীপুরে যান সরফরাজ। কিছু গরিব মানুষের চিকিৎসা করাতে। তাঁর কথায়, ‘‘যতটা পারি, গরিব মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি।’’ একেবারেই টেনশন নেই? এ বার সরফরাজের জবাব, ‘‘খেলা তো শেষ। এখন খামোকা চিন্তা করে কী হবে!”
গড়বেতার ভোট ময়দানে কে কেমন খেলেছেন, তার স্কোরবোর্ড জানতে এখন ১৯ মে-র অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy