Advertisement
E-Paper

সিপিএমের ‘ভয়ে’ নেতা-কর্মীরা ঘরছাড়া

যে রায়নায় ভোটের দিন তৃণমূলের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ তুলে বেশ কিছু বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম, সেই রায়নাতেই ভোটের পরে সিপিএমের ত্রাসের অভিযোগে ঘরছাড়া বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মী। তৃণমূলের অভিযোগ, এক পঞ্চায়েত সদস্য বাদল পাল-সহ প্রায় ১২ জন ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৬
বাঁ দিকে, পুড়েছে তৃণমূল কর্মীর খড়ের গাদা। ডান দিকে, জখম তৃণমূলের বুথ এজেন্ট। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, পুড়েছে তৃণমূল কর্মীর খড়ের গাদা। ডান দিকে, জখম তৃণমূলের বুথ এজেন্ট। নিজস্ব চিত্র।

যে রায়নায় ভোটের দিন তৃণমূলের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ তুলে বেশ কিছু বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম, সেই রায়নাতেই ভোটের পরে সিপিএমের ত্রাসের অভিযোগে ঘরছাড়া বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মী।

তৃণমূলের অভিযোগ, এক পঞ্চায়েত সদস্য বাদল পাল-সহ প্রায় ১২ জন ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন। পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাস দিলেও পাঁচ দিন পরেও ভয় কাটিয়ে বাড়ি ফেরার সাহস দেখাতে পারছেন না তাঁরা। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য এই সব অভিযোগে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, গত পাঁচ বছর ধরে তৃণমূলের ভয়ে জেলার বহু জায়গায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা গ্রামছাড়া ছিলেন। এমনকী, ভোটের দিনেও বেশ কিছু বুথে এজেন্ট বসতে দেয়নি তৃণমূল। এখন মিথ্যে অভিযোগ করছে।

রায়না ২ ব্লকের গোতান পঞ্চায়েতের হুগলি ঘেঁষা গ্রাম তৈলড়া। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, গত ২১ এপ্রিল ভোট শেষ হওয়ার পর থেকে সিপিএমের গুন্ডা বাহিনী এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাঁদের ভয়ে সেই দিন রাত থেকেই একে একে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে পরিস্থিতি থমথমে হওয়ার পরে তিন-চার জন গ্রামে ফিরে এসেছেন বলেও জানা গিয়েছে। রায়না ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি আনসার আলি খানের অভিযোগ, “নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেই আমাদের সক্রিয় কর্মী পলাশ মণ্ডলকে তুলে নিয়ে গিয়ে সিপিএমের লোকেরা বেধড়ক মারধর করে। তারপর গোটা এলাকায় তান্ডব চালাতে থাকে। সেই ভয়েই আমাদের কর্মীরা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।” তৃণমূলের আরও দাবি, নির্বাচনের শেষ হওয়ার পর থেকেই মাধবডিহি থানার বড়বৈনান পঞ্চায়েতের নৃসিংহপুর, ফতেপুর, সিঙ্গারপুর এলাকায় সিপিএমের লোকজন তান্ডব চালাচ্ছে। কোথাও তৃণমূল কর্মীর ধানের গোলায় অগ্নিসংযোগ, তো কোথাও বুথ এজেন্টকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের দিকে। মঙ্গলবার বর্ধমান জেলা আদালতে দাঁড়িয়ে তৈলড়া গ্রামের তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্য বাদল পাল দাবি করেন, “ভোট শেষ হওয়ার পরেই সিপিএমের লোকেরা সশস্ত্র অবস্থায় গ্রামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে। ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে গ্রামে থাকার আর সাহস পাইনি। বুথ থেকে বাড়ির পথ না ধরে গ্রাম ছেড়েছি।”

তৈলড়া গ্রামে ৭৯৮ জন ভোটারের জন্য বুথ হয়েছিল স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে। সেখানে তৃণমূল এজেন্ট ছিলেন সুকুমার ভট্টাচার্য ও বুদ্ধদেব পাল। সেদিনের পর থেকে তাঁরাও গ্রামছাড়া হয়ে রয়েছেন। মঙ্গলবার সুকুমারবাবু বলেন, “আমি বুথের ভিতর ছিলাম। বাইরে এসে দেখি আমাদের লোকেরা ছুটোছুটি করছে। কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সুবিধাজনক নয় বুঝতে পেরে আমিও গ্রাম ছাড়ি।” তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বাদলবাবুর বাড়িতে রয়েছে তাঁর স্ত্রী জয়শ্রীদেবী ও তাঁর মেয়ে। এ দিন দুপুরে তাঁরা বলেন, “ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়ে রয়েছে। বলতে গেলে, তৃণমূলের লোকেরা ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বাড়ির সামনে দিয়ে একদল লোক যাচ্ছে, আর হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” গোতান পঞ্চায়েতের প্রধান সাহেব খান বলেন, “মাধবডিহি থানাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। গ্রামছাড়ারা যাতে বাড়ি ঢুকতে পারেন তার জন্যও প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।”

তবে প্রশাসনের উদ্যোগে দু’একজন গ্রামে ঢুকলেও বেশিরভাগ তৃণমূল কর্মী-নেতা গ্রামে ঢোকার ভরসা পাচ্ছেন না বলে তৃণমূল নেতাদের দাবি। বাদলবাবু এ দিন বলেন, “প্রশাসন আশ্বাস দিলেও গ্রামে ঢোকার পরিবেশ তৈরি হয়নি। এই অবস্থায় গ্রামে ঢুকলে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে পড়বে।”

তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারের পাল্টা দাবি, ‘‘হাতের নাগালের মধ্যে হুগলি জেলার সীমানা। কাছেই রয়েছে বোমা তৈরির কারখানা। ওই এলাকায় আমাদের উপর ফের হামলা চালাবে বলে তৃণমূল মিথ্যা অভিযোগ করে পরিবেশ তৈরি করছে।” রায়না ২ বিডিও বাপ্পা গোস্বামী এবং এসডিপিও (বর্ধমান) সৌমিক সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা বিষয়টি দেখছি। যদি কেউ গ্রাম ছাড়া থাকে তাকে বাড়িতে ফেরানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

assembly election 2016 Raina homeless TMC leaders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy