Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বাংলার সবুজায়ন

মাটি কামড়ে পড়ে থাকার সুফল ঘরে তুললেন দীপেন্দু

শুরু থেকেই দুরন্ত গতিতে বল নিয়ে এগোচ্ছিলেন। মাঝ মাঠে বার কয়েক কড়া ট্যাকল-এর মুখোমুখি হতে হয়েছিল ঠিকই, তবে ম্যাচের শেষ পর্যায়ে এসে বিরোধী শিবিরের জাল ছিঁড়ে বল গলিয়ে ছাড়লেন বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূলের ফুটবলার প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাস।

উচ্ছ্বাসে ভেসে প্রার্থী। ছবি: নির্মল বসু।

উচ্ছ্বাসে ভেসে প্রার্থী। ছবি: নির্মল বসু।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

শুরু থেকেই দুরন্ত গতিতে বল নিয়ে এগোচ্ছিলেন। মাঝ মাঠে বার কয়েক কড়া ট্যাকল-এর মুখোমুখি হতে হয়েছিল ঠিকই, তবে ম্যাচের শেষ পর্যায়ে এসে বিরোধী শিবিরের জাল ছিঁড়ে বল গলিয়ে ছাড়লেন বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূলের ফুটবলার প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাস।

বসিরহাট দক্ষিণের সাতবারের সিপিএম বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে ওই আসনে উপনির্বাচন হয়। সেটা আজ থেকে প্রায় সতেরো মাস আগের কথা। ভোটের লড়াইয়ে নবীন মুখ হিসাবে ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসকে নামিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময়ে রাজনীতিতে নেহাতই আনকোরা ছিলেন দীপেন্দু।

উল্টো দিকে বিজেপির বলিয়ে-কইয়ে তাত্ত্বিক নেতা শমীক ভট্টাচার্য, দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ তথা জেলা কংগ্রেসের জাঁদরেল নেতা অসিত মুখোপাধ্যায়েরা। সে বার মাঠে নেমে প্রচুর উৎসাহে গা ঘামালেও দীপেন্দুর দৌড় থমকায় মাত্র চোদ্দোশো ভোটের ব্যবধানে এসে। জয়ী হন শমীক। এ বার মধুর প্রতিশোধ নিয়ে দীপেন্দু জিতেছেন প্রায় ২৪ হাজার ভোটে।

সে বার তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ভরিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকার ভোটারেরা। দীপেন্দু বেশ কয়েক হাজার লিড নিয়েছিলেন বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের গ্রামীণ এলাকা থেকে। কিন্তু দু’টি পুরসভা বসিরহাট ও টাকির শহুরে ভোটারেরা তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকায় শেষ হাসি হেসেছিলেন শমীকবাবুই।

এ বার যথারীতি গ্রামীণ এলাকার ভোট ঝুলি উপুড় করে পড়েছে তৃণমূলের ঘরেই। পুর এলাকাও মুখ ফিরিয়ে থাকেনি। সব মিলিয়ে দীপেন্দু পেয়েছেন ৮৮,০৮৫টি ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থেকে ৬৪,০২৭টি ভোট পেয়ে এত দিন রাজ্যের একমাত্র বিজেপি বিধায়কের সম্মান পেয়ে আসা শমীকবাবুর লড়াই থমকে গিয়েছে। ৫৭,০৩৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন অমিত মজুমদার।

আবিরে মাখামাখি...। বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি তৃণমূল সমর্থকদের ছবি।

ভোটে জেতার পরে দীপেন্দু স্বভাতই উচ্ছ্বসিত। গত বার ভোটে হেরেও লড়াই ছাড়েননি তিনি। বসিরহাটের ছেলে দীপেন্দুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দিন দিন বিস্তৃত হয়েছে। দলে পদও মিলেছে দিদির আশীর্বাদে। সভা, সমিতি, মিটিং, মিছিলে নিয়মিত ছিল তাঁর উপস্থিতি। লোকে তখনই বলত, এ ছেলে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। বৃহস্পতিবার ভোটের ফলে সেটাই প্রমাণ করে ছাড়লেন দীপেন্দু।

এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার জয় নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই জয়। আমি তাঁরই নির্দেশে বসিরহাটের মানুষের পাশে থেকে সাধ্যমতো উন্নয়নের চেষ্টা করে গিয়েছি। এ বার বসিরহাটের মানুষের আশীর্বাদ পেয়ে আরও ভাল কাজ করতে পারব আশা রাখছি।’’

জয়ের পথটা অবশ্য কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না দীপেন্দুর। দলের অন্দরের কোন্দল কম ভোগায়নি তাঁকে। কিন্তু বরাবর তৃণমূল নেত্রী স্নেহধন্য দীপেন্দু সে সব সামলে উঠেছেন সোজা ব্যাটে খেলে।

স্থানীয় স্তরে নানা উন্নয়নের সুফলও ঘরে তুলেছেন দীপেন্দু। গত কয়েক মাসে গ্রামীণ এলাকায় রাস্তাঘাট হয়েছে বিস্তর। বসিরহাটের হাসপাতালের আধুনিকীকরণ লোকের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে। মোটেল, রাস্তার নীচ দিয়ে জলের লাইন, আলো-সহ আরও নানা কাজ নাগরিকদের সন্তুষ্ট করেছে।

তা ছাড়া, দীপেন্দু গত সতেরো মাসে যতটা দৃশ্যমান ছিলেন বসিরহাটে, শমীকবাবুকে স্থানীয় মানুষ তেমন ভাবে পাশে পাননি বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। যদিও কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর দৌত্যে রাস্তাঘাট-সহ নানা কাজে বেশ কিছু টাকা ব্যয় হয়েছে। এই কাজে তিনি মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের কিছু মন্ত্রীকে পাশে পেয়েছেন বলে নানা সময়ে প্রকাশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বসিরহাটের উন্নয়নে দীপেন্দুর কোনও ভূমিকা আছে বলে কখনও স্বীকার করেননি শমীক। ভোটের আগে রীতিমতো পুস্তিকা ছাপিয়ে স্থানীয় উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার কথা ফলাও করে প্রচার করেছেন।

কিন্তু এত সবের পরেও ভোটারেরা যে তাঁর উপরে ভরসা রাখেননি, তা ফলাফলেই পরিষ্কার। শমীকবাবু ভোটের ফল জানার পরে বলেন, ‘‘মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পেরেছেন, পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন। আমি জয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাই। বসিরহাটে ভবিষ্যতে যে কোনও রকম উন্নয়নে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE