Advertisement
E-Paper

মুখ্যমন্ত্রী হতে দেব না, সূর্যকে ঘিরল তৃণমূল

কখনও বুথ চত্বরেই চোখের ইশারা যাচ্ছে। কখনও মেঠো রাস্তায় কনভয়ের আগে ঢুকে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে মোটরবাইক। একের পর এক বুথে তিনি ঢুকছেন। আর বার্তা মেনে একই ধাঁচে আছড়ে পড়ছে একের পর এক বিক্ষোভ!

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২৪
তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে সূর্যকান্ত মিশ্র। নারায়ণগড়ে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে সূর্যকান্ত মিশ্র। নারায়ণগড়ে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

কখনও বুথ চত্বরেই চোখের ইশারা যাচ্ছে। কখনও মেঠো রাস্তায় কনভয়ের আগে ঢুকে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে মোটরবাইক। একের পর এক বুথে তিনি ঢুকছেন। আর বার্তা মেনে একই ধাঁচে আছড়ে পড়ছে একের পর এক বিক্ষোভ!

নিজের কেন্দ্র নারায়ণগড়ে সোমবার এই ভাবেই বুথের পর বুথে তৃণমূলের জঙ্গি বিক্ষোভের মুখে পড়লেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বিক্ষোভ বলে বিক্ষোভ! জটলার মধ্যে কেউ মুষ্টি পাকিয়ে তেড়ে যাচ্ছে প্রায়। কারও মুখে অশ্রাব্য গালি। পরিস্থিতি সামাল দিতে এক বার কেন্দ্রীয় বাহিনীকে হাল্কা লাঠি চালাতেও হয়েছে। বুথ ঘুরে দেখতে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা পদমর্যাদার কেউ এমন বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন, নজির মনে পড়ছে না।

দফায় দফায় এই বিক্ষোভের মধ্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অবশ্যই একটি স্লোগান— ‘‘সূর্য মিশ্র, তোমায় মুখ্যমন্ত্রী হতে দিচ্ছি না, দেব না!’’ যা শুনে ঘটনাস্থলে কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সূর্যবাবু হাল্কা স্বরে কখনও কখনও জানতে চেয়েছেন, ‘‘হয়েছে আপনাদের?’’ তার পরে অন্য বুথের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক তৃণমূল নেতা একান্তে বলছেন, ‘‘এটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল! নির্বাচনের দিন প্রার্থী বুথে যেতেই পারেন। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভের মধ্যে আবার এমন স্লোগান দেওয়ার মানে, ধরে নিচ্ছি সূর্যবাবুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে!’’

সিপিএম-ও মনে করছে, বিক্ষোভের মধ্যে শাসক দলের হতাশা এবং ভয়ের বার্তাই স্পষ্ট! সূর্যবাবুর নির্বাচনের অন্যতম ভারপ্রাপ্ত এবং সিপিএমের বেলদা জোনাল কমিটির নেতা মদন বসুর কথায়, ‘‘সূর্যবাবু বুথে বুথে হাজির হওয়ায় ছাপ্পা দেওয়ার পরিকল্পনাটা মাটি হয়েছে। সেই হতাশা থেকেই ওরা যা করেছে, সেটা নোংরা রাজনীতি!’’ তৃণমূলের নেতারা অবশ্য প্রথমে দাবি করছিলেন, এলাকার প্রতি নজর না দেওয়ায় স্থানীয় মানুষের ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ ক্ষোভের মুখে পড়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা নিজেরাই তৃণমূল কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে এবং সংবাদমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে সেই ব্যাখ্যায় জল ঢেলেছেন!

১৯৭৭-এ প্রথম বার বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে নারায়ণগড়ে বুথে বুথে ঘুরেছিলেন সূর্যবাবু। তার পরে এই প্রথম। এই কেন্দ্রের মোট ২৬৯টি বুথের মধ্যে অন্তত ২৩টিতে তৃণমূলের ভোট লুঠের ছক আছে বলে গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে আশঙ্কা করেছিল সিপিএম। তাই সকাল ৮টায় খাকুড়দা প্রাথমিক স্কুলে নিজের ভোটটা দিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলেন সূর্যবাবু। তৃণমূলের ঘাঁটি, এমন এলাকাতেই বিকাল পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন। তৃণমূলেরই কেউ কেউ বলছেন, এর আগে নারায়ণগড়েই কৃষক সভার জাঠায় যে ভাবে সূর্যবাবুকে হেনস্থা করা হয়েছিল, সেই একই ভাবনা থেকে বিপক্ষের প্রধান সেনাপতিকে টলিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকতে গিয়ে ভৌতিক কাজের দিকে কতটা নজর দেওয়া গেল! সিপিএমেরও হিসাব বলছে, বিরাট গোলমালের অভিযোগ ১৫টির বেশি বুথে নেই।

সূর্যবাবু শুরুটা করেছিলেন তৃণমূলকে চাপে ফেলেই। শাসক দলের বাধায় আটকে পড়া এজেন্ট রেখা মণ্ডলকে নিজের গাড়িতে তুলে শশিন্দা সাগরচন্দ্র স্কুলের বুথে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বুথের মধ্যে রাজ্য পুলিশের কনস্টেবলকে দেখে তাঁকে বার করে দিতে বাধ্য করেছেন রাধানগর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বৈরামপুরে তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সমীর মণ্ডলকে ভোট দেওয়ার পরেও বুথে ঘোরাঘুরি করতে দেখে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আর এ সবের পরে বৈরামপুর থেকেই পাল্টা মারমুখী হয়ে উঠেছে শাসক দল। যার সব চেয়ে বড় নমুনা পাওয়া গিয়েছে বেলদার পাতলী হাইস্কুলের মাঠে।

সাড়ে ১১টা নাগাদ সিপিএম প্রার্থী যখন পাতলীর স্কুলের দিকে যাচ্ছেন, বুথ প্রায় ফাঁকা। মাঠে সূর্যবাবু গিয়ে দাঁড়াতেই ভিড় জমে। এত দিন কেন আসেননি, প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ শুরু করার পরে নিজেরাই জানান দেয় তারা তৃণমূল কর্মী। এর পরে তাদের দাবি, উন্নয়ন যা করার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করছেন। আর সূর্যবাবু সন্ত্রাস করে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন! শুরু হয় ‘মুখ্যমন্ত্রী হতে দেব না’র স্লোগান!

পরে নন্দকিশোরপুরে একই বিক্ষোভ চালিয়েছে তৃণমূল। আর বাঁকিবাজার প্রাথমিক স্কুলে সিপিএম কর্মীরা যখন সূর্যবাবুকে শাসকের সন্ত্রাসের বিবরণ দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি চালিয়ে সে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করেছে। বিক্ষোভ প্রসঙ্গে সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘কী হয়েছে, সবাই দেখেছেন। এর পরে ওঁদের নেতারা বেরোলে ‘চোর চোর’ বলে যদি বিক্ষোভ শুরু হয়, কেমন হবে?’’

শেষমেশ ভোটটা তা হলে কেমন হল? নারায়ণগড়ের তৃণমূল প্রার্থী প্রদ্যোৎ ঘোষের দাবি, ‘‘৩৪ বছরের অনুন্নয়ন, খুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাড়ে চার বছরের উন্নয়ন ও শান্তির পক্ষে রায় দিয়েছেন মানুষ।’’ আর সন্ধ্যায় বেলদা জোনাল কার্যালয় ছাড়ার আগে সূর্যবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি নেতিবাচক ধরছি না!’’

assembly election 2016 Suryakanta Mishra TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy