Advertisement
E-Paper

ভরসা জোগাতে ভোটারদের ভিজিটিং কার্ড বিলি ভি কে-র

হাসি মুখে তিনি নিজের পকেট থেকে ভিজিটিং কার্ড বিলোচ্ছিলেন। যাতে সাধারণ মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কয়েক জনের থেকে ‘ভিজিটিং কার্ড’ নিজেও নিলেন। সঙ্গে আশ্বাস, প্রয়োজনে পরিস্থিতির কথা জানতে নিজে যোগাযোগ করবেন।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৬
কোনও অভিযোগ থাকলে জানাবেন। ভোটাদের ‘ভিজিটিং কার্ড’ দিয়ে সেটাই বলতে চাইছেন বিশেষ পর্যবেক্ষক! সোমবার শ্রীরামপুরে। —তাপস ঘোষ।

কোনও অভিযোগ থাকলে জানাবেন। ভোটাদের ‘ভিজিটিং কার্ড’ দিয়ে সেটাই বলতে চাইছেন বিশেষ পর্যবেক্ষক! সোমবার শ্রীরামপুরে। —তাপস ঘোষ।

হাসি মুখে তিনি নিজের পকেট থেকে ভিজিটিং কার্ড বিলোচ্ছিলেন। যাতে সাধারণ মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

কয়েক জনের থেকে ‘ভিজিটিং কার্ড’ নিজেও নিলেন। সঙ্গে আশ্বাস, প্রয়োজনে পরিস্থিতির কথা জানতে নিজে যোগাযোগ করবেন।

এ ভাবেই শ্রীরামপুরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করলেন দুই মেদিনীপুর এবং হাওড়া ও হুগলি জেলার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিশনের বিশেষ নজরদারি দলের মাথা পঞ্জাবের সিইও ভি কে সিংহ। সোমবার চুঁচুড়ায় পুলিশ, প্রশাসন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরে শ্রীরামপুরে আসেন তিনি। চুঁচুড়ার বৈঠকে তাদের অভিযোগ শুনে জেলা পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের কাজে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে দাবি বিরোধীদের। নানা অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশকে উপযুক্ত পদক্ষেপের নির্দেশও দেন তিনি। ভি কে সিংহের এ দিনের ভূমিকায় বিরোধীরা স্বস্তিতে। কমিশন এমন কড়া থাকলে তৃণমূলের ভোট ‘লুঠ’ আটকানো যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

বৈঠক সেরে বেরনোর সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ভি কে সিংহ বলেন, ‘‘সব দেখলাম। যা জানানোর দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনকে বিস্তৃত রিপোর্ট দিয়েই জানাব।’’

রবিবার সন্ধ্যায় ভি কে সিংহের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নজরদারি দলটি হুগলিতে আসে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চুঁচুড়ায় সার্কিট হাউসে বৈঠক করে তারা। সকাল ১০টা নাগাদ প্রশাসন এবং পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়। সেখানে জেলাশাসক মুক্তা আর্য, পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী ছাড়াও অতিরিক্ত জেলাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারেরা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন নজরদারি দলের সদস্যেরা।

তবে সিপিএম বা কংগ্রেসের ‘জেলার মুখ’ হিসেবে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের কাউকে বৈঠকে দেখা যায়নি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগে বরাবরই সরব হয়েছেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল মান্নান। সেই মান্নান বা সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী— কেউই ভি কে সিংহের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানানোর পথে যাননি। সিপিএমের তরফ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের চুঁচুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোদীপ ঘোষ এবং স্থানীয় নেতা অরিন্দম ভট্টাচার্য। কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি দিলীপ নাথ এসেছিলেন। দু’দলেরই নিচুতলার কর্মীরা দলের এই ঢিলেঢালা মনোভাবে হতাশ। তাঁরা মনে করেন, মান্নান এবং সুদর্শনবাবুর মতো অভিজ্ঞ ও ওজনদার নেতা যদি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের সামনে সমস্বরে গলা তুলতেন, তা হলে তা আলাদা মাত্রা পেত। তুলনায় বিজেপি অনেক বেশি সিরিয়াস ছিল। বিজেপির জেলা সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য এবং যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পাল দু’জনেই বৈঠকে ছিলেন।

সূত্রের খবর, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য খুঁটিয়ে শোনেন পর্যবেক্ষকরা। গত পুরসভা ভোটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেন, বাঁশবেড়িয়া, আরামবাগ-সহ নানা জায়গা রীতিমতো উপদ্রুত ছিল। অনেক জায়গাতেই ভোটের নামে কার্যত প্রহসন হয়েছে। তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’ বিরোধী প্রার্থী বাড়ি ফিরতে পারেননি, এমনটাও হয়েছে। শাসকদলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ শুনে নজরদারি দলের সদস্যেরা জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে প্রশ্ন করেন, কেন সব অভিযোগের ব্যবস্থা নেওয়া হয়‌নি। এর পরেই পুলিশকে নির্দেশ দেন, যা যা অভিযোগ উঠছে, সে ব্যাপারে যেন উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়।

বৈঠক সেরে বেরনোর পরে বিরোধী দলের নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিজেপি নেতা স্বপনবাবু বলেন, ‘‘বিবেকবাবুকে ধন্যবাদ। উনি মন দিয়ে সব শুনেছেন। তৃণমূলের সন্ত্রাস আটকানো না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন যে সম্ভব নয়, তা ওঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন এসপি-কে। কমিশন শেষ পর্যন্ত এমন কড়া থাকলে অবাধে লুঠতরাজের ভোট আটকানো যাবে।’’ সিপিএম নেতা মনোদীপবাবু বলেন, ‘‘উনি ধৈর্য ধরে আমাদের কথা শুনেছেন। কিছু ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হয়েছে। উনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ তবে, কি কি ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে, তা নিয়ে সিপিএম নেতারা মুখ খুলতে চাননি।

সিপিএম-তৃণমূলের অভিযোগ শুনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের কটাক্ষ, ‘‘ওঁরা তো টিভিতে আমাদের বিরোধিতা করেন। বাস্তবে তো কোনও অভিযোগই নেই। তাই ওদের জোটের প্রবীণ নেতারা কমিশনের কর্তার সঙ্গে দেখা করতে চাননি।’’

চুঁচুড়া থেকে বেরিয়ে শ্রীরামপুরের যোগদানন্দ আশ্রমে যান ভি কে সিংহ। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটান। দিল্লি থেকে কমিশনের নজরদারি দলের আসার খবরে পথচলতি মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে পড়েন। বেরনোর সময়েই উৎসাহী লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন ভি কে সিংহ। তার পরেই ভিজিটিং কার্ড বিনিময়। গঙ্গার ঘাটে গিয়েও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। শ্রীরামপুর থেকে বেরিয়ে জিটি রোড ধরে দক্ষিণে শ্বরে যান তিনি। পুজো দিয়ে কলকাতায় ফেরেন।

Special Observer Assembly Election2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy