Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ভোটের শাসন

বহিরাগত ঠেকাতে নজরদারি জলপথেও

শুধু মোটরবাইক-বাহিনী নয়। এ বার বিধানসভা নির্বাচনে হাওড়ায় বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে জলপথেও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। সেই মতো ভোটের দিন কয়েক আগে থেকেই গঙ্গায় ২৪ ঘণ্টা টহল দেবে রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের বিশেষ লঞ্চ।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০১:০৪
Share: Save:

শুধু মোটরবাইক-বাহিনী নয়। এ বার বিধানসভা নির্বাচনে হাওড়ায় বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে জলপথেও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। সেই মতো ভোটের দিন কয়েক আগে থেকেই গঙ্গায় ২৪ ঘণ্টা টহল দেবে রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের বিশেষ লঞ্চ।

এমনিতেই প্রতি নির্বাচনে স্থলপথে নজরদারির ব্যবস্থা থাকে। জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় চলে বিশেষ নজরদারি। কিন্তু এই প্রথম জলপথকেও গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন। প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, আগেও নির্বাচনের সময়ে ভোটের কয়েক দিন আগে থেকে কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনা থেকে দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি দুষ্কৃতীদের হাওড়ায় ঢোকার ব্যাপারে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে
অভিযোগ উঠেছিল।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০০৭-এ নন্দীগ্রামে সিপিএম যখন ‘পুনর্দখল’ অভিযান চালাচ্ছে, সে সময়ে তৃণমূল এবং মাওবাদীদের একটা বড় অংশ জলপথে লোক ঢুকিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। একই ভাবে, ২০০৯-এ লোকসভা ভোটের পরে যখন নন্দীগ্রাম বা পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলের দখলে, তখনও তাদের বিরুদ্ধে জলপথে লোক এনে ওই সব এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। এ বার যাতে সেই সমস্ত অভিযোগ না উঠতে পারে, তাই আগে থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে হাওড়া জেলা প্রশাসন
সূত্রে খবর।

প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা দেখা যাচ্ছে, তাতে নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করাই প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য। কার্যত, গত পুরসভা ভোটে শাসক দলের বিরুদ্ধে রিগিং ও ছাপ্পা ভোটের যে অভিযোগ উঠেছিল, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা মাথায় রেখেই ভোটের ক’মাস আগে থেকে সচেতন হয়ে এগোচ্ছে প্রশাসন।

জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, ‘‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ করেছি। তার মধ্যে অন্যতম জলপথে, বিশেষ করে গঙ্গায় ২৪ ঘণ্টা পাহারার ব্যবস্থা। গঙ্গা নদী জেলার গুরুত্বপূর্ণ সীমানা। লঞ্চ বা নৌকায় যাতে বহিরাগতেরা হাওড়ায় না ঢুকতে পারে, তাই
এই ব্যবস্থা।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নির্বাচনী আচরণ বিধি (মডেল কোড অব কন্ডাক্ট) চালু হওয়ার পরেই প্রশাসন মূলত যে বিষয়গুলির উপরে জোর দিয়েছে তা হল, মানুষ যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা। এ জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী জেলায় আসার পরেই তাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। যাতে তারা গিয়ে সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে, অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা বোঝাতে পারে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যে ওই সব এলাকায় পাঠানো হচ্ছে, তার ভিডিওগ্রাফিও করা হচ্ছে। যাতে নির্বাচন কমিশন চাইলে তা দেখানো যায়।

জেলাশাসক জানান, নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, জেলায় বিশেষত শহরাঞ্চলে সরকারি সম্পত্তিতে দলের পোস্টার ও ব্যানার না খোলার সংখ্যা বেশি। হাওড়া পুর-এলাকায় এর সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ১৪ হাজার পোস্টার, ব্যানার খোলা হয়েছে। বাকি প্রায় ৮ হাজার। সেগুলিও যাতে খুলে ফেলা হয় বা চাপা দেওয়া হয়, তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসক পদমর্যাদার অফিসারকে।

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে হাওড়া পুর-এলাকার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের ব্যানার খুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন জেলা নির্বাচন দফতরের মডেল কোড অব কন্ডাক্ট বিভাগের দুই কর্মী। সেই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। বেকাদায় পড়ে প্রশাসনও। ওই ঘটনার কথা মাথায় রেখেই এ বার সরকারি সম্পত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলির লাগানো ব্যানার, পোস্টার ও পতাকা খোলার ব্যাপারে নির্বাচন দফতরের কর্মীদের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্রতিটি দলের সঙ্গে রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড এবং পুলিশ বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assebly election 2016 outsider west bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE