আশা-আশঙ্কায় উদয়ন।—নিজস্ব চিত্র
রোজকার ব্যস্ত রুটিন অনেকটাই বদলেছে। সময় হলে দুপুরের দিকে খানিকটা ভাত ঘুমও দিচ্ছেন। কর্মীরা রিপোর্ট দিয়েছেন, বাবুনদা ভোট ভালই হয়েছে। এমনকি দিনহাটা ২ ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে যে এলাকা বেশি লিড দেবে তাদের জন্য ছোট গাড়ি পুরস্কার ঘোষণা অনুযায়ী দিতে হবে, সে কথাও অনেকে বলছেন। তারপরেও কোথায় যেন একটা চিন্তা থেকেই যাচ্ছে তাঁর অনুগামীদের।
‘তিনি’ দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। বাবুনদা নামে এলাকায় যার পরিচিতি। মুখে অবশ্য জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু তারপরেও কিছু ফ্যাক্টর যেন তাঁকে ভাবাচ্ছে। অন্তত বাবুনদার ঘনিষ্ঠ শিবিরের তেমনই দাবি। সেই সব বিষয় কাটিয়ে এ বার ভোটে জেতা থেকে ব্যবধান ধরে রাখা নিয়ে দিনহাটার রাজনৈতিক মহলে এখন ব্যাপক জল্পনা। দিন যত এগোচ্ছে তত বাড়ছে ওই জল্পনা। তাতে মাঝের সময়টা যেন কাটতে চাইছে না।
এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটা দিন একটু অন্য ভাবে কাটাতে কলকাতায় যান উদয়নবাবু। বুধবার তিনি দিনহাটা থেকে রওনা হন। শনিবার ফের সেখান থেকে ফেরার ট্রেন ধরে রবিবার দিনহাটায় এসেছেন। উদয়নবাবু বলেন , “নাতি উজানের সঙ্গে থাকলে বোঝাই যায় না কী করে সময় কেটে যায়! দারুণ কাটল ক’টা দিন।” নিজের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত বলেও ইতিমধ্যে একাধিকবার জানিয়েছেন তিনি।
দলের অন্দরের অবশ্য খবর, অঞ্চল থেকে বুথভিত্তিক রিপোর্ট পর্যালোচনার পর একটি বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত উদয়নবাবু জিতলেও মার্জিন ১৫ হাজারের বেশি হবে না। সেটাও সব রিপোর্ট ঠিকঠাক মিললে।
তবে কি রিপোর্ট না মেলার আশঙ্কাও আছে? গত বিধানসভায় দিনহাটা থেকে ৩০ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন উদয়ন। এবার আগেভাগেই অর্ধেক ভোট ছেঁটে ফেলা কেন? তাই নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠছে।
ওই আলোচনাতেই উঠে আসছে ভিন্ন পরিস্থিতির কথা। ২০১১ সালে বামফ্রন্টের ফব প্রার্থী হিসাবে লড়াই করেছিলেন তিনি। কমলপুত্রের ইমেজের সঙ্গে বাড়তি পাওনা ছিল তৃণমূলের বদলে তাদের সমর্থিত এনসিপির’ দুর্বল’ প্রার্থী । তার ওপর কংগ্রেস নেতা ফজলে হকের নির্দল হয়ে দাঁড়ান। এবারেও ফজলে হক নির্দল হয়ে লড়ছেন। মিল ওই টুকুই। বাস্তবে লড়াইয়ের ময়দান অনেক কঠিন হয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান ইস্যুতে ‘বাবার দল’ ছাড়া নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে। অন্য দিকে প্রয়াত কমলবাবুকে সামনে রেখে সেই বিরোধীরাই নিজেদের পালে হাওয়া টানতে জোর প্রচার করেছে।
কংগ্রেস ও বামেদের জোটের বন্ধন। লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূল দিনহাটায় প্রায় ৮ হাজার ভোটে এগিয়েছিল। জোটের হিসাবে লড়াই অবশ্য হাড্ডাহাড্ডি। তার উপর দলে ঢোকার সময় যার প্রকাশ্য ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে সেই দিনহাটা ২ ব্লক সভাপতি মির হুমায়ুন কবীরের কাঁধেই ভর করে তাঁকে লড়তে হয়েছে। খারাপ কিছু হলে দায় যাতে না পরে সেজন্য কবীর দিনহাটা ২ ব্লকের যে অঞ্চল বেশি লিড দেবে তাদের ছোটগাড়ি পুরস্কারের ঘোষণাও করেছেন। তবে সাবেক ছিটমহলে তিনি কতটা ভোট টানতে পেরেছেন এ সব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই চিন্তাটা যেন থাকছেই।
উদয়নবাবু এ সব বক্তব্য উড়িয়ে দিচ্ছেন। ঢালাও সার্টিফিকেট দিয়ে বলছেন, “হুমায়ুন ভাল কাজ করেছেন।” দিনহাটা ২ ব্লক সভাপতি মির হুমায়ুন কবীর আশাবাদী, “দলের প্রার্থী জিতছেনই। পুরস্কারের গাড়ি কেনা শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
ওই আসন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বিরোধীরাও। জোট প্রার্থী ফব’র অক্ষয় ঠাকুর থেকে নির্দল ফজলে হক, বিজেপি শিবির হাল ছাড়ছেননা কেউ। দিনহাটায় উলোট পুরাণ হচ্ছেই দাবি তাদের শিবিরের। সবমিলিয়েই ‘শেষ সিন’ দেখতে অপেক্ষা ১৯ মে’র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy