Advertisement
E-Paper

হিংসা ঠেকাতে কথার কথা

একটা সময় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। সেই জেলাতেই সিপিএম নেতৃত্ব এখন স্থানীয়স্তরে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য দলের কর্মীদের বার্তা দিচ্ছেন!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০১:৩৭
তৃণমূল কাউন্সিলের হস্তক্ষেপে মেদিনীপুরের কুইকোটার এই পার্টি অফিসই ফেরত পেয়েছে সিপিএম। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

তৃণমূল কাউন্সিলের হস্তক্ষেপে মেদিনীপুরের কুইকোটার এই পার্টি অফিসই ফেরত পেয়েছে সিপিএম। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

একটা সময় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। সেই জেলাতেই সিপিএম নেতৃত্ব এখন স্থানীয়স্তরে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য দলের কর্মীদের বার্তা দিচ্ছেন!

ইতিমধ্যে জেলা সিপিএমের তরফে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ইতিমধ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘প্রয়োজনে এলাকার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন’। দলীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা সিপিএমের একাংশ নেতা জানান, স্থানীয়স্তরে দলের অনেক নেতার সঙ্গেই শাসক দলের নেতাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বললে এলাকায় শান্তি বজায় রাখা সহজ হতে পারে। এরপরই জেলা সিপিএমের তরফে সব জোনাল কমিটিকে দরকারে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগের মৌখিক পরামর্শ দেওয়া হয়। এ কথা স্বীকার করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “শাসক দলের যাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়, স্থানীয় নেতাদের বলা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে।”

তৃণমূলের অবশ্য দাবি, কোনও রকম হিংসায় প্রশ্রয় দিচ্ছে না দল। জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল সব সময় শান্তির পক্ষে। কর্মীদের বলা হয়েছে, কোনও রকম প্ররোচনায় পা না দিতে।’’

ভোট পরবর্তী হিংসা ঠেকাতে হাওড়ার আমতা বিধানসভা এলাকার কুমারিয়া গ্রামে যুযুধান দু’পক্ষ কাছাকাছি এসেছে। বাম ও তৃণমূলের নেতারা আলাপ-আলোচনা করে শান্তি বজায় রাখতে তৎপর হয়েছেন। ওই এলাকা থেকে গোলমালের খবর মেলেনি। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরেও রাজনৈতিক হিংসা ঠেকাতে তৎপরতার ইঙ্গিত মিলল।

ঘটনাচক্রে শুক্রবারই দখল হয়ে গিয়েছিল মেদিনীপুর শহরের কুইকোটায় সিপিএমের বাউরিপাড়া শাখা কার্যালয়। শনিবার এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তীকে সে কথা জানান সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী। নির্মাল্য মেদিনীপুর কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন মাইতির নির্বাচনী এজেন্টও ছিলেন। নির্মাল্যকে জানানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কার্যালয়ের দখল ফেরত পায় সিপিএম। সারদাবাবু বলেন, “তৃণমূল কাউন্সিলর বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কথাও রেখেছেন।” আর নির্মাল্যর বক্তব্য, “৩৪ বছরে সিপিএম যে ভুল করেছে, সেই একই ভুল তৃণমূল করবে না। কোনও জোরজুলুম, অশান্তি হবে না।”

মেদিনীপুরের এই তৃণমূল কাউন্সিলরের কথার প্রতিফলন অবশ্য জেলার অন্যত্র দেখা যাচ্ছে না। উল্টে বিরোধী কর্মীদের উপর হামলা, পার্টি অফিস ভাঙচুর-দখল চলছেই। শুক্রবার রাতেও ঘাটালের রাধানগর, কোতুলপুর, শোলগেড়িয়া, খাসবাড়ে সিপিএমের শাখা কার্যালয়ে লুঠপাট হয়েছে। গোয়ালতোড়, শালবনিতে হামলা হয়েছে। জঙ্গলমহলেও আক্রান্ত বিরোধীরা। সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরি লোকাল কমিটির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। মারধর করা হয়েছে রগড়া অঞ্চলের কাঠুয়াপাল বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট সত্যরঞ্জন দত্তকে। শনিবার সত্যরঞ্জনবাবুর মাথা ন্যাড়া করে গ্রামে ঘোরানো হয় বলেও অভিযোগ। কাঠুয়াপালের দুই সিপিএম কর্মী পুলক চন্দ ও কালীপদ রায় আবার রগড়া থেকে রেশনের সামগ্রী নিয়ে ফেরার সময় আক্রান্ত হন। শনিবার নয়াগ্রাম ব্লকের নিমাইনগরে বিজেপি সমর্থকদের ৮টি বাড়িতে ভাঙচুর-লুঠের অভিযোগ উঠেছে। নয়াগ্রামের কলমাপুকুরিয়ায় বিজেপি কর্মী সুজিত মাহাতোকে মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।

হামলা অব্যাহত নারায়ণগড় ও সবংয়েও। শনিবার সকালে নারায়ণগড়ে সিপিএমের লোকাল কমিটির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুঠপাটের অভিযোগ ওঠে। দলের জোনাল কমিটির সম্পাদক মদন বসু বলেন, “স্থানীয় তৃণমূল নেতা সূর্য মেটিয়ার নেতৃত্ব আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশকে জানিয়েছে।’’ নারায়ণগড় থেকে জয়ী তৃণমূলের বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষ অবশ্য বলেন, “কলকাতায় রয়েছি। বিষয়টি জানা নেই।’’

এ দিন সকালে সবংয়ের বলপাইতে সিপিএমের একটি আঞ্চলিক ও দু’টি শাখা কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুঠের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভেমুয়ার ভুটিচকে আবার সিপিএম ও কংগ্রেস সমর্থকদের চারটি দোকান বন্ধের অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক চন্দন গুছাইত বলেন, “স্থানীয় তৃণমূল নেতা মানস মিশ্র, নিবারণ সামন্তরা আমাদের তিনটি অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে লুঠপাট করেছে।’’ কংগ্রেসের ব্লক সাধারণ সম্পাদক স্বপন মাইতির মতে, “সবংয়ে মানস ভুঁইয়ার জয় তৃণমূল মেনে নিতে পারছে না। তাই নেত্রীর ছোট-ছোট ভাইরা অশান্তি করছে।’’

পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিন সবং থানায় শান্তি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেই বৈঠকে কংগ্রেস ও বাম প্রতিনিধিরা এলেও তৃণমূলের কেউ আসেননি। সবংয়ের তৃণমূল নেতা অমূল্য মাইতি বলেন, “ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। আর রাজ্যে অস্তিত্ব হারানো সিপিএমের দাবিতে শান্তি বৈঠকে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।’’

তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে অশান্তির ঘটনাও সামনে আসছে। শুক্রবার গভীর রাতে পিংলা বিধানসভার খড়্গপুর-২ ব্লকের বসন্তপুকুরে তৃণমূল কর্মী শিক্ষক প্রণব দে-র বাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। তবে গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে একটি আস্ত গুলি মিলেছে। তবে সেটি বন্দুক থেকে ছোড়া হয়নি বলেই মনে করছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলেরই জেরেই এই ঘটনা। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “তৃণমূলের ক্ষতি চায় এমন কোনও দুষ্কৃতী এই কাজ করেছে।’’

assembly election 2016 TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy