Advertisement
E-Paper

বুথে আর যাওয়ার দরকার নেই জেঠু

সকালে বাজার করতে যাচ্ছিলেন কেশপুরের এক প্রবীণ ব্যক্তি। পথে এক তৃণমূল কর্মী ডেকে রীতিমতো নরম সুরে বলল, ‘‘জেঠু আপনাদের কারও ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই। দেখুন আমি কিছু বলব না, কিন্তু সবাই তো সমান নয়। যদি রাস্তায় কোনও ঝামেলা করে। কী দরকার বলুন তো ঝুট ঝামেলায় যাওয়ার।”

সুমন ঘোষ ও বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩২
-নেই নজরদারি। কেশপুর থানার সামনের রাস্তায়। — কিংশুক আইচ।

-নেই নজরদারি। কেশপুর থানার সামনের রাস্তায়। — কিংশুক আইচ।

সকালে বাজার করতে যাচ্ছিলেন কেশপুরের এক প্রবীণ ব্যক্তি। পথে এক তৃণমূল কর্মী ডেকে রীতিমতো নরম সুরে বলল, ‘‘জেঠু আপনাদের কারও ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই। দেখুন আমি কিছু বলব না, কিন্তু সবাই তো সমান নয়। যদি রাস্তায় কোনও ঝামেলা করে। কী দরকার বলুন তো ঝুট ঝামেলায় যাওয়ার।”

এই কথাগুলো নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তিকে মনে করিয়ে দিল, ‘আতঙ্ক’ সিনেমার সেই সংলাপ— ‘মাস্টারমশাই আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি।’

সকলের ক্ষেত্রে প্রচারের ধরন অবশ্য একরকম নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিপিএম কর্মীর কথায়, “ওঁরা বলছে, বেশ তো চাষবাস করে সুখেই আছেন। আমরা তো কোনও সমস্যা করিনি। কিন্তু ভোট দিতে যাবেন না। ভোট দিতে গেলে পরে কী হবে, বলতে পারব না।” যদিও এই প্রচারের পরেও অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে, “দেখি, কী করে? ভোটটা দিতে যাব। জোর করে ফিরিয়ে দিলে বাধ্য হয়ে ফিরতে হবে।”

ভোটে ভূতের দাপট থামাতে অবশ্য ‘ওঝা’ও বদল করছে সিপিএমও। কেমন? শুধু বাহিনীর উপর ভরসা না রেখে এ বার দলের কর্মীদের বুথ আগলে রাখার নিদান দিচ্ছে সিপিএম। দলের বুথ এজেন্টদের জানানো হয়েছে, ভোটের দিন সকাল থেকে শাসক দলের লোকজন ভয় দেখাতে পারে, প্রলোভনও দেখা পারে, তবে কোনও ভাবেই বুথ ছাড়া যাবে না।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “এজেন্টদের বুথ আগলে থাকার কথা বলা হয়েছে। আগে যে জড়তা ছিল এখন তা নেই। তবে কিছু জায়গায় শাসক দলের লোকেরা ধমক- চমক দিচ্ছে। যদিও তা উপেক্ষা করেই মানুষ আসবেন।” তাঁর কথায়, “আমরা বলছি, ভোট লুঠ রুখে দিন। নিজের ভোট নিজে দিন। যাকে খুশি তাকে দিন!”

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, নিজেদের অনুকূলে ভোট করাতে বুথ নয়, এ বার বেছে নেওয়া হয়েছে বুথের বাইরের এলাকাকে। শনিবার রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘অন্য’ প্রচার। কেমন? এতদিন দলের প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করা চলছিল। এ বার চলছে বিরোধী দলের প্রার্থীদের ভোট না দেওয়ার প্রচার।

তৃণমূলের এক নেতাও বলছেন, “ভুলে গেলে চলবে না, এই পদ্ধতিতেই ভোট করিয়ে সিপিএম ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল। আমরাও তখন ভাবতাম হুমকি দিয়েছে, যদি পরে কিছু করে। ভয়ে ভোট দিতে যাইনি। যাঁরা জোর করে যেতেন পরে তাঁদের মাসুলও দিতে হয়েছিল। সে কথা গ্রামের মানুষের অজানা নয়।”

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, শনি ও রবি - দু’রাতের এই ধমকেই যে কাজটা হয়ে যাবে তা নিয়ে নিশ্চিত দল। তাতে কাজ না হলে? এক তৃণমূল নেতার কথায়, “বুথের সামনে আমাদের কোনও কাজ নেই। সেখানে আধা সামরিক বাহিনী, সিসিটিভি, ক্যামেরা –এ সব থাকবে। বারণ করা সত্ত্বেও কেউ ভোট দিতে এলে আমরা পাড়াতেই আটকে দেব। কমিশন তো দুরের কথা, কাকপক্ষীও টের পাবে না।” কিন্তু এতে তো ভোট পড়ার হার অস্বাভাবিক কমে যাবে। তা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠতে পারে? তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “সে দাওয়াইও রয়েছে। বাম জমানায় সিপিএম যেমন বস্তি এলাকায় ভোটের আগের দিন খাইয়ে, টাকা দিয়ে ভোট কিনত, আমরাও সেই পথেই হেঁটেছি।”

ভোটারদের ‘আতঙ্ক’ কাটাতে তৎপর বামেরা। দলীয় সূত্রে খবর, কর্মীদের অভয় দিয়ে জানানো হয়েছে, কোথাও সামান্য গোলমাল হলেও সেখানে দলীয় নেতৃত্ব পৌঁছে যাবেন। কর্মীদের পাশে থাকবেন। ফলে, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। পুলিশ- প্রশাসন- নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিরও সাহায্য নেবে সিপিএম। ইতিমধ্যে সব রকম প্রস্তুতিও সারা হয়েছে।

দলের এক সূত্রে খবর, কেশপুর- গড়বেতার মতো কয়েকটি এলাকায় সব বুথে সিপিএম নির্বাচনী এজেন্ট দিতে পারবে না। রবিবার সন্ধে পর্যন্ত যা খবর, তাতে ৮০ শতাংশ বুথের আশপাশে নির্বাচনী এজেন্ট থাকতে পারে। সমস্যার কথা মানছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণবাবু। তবে তাঁর বক্তব্য, “আমরা চেষ্টা করছি সব বুথেই এজেন্ট দেওয়ার। কেশপুরের মতো এলাকায় কিছু সমস্যা হচ্ছে।”

জেলা সিপিএমের এক নেতা মানছেন, “বেশ কিছু এলাকায় পরিস্থিতি এখনও প্রতিকূল। সব এলাকায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সমান নয়। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, ভোট লুঠ আটকানো। ভোট লুঠ আটকানো গেলে এ বার তৃণমূল
পরাস্ত হবেই।’’

ভূত তাড়াতে ‘ওঝা’র দাওয়াই কাজে দেয় কি না, সেটাই দেখার।

assembly election 2016 tmc voters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy