Advertisement
০৮ মে ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls 2021: ‘বিভাজন নয়, চাই সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ’

 দক্ষি‌ণ কাঁথি কার দলে থাকবে তা নিয়ে কেউ রাজ্য সরকারের উন্নয়ন, কেন্দ্র সরকারের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলছেন। কেউ ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ এবং সাম্প্রদায়িকতার সমালোচনায় মুখর।

জ্যোতির্ময় কর। চোখ খবরের কাগজে (বাঁদিকে)। ডানদিকে, অরূপ দাস। ব্যস্ত পড়াশোনায়। নিজস্ব চিত্র।

জ্যোতির্ময় কর। চোখ খবরের কাগজে (বাঁদিকে)। ডানদিকে, অরূপ দাস। ব্যস্ত পড়াশোনায়। নিজস্ব চিত্র।

কেশব মান্না
কাঁথি (দক্ষিণ) শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৬
Share: Save:

নন্দীগ্রামের পাশাপাশি রাজ্যের অন্যতম নজরকাড়া বিধানসভা কেন্দ্র দক্ষিণ কাঁথি। বরাবর যা ডানপন্থীদের ‘দুর্গ’ হিসাবে পরিচিত। একইসঙ্গে অধিকারী পরিবারের নিজের এলাকাও বটে। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তৃণমূল এবং অধিকারী পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক যত তিক্ত হয়েছে, ততই দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্র ‘সম্মানের লড়াই’ হয়ে দাঁড়িয়েছে দু’পক্ষের কাছেই।

প্রথম দফায় গত ২৭ মার্চ ভোট হয়ে গিয়েছে এই কেন্দ্রে। তার কয়েকদিন আগেই অবশ্য অধিকারী পরিবারের কর্তা শিশির অধিকারী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যদিও খাতায়-কলমে এখনও তিনি লোকসভায় তৃণমূলের সাংসদ। ভোটের দিন দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রের সবাজপুটে গিয়ে আক্রান্ত হন অধিকারী বাড়ির ছোট ছেলে তথা বিজেপি প্রার্থী অরূপ দাসের নির্বাচনী এজেন্ট সৌমেন্দু অধিকারী। ভাঙচুর করা হয় সৌমেন্দুর গাড়ি। পরে নির্বাচন মিটে গেলেও কাঁথি শহরের বুকে প্রথমবার যুযুধান দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ঘটেছে। সাম্প্রতিক দলবদলের প্রেক্ষিতে পাড়ায়, চায়ের দোকানে আড্ডায় একটাই চর্চা, দক্ষিণ কাঁথির দখল কার হাতে থাকবে!

শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পূর্ব মেদিনীপুরে সর্বত্রই শাসক দলে ভাঙন ধরেছে। তবে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রে ১৬ জন কাউন্সিলর ছাড়া শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ যাঁরা ছিলেন তাঁরা তৃণমূলেই রয়েছেন। ভোটের ময়দানেও এককাট্টা ছিলেন তাঁরা। তবে অধিকারী পরিবারের বিরোধী হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতা অখিল গিরির ছেলে সুপ্রকাশকে এখানে প্রার্থী করা হবে বলে ভেবেছিল শাসকদলের একটা বড় অংশ। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করে জ্যোতির্ময় করকে। পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক হলেও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জ্যোতির্ময়বাবু অবশ্য কাঁথি শহরের বাসিন্দা। সমবায়ের সূত্রে কয়েক দশক আগে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে তাঁর যোগ। ২০০১ সালে প্রথম তৃণমূলের টিকিটে উত্তর কাঁথি থেকে বিধায়ক। পরে অবশ্য ওই আসনে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে পরপর দুবার পটাশপুর থেকেই বিধায়ক নির্বাচিত হন। কিন্তু কাঁথি শহরের বাসিন্দা হলেও অধিকারীদের দাপটে দক্ষিণ কাঁথিতে কয়েক বছর ধরে জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন তিনি। যার ফলে এ বার মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন কয়েক আগে থেকেই কাঁথিতে এসে সমস্যায় পড়তে হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে বয়সের বাধা অতিক্রম করে গাড়ি চেপে নিরন্তর ছুটে বেড়িয়েছেন গোটা এলাকায়। তবে সব বুথে আর যাওয়া হয়নি।

ভোটের সব জায়গাতেই জ্যোতির্ময়বাবুর পোলিং এজেন্টও ছিল। কাঁথি পুরসভার ২১টি ওয়ার্ড এবং কাঁথি-১ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত এবং কাঁথি-৩ ব্লকের দুটি পঞ্চায়েতে প্রায় সমানে সমানে টক্কর চলেছে বলেই খবর। ভোট মিটে যাওয়ার পর এখন অবশ্য লড়াইয়ের আঁচ কিছুটা স্তিমিত। দিনের বেশিরভাগটাই বাড়িতে বই- খবরের কাগজ পড়ে আর টিভি দেখে কাটছে প্রবীণ তৃণমূল প্রার্থীর। তবে রোদের ঝাঁঝ কমলে বেরিয়ে পড়ছেন শহরের ইতিউতি। দলের নানা স্তরের নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে ভোট-পরবর্তী পর্যালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতির ময়দানে পুরনো খেলোয়াড় হলেও দক্ষিণ কাঁথির ময়দানে দীর্ঘদিন বাদে ‘প্রত্যাবর্তন’ ঘটেছে তাঁর। এতদিনের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও কি ভোটের ফল তৃণমূলের দিকে যাচ্ছে? জ্যোতির্ময়বাবুর উত্তর, ‘‘১৫ দিনের ব্যবধানে সব কিছু করা অত সোজা নয়।’’ পোড় খাওয়া এই রাজনীতিকের কথাতেই যেন স্পষ্ট দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার ফল ঘোষণায় ‘অধিকারীরা’ নিঃসন্দেহে বড় ফ্যাক্টর।

জ্যোতির্ময়বাবুর বিপরীতে রয়েছেন বিজেপির অরূপ দাস। ভোটের ময়দান কিংবা সক্রিয় রাজনীতি, দুই ক্ষেত্রেই প্রথম পা রাখলেন অরূপবাবু। তবে চেনা এলাকা তাঁর। দীর্ঘদিন কাঁথি শহরের ঐতিহ্যবাহী কাঁথি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। আদি বাড়ি শহর সংলগ্ন বাদলপুর হলেও কাঁথি শহরেই পাকাপাকি বাস। গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী হয়েও রাজনীতিতে তাঁর নয়া কদম সম্পর্কে কাউকে টের পেতে দেননি। দিনরাত এক করে দলীয় কর্মসূচি থেকে ধর্মীয় অনুষ্ঠান সব জায়গাতেই অংশ নিয়েছেন। গোটা এলাকাতেই তাঁর প্রচুর ছাত্র রয়েছে। মাস্টারমশাইকে যে ছাত্ররা সমর্থন করবে সে বিষয়ে বিজেপি নেতারা নিশ্চিত।

তবে ভোট মিটে গেলেও বসে নেই মাস্টারমশাই। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া আর খানিক বিশ্রামের পর বিজেপির বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে ঘুরে কর্মী এবং নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করছেন। এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার তরফে সিপিআই প্রার্থী প্রবীণ বামপন্থী আন্দোলনের নেতা অনুরূপ পন্ডা। এক সময় বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত তাঁর দাপটে। এখন তা অতীত। ভোটের প্রচারের সময় গোটা এলাকাতেই অধুনা বিজেপিতে যোগ দেওয়া অধিকারী পরিবারের তীব্র সমালোচনা করেছেন অনুরূপ। সংগঠন না থাকায় ভোটবাক্সে মোর্চা প্রার্থী যে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না তা বলছেন ভোটারদের একাংশ।

দক্ষি‌ণ কাঁথি কার দলে থাকবে তা নিয়ে কেউ রাজ্য সরকারের উন্নয়ন, কেন্দ্র সরকারের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলছেন। কেউ ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ এবং সাম্প্রদায়িকতার সমালোচনায় মুখর। কাঁথি শহরের বাসিন্দা পেশায় ল’ক্লার্ক উত্তম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বরাবর এখানে আমরা হিন্দু-মুসলমান এক হয়ে বসবাস করছি। তার মধ্যে হঠাৎ যে ভাবে বেগম, পাকিস্তানের প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে তাতে আমাদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ কতটা টিকে থাকবে, সন্দেহ রয়েছে।’’ কাঁথি-১ ব্লকের শসানিয়া গ্রামের বাসিন্দা কর্মহীন যুবক বিশ্বজিৎ বেরার চাকরি চাই। তাঁর কথায়, ‘‘পরিকাঠামোর উন্নয়ন কিংবা পড়াশোনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সুবিধা জুটেছে ঠিকই। কিন্তু শিক্ষা-দীক্ষায় শীর্ষে থাকা আমাদের জেলার ছেলেদের কর্মসংস্থান কোথায়! বাম এবং তৃণমূল দুই সরকারকেই তো দেখা হয়ে গিয়েছে। একবার পাঁচ বছরের জন্য অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া হোক না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE