Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Nandigram

Bengal Polls 2021: মঙ্গলে নন্দীগ্রামে মমতা, গেরুয়া দাপটের মুখে উন্নয়নকে হাতিয়ার করে লড়াইয়ের প্রস্তুতি

মঙ্গলবার মমতার সঙ্গে দেখা যেতে পারে অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীকে। মমতার পাশের কেন্দ্র চণ্ডীপুর থেকে এ বার তাঁকে প্রার্থী করেছে দল।

মমতার সফর ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে নন্দীগ্রামে।

মমতার সফর ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে নন্দীগ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ২১:৫৪
Share: Save:

এক সময়ে সেনাপতি ছিলেন যিনি, তিনিই এখন প্রতিপক্ষ। সেই শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এ বার কোমর বেঁধে নামতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারেই তাঁর নন্দীগ্রাম যাওয়ার কথা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বুধবার নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেবেন তিনি। তবে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, বুধ নয়, শুভস্য শীঘ্রম বলে মঙ্গলেও মনোনয়ন জমা দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সঙ্গে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে দেখা যেতে পারে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। দলনেত্রী পৌঁছনোর আগে সকালেই তাঁরা নন্দীগ্রাম পৌঁছে যাবেন বলে খবর। তৃণমূলের তরফে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সোমবার পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে স্থানীয় তৃণমূলের দাবি, মঙ্গলবার মমতার সঙ্গে দেখা যেতে পারে অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীকে। মমতার পাশের কেন্দ্র চণ্ডীপুর থেকে এ বার তাঁকে প্রার্থী করেছে দল। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই নন্দীগ্রামের মাটি জরিপ করতে যেতে পারেন মমতা।

তৃণমূল সূত্রে এখনও পর্যন্ত খবর, মঙ্গলবার দুপুর ২টোর পর নন্দীগ্রাম পৌঁছবেন মমতা। নন্দীগ্রামে স্টেট ব্যাঙ্কের পিছনের জমিতে হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই হেলিকপ্টার থেকে নামবেন তৃণমূল নেত্রী। তার পর পাশের জমিতে ছোট একটি সভা করবেন। সাধারণ মানুষ তাতে যোগ দিলেও সভার পরিচয় ‘কর্মিসভা’ই রাখা হয়েছে। সভার শেষে সেখানে দলের কোর কমিটির সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক রয়েছে মমতার। জেলায় ভোট পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাই ওই বৈঠকে থাকবেন। পর দিন, বুধবার নন্দীগ্রামের একাধিক ধর্মীয় স্থানে যাওয়ার কথা রয়েছে মমতার। তার পর দলীয় সমর্থকদের নিয়ে পথসভা করে হলদিয়ায় মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে নন্দীগ্রাম থেকে হলদিয়া মহকুমা শাসকের দফতর প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। ফলে সেদিন কলকাতা না-ও ফিরতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার খাতিরেই সবকিছু গোপন রাখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াবেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। তেখালির মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুব্রতকে তার ব্যবস্থাও করতে বলেছিলেন। গত শুক্রবার প্রার্থিতালিকা ঘোষণার সময় জানিয়ে দেন, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। নন্দীগ্রাম থেকেই ভোটে দাঁড়াবেন তিনি। ঘোষণা করেন, পাহাড় সফর সেরেই নন্দীগ্রাম যাবেন। মমতার ঘোষণার পরই নন্দীগ্রামে চলে আসেন সুব্রত। এলাকার সাংগঠনিক বিষয়গুলি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেন। তাতে দেখা যায়, দলের তৃণমূল স্তরের নেতাদের একাংশ এখনও বিমুখ হয়ে রয়েছেন। সবার আগে তাঁদের মানভঞ্জন করতে হবে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে নন্দীগ্রামে মমতার সফরের যাবতীয় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হলদিয়ায় শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন। তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন পূর্ণেন্দু। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের সমস্ত কর্মীকে গত ১০ বছরে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুভেন্দুর উপর ভর করে বিজেপি যদিও নন্দীগ্রাম নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। শুভেন্দু নিজেও মমতাকে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে হারাবেন বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন। রবিবার ব্রিগেডের মাঠে নরেন্দ্র মোদীও নন্দীগ্রামে দাঁড়ানো নিয়ে মমতাকে কটাক্ষ করেন। কিন্তু নন্দীগ্রাম এখনও মমতাকেই চায় বলে দাবি তৃণমূলের। জেলা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের, যিনি শুভেন্দুর খাস লোক বলে পরিচিত ছিলেন এত দিন, আনন্দবাজার ডিজিটালকে ফোনে বলেন, ‘‘গত ১০ বছর শুভেন্দুর সঙ্গে ঘুরেছি। এক সঙ্গে আন্দোলন করেছি। সেই লড়াই ভুলে গিয়ে এখন আন্দোলনে যুক্ত সকলকেই ‘জেহাদি’ বলছেন উনি। নন্দীগ্রামের মানুষ তা কখনও মেনে নেবেন না। বিজেপি-তে গিয়ে ধর্মের নিরিখে ভোট বিভাজন করতে চাইছেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের মানুষ তা হতে দেবেন না। কারণ, এটা নন্দীগ্রামের সংস্কৃতির পরিপন্থী। দুর্গাপুজো হোক বা কালীপুজো, পুজো, চাঁদা তোলা— সবেতেই থাকেন মুসলিমরা। পুজো কমিটির সদস্য হিসেবেওউৎসবে শামিল থাকেন তাঁরা। পুজো উদ্বোধনও করেন। এই সংস্কৃতি যাঁরা ভাঙতে চাইছেন, তাঁরা কখনও নন্দীগ্রামের মানুষের ভাল চাইতে পারেন না। নন্দীগ্রামের মানুষ বুঝেছেন, শুভেন্দু তাঁদের জন্য আন্দোলন করেননি। নিজের লাভ-ক্ষতি হিসেব করেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। তাঁর এই আচরণ কেউই ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।’’ বিজেপি-র স্থানীয় নেতা পবিত্র করের পাল্টা যুক্তি, ‘‘রাজ্যের সর্বত্র পরিবর্তন চাইছেন মানুষ। এই নন্দীগ্রাম থেকেই অনেক পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। তাই এখান থেকেই আবারও পরিবর্তনের সূচনা করতে চাইছি আমরা। তার জন্য মানুষের কাছে যাচ্ছি। সাড়াও পাচ্ছি।’’ তবে পবিত্র পরিবর্তন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হলেও নন্দীগ্রামে গেরুয়া শিবিরের একাংশ এখনও জয় নিয়ে সন্দিহান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE