বিক্ষোভ মিছিল। নিজস্ব চিত্র
ভোট যত এগিয়ে আসছে, তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের প্রার্থী বাছাই নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ততই সামনে আসছে। তবে এবার শুধু নিচুতলার কর্মীরাই নন, দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে মুখ খুলে রাস্তায় নামলেন পঞ্চায়েত সমিতি এমনকি জেলা পরিষদের সদস্যরাও।
ঘাস এবং জোড়াফুল আঁকা দলের পতাকা কাঁধে নিয়ে শতাধিক তৃণমূল কর্মী প্রকাশ্যে মিছিল করলেন জলঙ্গিতে। তাঁদের দাবি, জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলকে এবার প্রার্থিপদে মনোনয়ন দেওয়ার বিরোধী তাঁরা। এর আগে সাগরদিঘিতেও একই ছবি দেখা গিয়েছিল। জেলার বিভিন্ন জায়গায় ভোটের আগে এমন ঘটনা রাজ্যের শাসকদলের অস্বস্তি বাড়াবে বলেই অনুমান রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
এই বিক্ষোভ-মিছিল দেখে জলঙ্গির তৃণমূল কর্মীদের একাংশও প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, মাসখানেক পরেই শুরু বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে দলের মধ্যে যে ভাবে ‘উপদল’ তৈরির প্রবণতা মাথা চাড়া দিচ্ছে, তাতে দলের বিপদ বাড়বে বই কমবে না। দলের একাংশই দলকে হারাতে সচেষ্ট বলে তাঁদের দাবি।
অন্যদিকে, রাজ্জাকের বিরোধিতায় যাঁরা মিছিল করেছেন তাঁদের অভিযোগ, ‘‘কিছুদিন আগে সিপিএম থেকে আসা আব্দুর রাজ্জাক তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী। তাঁকে বিধানসভায় প্রার্থী করা হলে দলের ভরাডুবি অনিবার্য।’’ রবিবার জলঙ্গির দেবীপুর এলাকায় সভা করেন জলঙ্গিতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। সেখানে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রদীপ মণ্ডল থেকে জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য ইকবাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে আওয়াজ ওঠে ‘রাজ্জাক হটাও তৃণমূল বাঁচাও’।
সিপিএম প্রার্থী হিসেবে গত বিধানসভায় ভোটে লড়েছিলেন রাজ্জাক। বিধায়ক হওয়ার পর প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের তৎকালীন পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল, নতুন দলে এসে তিনি সকলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারেননি। আদি তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ‘মধুর’। জেলা পরিষদের সদস্য ইকবাল আহমেদের দাবি, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে দলে এসে তিনি দলের পুরনো কর্মীদের পাত্তা দিচ্ছেন না। এখনও তলে তলে বাম-কংগ্রেস জোটকে সাহায্য করছেন। রাজ্জাককে প্রার্থী করলে ঐতিহাসিক ভুল হবে। দল যাতে সেই ভুল না করে, সেই বার্তা দিতেই আমরা মিছিল করেছি।’’ যদিও বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, ‘‘কতিপয় নেতা যাঁরা দলের ভাল-মন্দে থাকেন না, কোনও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন না, তাঁরাই আমার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন। কে প্রার্থী হবেন, সেটা ঠিক করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁকেই প্রার্থী করবেন।’’
শাসকদলের এই আকচাআকচি দেখে আড়ালে মুচকি হাসছেন বিরোধীরা। জলঙ্গি ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার দাবি, ‘‘এখন একটু একটু করে তৃণমূল নেতাদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিন যত এগোবে, ততই তা বেআব্রু হয়ে পড়বে।’’ সিপিএমের জলঙ্গি এরিয়া কমিটির সম্পাদক ইমরান হোসেন বলছেন, ‘‘সিপিএমের টিকিটে জিতে যেভাবে আব্দুর রাজ্জাক ভোটারদের সঙ্গে ‘বেইমানি’ করেছেন, তাতে এটা তাঁর প্রাপ্য। তাঁর এখনও আরও অনেক অপমান হজম করা বাকি আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy