Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

দাঙ্গাবাজ, হোঁদল কুতকুত, কিম্ভূত কিমাকার: দিদির ‘কথাঞ্জলি’তে বিদ্ধ মোদি-শাহ

সোমবার মমতাকে একের পর এক তোপ দেগেছিলেন মোদী। মমতা কী উত্তর দেন, তা নিয়ে আগ্রহ ছিল।

নাম না করে মোদী-শাহ জুটিকে আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

নাম না করে মোদী-শাহ জুটিকে আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:১৬
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হুগলির সাহাগঞ্জে সভা করে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরে সেই মাটিতে দাঁড়িয়েই মোদী-শাহ জুটিকে নিশানা করে আক্ষরিক অর্থেই ‘শব্দবাণ’ প্রয়োগ করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মমতা বিঁধেছেন বাছা বাছা বিশেষণে। কখনও এক জনকে ‘হোঁদল কুতকুত’ তকমা দিয়েছেন। পরক্ষণেই অন্য জনের উদ্দেশে বলেছেন ‘কিম্ভূত কিমাকার’। মমতার এই বেনজির আক্রমণ প্রত্যাশিত ভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে বিজেপি শিবিরে। তৃণমূল নেত্রীর সভা শেষ হতেই তাঁর ‘শব্দচয়ন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।

সোমবার সাহাগঞ্জে ডানলপের মাঠের জনসভা থেকে মমতাকে নিশানা করে একের পর এক তোপ দেগেছিলেন মোদী। স্বাভাবিক ভাবেই সেই মাঠে দাঁড়িয়ে মমতা কী উত্তর দেন, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। মোদী-মমতার জনসভার মাঝের সময়ে গঙ্গা দিয়ে আরও কিছু জল যেমন বয়ে গিয়েছে, তেমনই তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক আবর্তও। কয়লা এবং গরুপাচার কাণ্ড নিয়ে মঙ্গলবার মমতার ভ্রাতুষ্পুত্র তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরাকে সিবিআই-এর প্রশ্নপত্রের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ঠিক তেমনই দিনের শেষে ‘খেলা’ ঘুরে গিয়েছে কোকেন-কাণ্ডে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহের গ্রেফতারে।

এই আবহে মমতার বক্তব্যের অভিমুখ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল সব মহলেই। সেই অসংখ্য প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে মোদী-শাহ জুটিকে এ দিন ঝাঁঝালো আক্রমণ করেন মমতা। বন্ধ হয়ে যাওয়া ডানলপ কারখানা থেকে কিছুটা দুরে অবস্থিত মঞ্চ থেকে মমতা অভিযোগ করেন, ‘‘পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে এত মামলা। অথচ তার বাড়িতেই বিজেপির নেতারা থাকেন। মজুরদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে শরৎ বসু রোডে রুইয়ার বাড়িতে অতিথি হন বিজেপি নেতারা।’’

আক্রমণের সেই ঝাঁঝ বজায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতার তোপ, ‘‘তৃণমূলকে উনি তোলাবাজ বলেন। আপনি কী? আপনি তো সবচেয়ে বড় দাঙ্গাবাজ, ধান্দাবাজ। গ্রামের গরিব মানুষ ৫ টাকা-১০ টাকা তুললে তাকে আপনারা তোলাবাজ বলেন। আর যাঁরা দেশকে দেশ বিক্রি করে দেন, কারখানাকে কারখানা বিক্রি করে দেন। কোটি কোটি টাকা কাটমানি খান তাঁরা কী? আপনারা কি ক্যাটমানি খান না ওটা র‌্যাটমানি? গরিবরা খেলে হয় কাটমানি। আর আপনাদের মতো কোটিপতিরা খেলে হয় র‌্যাটমানি। নেংটি ইঁদুরের দল সব!’’

বুধবার নাম না করে মোদী-শাহ জুটিকে নিয়ে একের পর এক ‘বিশেষণ’ প্রয়োগ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এক জন দানব, আর এক জন দৈত্য। এক জন রাবণ আর এক জন দানব। দু’জনে মিলে দেশ চালাচ্ছে।’’ তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্য, এখন দেশের দু’টো নেতা। এর পরই তিনি যোগ করেন, ‘‘একটা হলেন হোঁদল কুতকুত। আর একটা নেতা হলেন কিম্ভূত কিমাকার। আমি জানি না এর হিন্দি বা ইংরিজি কী!’’ এর পর বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এক একটা লুঠেরা, কারও কান কাটা, কারও নাক কাটা, কারও চোখ কাটা, কারও জিভ কাটা, কারও হাত কাটা, কারও পা কাটা।’’

মমতার ওই বক্তব্যের পরেই ‘বঙ্গসংস্কৃতি’র আবেগে ঘা দেওয়ার চেষ্টা করে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাবুল। লিখেছেন, ‘ছিঃ !!! এই একজন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা !! এই ভাষা বলতে আপনার যে লজ্জা করে না, তা আমরা বহুদিন আগেই দেখেছি, জেনেছি। কিন্তু আমাদের তো লজ্জা আছে, বাঙালির তো আত্মভিমান আছে, লজ্জাও আছে !! সারা পৃথিবীর বাঙালির মাথা আপনি হেঁট করে দিচ্ছেন !! আপনি আবার নিজেকে 'বাংলা গর্ব' বলেন’?

তবে এর আগেও পৈলানের জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেহারা নিয়ে কটাক্ষ করে মমতা বলেছিলেন, ‘‘অত ফোলা ফোলা চেহারা, বেশ নাদুস-নুদুস, সুন্দর-সুন্দর দেখতে, ফানুস-ফানুস চেহারা, ফাটুস-ফুটুস চেহারা, আমাদের মতো এসে লড়াই করো! যাও গিয়ে বাড়িতে বাসন মাজো। যাও গিয়ে ঘর মোছো। যাও গিয়ে ডান্ডার সঙ্গে লড়াই করো। যাও গিয়ে বন্দুকের সঙ্গে লড়াই করো। গুলি বন্দুকের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি মনে রাখবেন।’’ কিছু দিন আগে ‘দিদি’র শব্দবাণে বিদ্ধ হয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডাও। তাঁকে ‘নাড্ডা, ফাড্ডা, চাড্ডা, গাড্ডা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE