Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

ভিতু নই, আজ দেখাবে কি পুলিশ

শেষ দফার ভোটে ভরসা সেই বাইক বাহিনীতেই। শাসকের নয়, নির্বাচন কমিশনের। বৃহস্পতিবার ভোটে টহলদারি নিশ্ছিদ্র করতে মোটরবাইকে সওয়ার হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রথম দফার ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরে নীরব সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল ভূরি ভূরি।

পূর্ব মেদিনীপুরের এসপি অলোক রাজোরিয়া। (ডান দিকে) কোচবিহারের এসপি সুনীলকুমার যাদব। — নিজস্ব চিত্র।

পূর্ব মেদিনীপুরের এসপি অলোক রাজোরিয়া। (ডান দিকে) কোচবিহারের এসপি সুনীলকুমার যাদব। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৫:০০
Share: Save:

শেষ দফার ভোটে ভরসা সেই বাইক বাহিনীতেই। শাসকের নয়, নির্বাচন কমিশনের।

বৃহস্পতিবার ভোটে টহলদারি নিশ্ছিদ্র করতে মোটরবাইকে সওয়ার হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রথম দফার ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরে নীরব সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল ভূরি ভূরি। শেষ বেলায় লাগোয়া জেলায় আর কোনও রকম ঢিল দিতে চাইছে না কমিশন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘এরিয়া ডমিনেশন’ কত দূর সফল হবে, সেটা অবশ্য নির্ভর করছে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতার উপরেই। সুতরাং শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাট়া ঘুরেফিরে উর্দিরই। গত তিন দফার ভোটে পুলিশ যে সুনাম অর্জন করেছে, তাতে আমজনতার প্রত্যাশার পারদও চড়চড়িয়ে উঠছে। এখন হঠাৎ গজিয়ে ওঠা মেরুদণ্ডটি পুলিশ সোজাই রাখবে, নাকি মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি শুনে ফের টেবিলের তলায় ঢুকবে, পূর্ব মেদিনীপুর আর কোচবিহারে আজ তারই পরীক্ষা।

প্রথম দফার ভোটে বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোলের শিকার হয় পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ প্রায় গোটা জঙ্গলমহল। প্রায় সাড়ে পাঁচশোর কাছাকাছি অভিযোগ জমা পড়ে কমিশনের ঘরে। নীরবে সন্ত্রাস চালিয়ে বহু জায়গায় ভোটারদের ভোট দিতে যেতে বাধা যেমন দেওয়া হয়েছিল, তেমনি মুড়ি-চানাচুর, পানীয় বা নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগও ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। প্রহৃত হন একাধিক সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, পূর্ব মেদিনীপুরেও ব্যাপক ভোট লুঠের ছক কষেছে শাসক দল। বিস্তীর্ণ এলাকায় ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বাড়িতে আটকে রাখা হতে পারে। বুধবার কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা দাশমুন্সিরা মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার নসীম জৈদীর সঙ্গে দেখা করে জানান, পূর্ব মেদিনীপুরের প্রভাবশালী তৃণমূল সাংসদ এ জন্য সক্রিয় রয়েছেন।

শেষ দফায় তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কমিশন কর্তারা। এ দিন রাত থেকেই সিল করে দেওয়া হয়েছে ওড়িশা সীমান্ত। কমিশন জানিয়েছে, ভোটের দিন গাড়ি করে রুটিন টহলের পাশাপাশি দেখা যাবে বাইকে বসা নিরাপত্তা বাহিনীকে। যাদের কাজ হবে, প্রয়োজনে গ্রামের তস্য গলিতেও পৌঁছে যাওয়া। কমিশনের একটি সূত্র বলছে, গাড়ি ঢুকতে পারে এমন এলাকাতেই সাধারণত কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দেয়। বাহিনী এলেই দুর্বৃত্তরা আনাচে-কানাচে লুকিয়ে পড়ে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই এ বার মোটরবাইকে টহল দিতে বলা হয়েছে।

উল্টো দিকে পুলিশের ভাবমূর্তি ফেরানোর উদ্দীপনাকে চাপা দিতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে তৎপরতার অন্ত নেই। এতে কোচবিহার-পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশের উপরে চাপ বিলক্ষণ বেড়েছে। নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তোপ দেগেছেন। রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচারসভায় নিজের বাহিনীকেই কার্যত হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি। তবে পুলিশ কর্তাদের অনেকে এই শাসানিতে শাপে বর দেখছেন। ‘‘ওঁর কথাবার্তাকে ফোর্সের অনেকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে,’’ বলছেন কোচবিহারের এক অফিসার। পূর্ব মেদিনীপুরে এক অফিসারের আক্ষেপ, ‘‘এমনিতেই আমাদের পরিকাঠামো নেই, থাকা-খাওয়ার ঠিক-ঠিকানা নেই, ডিএ-ও নেই। আছে শুধু রুলিং পার্টির মাতব্বরির গুঁতো। এর উপরে সিএম যা বললেন, তাতে তো গায়ে উর্দিই রাখা উচিত নয়!’’ অতএব পেশার ইজ্জত টিকিয়ে রাখার তাগিদে ওঁরা আজ ময়দানে নামতে মরিয়া।

পারবেন তো?

প্রশ্ন শুনে হেসেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। তাঁর জবাব, ‘‘চাপের কিছু নেই। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’ বছর দেড়েক আগে ‘কেষ্ট’র (বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল) জেলায় এসপি থাকাকালীনই অলোক টের পেয়েছিলেন, পুলিশের সামনে ‘কঠিন’ সময়! বেফাঁস কথাটা বলে রাজরোষেও পড়েছিলেন। ছ’মাসের মধ্যে বদলি হতে হয়। ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্বে এসেও তিনি মাথা উঁচু রেখেছেন।

কী রকম? হলদিয়ায় তোলার দাবিতে ব্যবসায়ীকে মারধরের নালিশ পাওয়ামাত্র অভিযুক্ত তৃণমূল শ্রমিক নেতা খোকন দাসকে গ্রেফতার করে রাজোরিয়ার পুলিশ। জুলাইয়ে তমলুকে তৃণমূলী গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ সহিদুল খানকে ধরতে পিছপা হননি। রামনগরের সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের উপরে হামলায় অভিযুক্ত তিন তৃণমূল কর্মীকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তর কাঁথির কানাইদিঘিতে ঘরছাড়া বাম সমর্থকেরা সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন পুলিশের সাহায্যে। তাঁরা কেমন আছেন, এসপি গিয়ে দেখে এসেছেন! প্রশাসনের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের ‘টার্গেট’ রাজোরিয়াই। তবে বুধবার জেলার বিভিন্ন থানার ওসি, ইনস্পেক্টরদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, বাহিনী কিন্তু একজোট।

ছক্কা হাঁকাতে কোচবিহারও কোমর বাঁধছে। এসপি সুনীল যাদবের কথায়, ‘‘কমিশনের নির্দেশ মেনে চলছি। ভোটের দিন সর্বত্র প্যারামিলিটারি থাকবে। আমরাও তৈরি।’’ জেলা পুলিশের এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘আমাদের উপরতলা আমাদের বলেছে সোজা ব্যাটে খেলতে। তা-ই খেলব। কোনও বল গলতে দেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE