Advertisement
E-Paper

কোথায় গেল কামরুজ্জামান

সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি, দু’দিনের না কাটা দাড়ি, পাড়ায় ঘুরছেন তিনি। স্থানীয় এক সিপিএম নেতা বলছেন, ‘‘মুরগি-ছানাদের চালের গুঁড়ো দিচ্ছেন। এই দেখে এলাম!’’ তবু কামরু বাড়ি নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০০
সৌমিকের সভায় কামরুজ্জামান। ডান দিকে, বিচারের প্রতীক্ষায় তহিদুলের মেয়ে তহমিনা। -নিজস্ব চিত্র

সৌমিকের সভায় কামরুজ্জামান। ডান দিকে, বিচারের প্রতীক্ষায় তহিদুলের মেয়ে তহমিনা। -নিজস্ব চিত্র

সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি, দু’দিনের না কাটা দাড়ি, পাড়ায় ঘুরছেন তিনি। স্থানীয় এক সিপিএম নেতা বলছেন, ‘‘মুরগি-ছানাদের চালের গুঁড়ো দিচ্ছেন। এই দেখে এলাম!’’ তবু কামরু বাড়ি নেই। দোড়গোরা থেকেই বাড়ির লোক ফেরাচ্ছেন, ‘ঘরে নাই!’ পুলিশও আড়মোড়া ভেঙে বলছে, ‘‘আগে পেতে হবে তো!’’

শুক্রবার সকালে থেকেও নেই কামরু, ওপফে কামরুজ্জুমান।

ডোমকলের হাওয়ায় ভাসছে, কামরুজ্জামানকে ধরা যাবে না। শাক দলের পুলিশ তাঁর সহায়। কেননা যুব তৃণমূল নেতা তথা প্রার্থী সৌমিক হোসেন তাঁর সহায়। এমনকী তিনিই তাঁকে আশ্রয় দিয়ে লুকিয়ে রেখেছেন বলে সন্দেহ। রাতে সৌমিক অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ওর কোনও দোষ ছিল না। আর ও কি বাচ্চা ছেলে যে আমি শেল্টার দেব?’’

ভোট চলাকালীন হিংসার প্রথম বলি হয়েছিলেন ডোমকলের তহিদুল মণ্ডল। মাঝবয়সী ওই সিপিএম কর্মীর খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা। বৃহস্পতিবার ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বুথ থেকে সামান্য দূরে ওই ব্যক্তিকে বোমা মেরে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতের পরিবারের তরফে ডোমকলের হরিডোবা এলাকার তৃণমূল নেতা কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু অভিযোগ, ডোমকল শহর তৃণমূলের সভাপতি হওয়ায় কামরুজ্জামানকে পাকড়াও করতে পুলিশ অহেতুক অনীহা দেখাচ্ছে। ডোমকলের সিপিএম প্রার্থী আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘প্রকাশ্য রাস্তায় আমাদের কর্মীকে খুন করেও ওই তৃণমূল নেতা পার পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশ তাকে ধরছে না। এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে নামব।’’ জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘আমরা যেখানে দেহটি পেয়েছি সেটা বুথ সেটা বুথ থেকে বেস কিছুটা দুরে। তবে ওই ঘটনার তদন্ত চলছে, অভিযুক্তরা পলাতক তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’’

বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে তহিদুল বুথে যাচ্ছিলেন। সেই সময় রাস্তার ধারের বাশ বাগান থেকে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁকে এলোপাথারি কোপানো হয়। শুক্রবারও ওই গ্রামে শোকের ছায়া ছিল। নিহতের পরিজনেরা এই অপমৃত্যু মেনে পারছেন না। শোকের মাঝেও এ দিন নিহতের স্ত্রী নিয়ে গেলেন বুথের সামনে। দেখালেন, বিদ্যুতের ঘুঁটির সামনে কী ভাবে তাঁর স্বামীকে মেরেছে তৃণমূলের লোকজন। দেখালেন ঘুঁটিতে লেগে থাকা শুকনো রক্তের দাগ। বুথের অদূরের ওই ঘটনাস্থলে পাড়ার মহিলাদের জটলা জমে উঠেছে। সেই ভিড় একজন বললেন, ‘‘কামরুজ্জামান লোকজনের সামনেই বোমা মেরে তহিদুলকে খুন করল। তবু পুলিশ তাকে ধরছে না।’’ কে এই কামরুজ্জামান? বরাবরই সে হরিডোবা এলাকায় পঞ্চায়েত স্তরে রাজনীতি করে আসছে। বাম জমানায় সে কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িত ছিল। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পঞ্চায়েতের প্রধান হন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে স্ত্রীকে দাঁড় করান। তাঁর স্ত্রী প্রধান হন। মাস ছয়েক আগে সে ঘনিষ্ট কয়েকজন সাগরেদকে নিয়ে মান্নান হোসেনের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেয়। শাসকদলে যোগ দিয়ে কামরুজ্জামানের দাপট আরও বেড়ে ওঠে। উপরে ভগবান, নীচে প্রধান (কামরুজ্জামান)—এই চোখেই তাঁকে দেখতে থাকেন এলাকার লোকজন। তৃণমূলে যোগ দিয়ে অপরাধ জগতে হাত পাকাতে থাকে সে। এলাকার ডানপিটে যুবকেরা অষ্টপ্রহর তাকে ঘিরে থাকত। ইটভাটার মালিক থেকে ডোমকলে বাড়ি সঙ্গে গাড়ি ব্যবসা, সব মিলিয়ে ঘুরপথে অল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠা কামরুজ্জামান অচিরেই মান্নান-পুত্র সৌমিক হোসেন ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন। সৌমিকের ভোট প্রচারে তাকে প্রায়ই দেখা যেত। বিরোধীদের দাবি, সৌমিকের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সূত্রে কামরুজ্জামান আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মাস কয়েক আগে অস্ত্র-সহ সে ধরা পড়ে। পরে আদালত আত্মসমর্পণ করে। এলাকার লোকজন জানাচ্ছেন, বছর পাঁচেক আগে কামরুজ্জামান ছিল গোবেচারা গ্রাম্য মানুষ। কিন্তু শাসকদলে যোগ দিয়েই তার ভোল পাল্টে যায়। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, তৃণমূলের নেতা হওয়ার পর কামরুজ্জামানের চলন-বলন পুরো পাল্টে গিয়েছিল।

জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য দুর্দিনে দলীয় নেতার পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘কামরুজ্জামানকে ফাসানো হচ্ছে। সে দক্ষ সংগঠক। ওই এলাকার মানুষ তাকে ভালবাসে। তার জন্যই বিরোধীরা এখন এমনটা করছে। পুলিশ তদন্ত করলে গোটা বিষয়টি সামনে আসবে।’’ ডোমকলের কংগ্রেস নেত্রী শাওনী সিংহরায় বলেন, ‘‘এমন কামরুজ্জামানকে আমরা দেখিনি। তৃণমূলে পা রেখেই ওর এই পরিবর্তন।’’ এই কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে ডোমকলের চতুর্দিকে।

Domkol Kamarujjaman Tahidul
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy