রাজ্যের স্কুলগুলিতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ২০১৬-র চাকরিহারাদের সঙ্গে নতুন প্রার্থীদের আবেদনও গ্রহণ করছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই প্রক্রিয়া শুরুর ১২ দিনের মধ্যে এক লক্ষের কিছু বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই সংখ্যাই তুলছে বেশ কিছু প্রশ্ন। তবে কি সরকারি স্কুল শিক্ষকতায় আস্থা হারাচ্ছেন রাজ্যের বাসিন্দারা? অতীতের দুর্নীতির কারণে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে আবেদন জমা দিতে ভয় পাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা?
এ বার নবম ও দশমে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের আবেদনের সংখ্যা সবার্ধিক। স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রের খবর, ওই বিভাগের জন্য এখনও পর্যন্ত ৬৫ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট আবেদনের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ পাঁচ হাজার।
২০১৬ সালের পর প্রায় ন’বছরের মাথায় ফের আদালতের নির্দেশে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়েছে রাজ্যে। আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর ১২ দিন অতিক্রান্ত। আবেদনের সংখ্যা পেরিয়েছে মাত্র এক লক্ষের গণ্ডি। ওয়াকিবহাল মহল দাবি করেছে, এই আবেদনের সংখ্যা রীতিমতো কম।
এই বিষয়ে নারায়ণদাস বাঙুর স্কুলে প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “দুর্নীতি ও অনিশ্চয়তার কারণে আবেদন জমা দেওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের মনে। তা ছাড়াও নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। ফলে ১২ দিনের আবেদনে সে ভাবে সাড়া দেননি চাকরিপ্রার্থীরা।”
হিসাব বলছে, ২০১৬ সালে কয়েক গুণ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন এসএসসি-র জন্য। গত ৪ এপ্রিল এক সাংবাদিক বৈঠকে এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার নিজেই জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালে পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন প্রায় ২৬ লক্ষ প্রার্থী। এঁদের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছিলেন প্রায় ২২ লক্ষ। তার মধ্যে ১ লক্ষ ৪১ হাজার নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের জন্য দেড় লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এ বার এসএসসি পরীক্ষায় বসার আবেদন করার জন্য হাতে সময় রয়েছে আরও ১১ দিন। কী প্রভাব পড়বে, তার দিকে তাকিয়ে শিক্ষানুরাগী মহল।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী দাবি করেছেন, সরকার এবং এসএসসির উপর সম্পূর্ণ আস্থা হারানোর জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাঁর কথায়, “যোগ্য আন্দোলনকারীরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা ফের পরীক্ষা দিতে চান না। এটা তাঁদের আন্দোলনের ফল। আর এই দুর্নীতির দায় সম্পূর্ণ এসএসসি এবং সরকারের।”
স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রের খবর, ২০২৫ এসএলএসটি পরীক্ষায় নতুন প্রার্থীদের পাশাপাশি, কর্মরত এবং চাকরিহারা শিক্ষকদেরও একটি অংশের আবেদন জমা পড়েছে। উল্লেখ্য, আবেদন গ্রহণের শেষ দিন ১৪ জুলাই।
১৬ জুন রাত সাড়ে ১০টার পর অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে জটিলতার কারণে ২৪ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে কমিশন। এ ছাড়াও বেশ কিছু প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে ২২ থেকে ২৪ জুন— তিনদিন পোর্টাল বন্ধ রাখা হয়েছিল। যার ফলে আবেদন জমা দিতে পারেননি অনেক প্রার্থীই। সে ক্ষেত্রে আবেদনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে কি না, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন।
শূন্যপদ ক’টি?
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নবম-দশম এবং একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদের তালিকা স্কুল সার্ভিস কমিশনকে দিয়েছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী, নবম-দশম স্তরে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলিতেই সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ রয়েছে। সব মিলিয়ে ২৩ হাজারেরও বেশি শূন্যপদের বিষয়ভিত্তিক তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক শূন্যপদ রয়েছে ভৌতবিজ্ঞানে, ৪,৩৫২টি। এ ছাড়া, জীবনবিজ্ঞানে ৩,৯১১টি, গণিতে ৩,৯২২টি, ইতিহাসে ২,১৪৯টি, ভূগোলে ১,৮৪০টি, ইংরেজিতে ৩,৩৩৬টি এবং বাংলায় ৩,০২৪টি শূন্য পদ রয়েছে।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে ১২ হাজারেরও বেশি শূন্যপদ রয়েছে। ৩৫টি বিষয়ের মধ্যে সব থেকে বেশি শূন্যপদ রয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, ১,৩৭৩টি। এ ছাড়াও কিছু কিছু বিষয়ে এক হাজারেরও বেশি শূন্যপদ রয়েছে। যেমন, রসায়নে ১,১৯৪টি, এডুকেশনে ১,১৪৭টি, জীববিদ্যায় ৯১৯টি, গণিতে ৭৮৫টি, পদার্থবিদ্যায় ৮৮১টি, ইংরেজিতে ৫৯৪টি, অর্থনীতিতে ৫০৬টি, ইতিহাসে ৫৭২টি এবং বাংলায় ৩৯০টি শূন্যপদ রয়েছে।