উচ্চশিক্ষার জন্য ‘বিগ ফোর’-এর সঙ্গে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এশিয়ার দেশগুলি। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং কানাডার পাশাপাশি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াকেও বেছে নিচ্ছেন বহু পড়ুয়াই। তবে, পড়াশোনা শেষ করার পরে তাঁরা চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন কি?
বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চিন, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলিতে ১,৩০,০০০ ভারতীয় পড়ুয়া উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছে। গ্লোবাল এমপ্লয়বিলিটি র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, এই সমস্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রথম ১০০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর, দি ইউনিভার্সিটি অফ টোকিয়ো, পেকিং ইউনিভার্সিটি, টোকিয়ো ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, কিয়োটো ইউনিভার্সিটি-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলি।
দক্ষিণ কোরিয়া:
২০২৫-এ দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রযুক্তিবিদ্যা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগে নতুন করে ১,৭১,০০০ শূন্যপদে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে, সম্প্রতি এ দেশের স্থানীয় তরুণ কর্মীদের সংখ্যাও সে ভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিদেশের পড়ুয়াদের চাকরির জন্য প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যদিও তাঁরা পার্ট-টাইম স্টাডি ভিসা (ডি-২) এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন জব সিকার ভিসা (ডি-১০) আবেদনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এই সমস্ত ভিসা মঞ্জুর হলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বল্পসময়ের চুক্তিতে কিংবা স্থায়ী পদে কাজের সুযোগ মেলে। ডিগ্রি অর্জনের পরে সে দেশের সরকার চাকরি খোঁজার জন্য ছ’মাস থেকে এক বছর সুযোগ দেয়। চাকরি পাওয়ার পরে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে পারলে স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসা (ই-৭) এবং পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি (এফ-৫) পেতে পারেন পড়ুয়ারা।
জাপান:
জাপানে প্রযুক্তি, কারিগরিবিদ্যা কিংবা কৃত্রিম মেধা, গেম ডেভেলপমেন্ট-এর মতো বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিলেও সে দেশে চাকরির সুযোগ পেতে যথেষ্ট সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় বিদেশের পড়ুয়াদের। তবে, ওই দেশে শিক্ষকতার জন্য আলাদা করে বিদেশি পড়ুয়াদের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। বিশেষ কোনও দক্ষতা থাকলে তাঁদের জন্য স্পেসিফায়েড স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসা-র ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে, চাকরির সমস্যা দূর করতে এবং বিদেশের পড়ুয়াদের নিয়োগের আওতায় আনার জন্য জাপান সরকার নতুন ভিসা নীতি প্রণয়ন করতে চলেছে।
তাইওয়ান:
মূলত বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম তৈরি, বায়োটেকনোলজি, ইনফরমেশন টেকনোলজি সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পরিচিত ওই দেশ। তাই এই সমস্ত ক্ষেত্রে পড়াশোনার পর চাকরির সুযোগ রয়েছে যথেষ্ট। এ ছাড়াও তাইওয়ান সরকারের তরফে ডিগ্রি অর্জনের পর চাকরি খোঁজার জন্য আলাদা করে ভিসা মঞ্জুর করা হয়ে থাকে। চাকরি পাওয়ার পরে আলাদা করে গোল্ড কার্ড-এর জন্যও আবেদনের সুযোগ পেয়ে থাকেন ভারতীয় পড়ুয়ারা।
চিন:
স্বাস্থ্য পরিষেবা, কৃত্রিম মেধা, কারিগরিবিদ্যার মতো একাধিক বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতীয় পড়ুয়ারা চিনে পাড়ি দেন। সে দেশে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়ে দক্ষ এবং মেধাবী পড়ুয়ারা কে-ভিসার সাহায্যে চাকরির সুযোগ পেয়ে যান। এ ছাড়াও সাংহাই-তে থেকে কাজের জন্য চিনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরে সরাসরি ওয়ার্ক ভিসা আবেদনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এর সঙ্গে পড়ুয়াদের তৈরি করা স্টার্টআপ-এর জন্য চিন সরকার বিশেষ আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে।
সিঙ্গাপুর:
২০২৪-এর পর থেকে সিঙ্গাপুরে আর্থিক পরিষেবা, স্বাস্থ্য এবং সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রগুলিতে চাকরির সুযোগ বেড়েছে। বর্তমানে সে দেশে ৫১.৯ শতাংশ স্নাতকেরা ডিগ্রি অর্জনের পরে চাকরি পান। তবে, বিদেশি পড়ুয়ারাও ওই দেশে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। এখানে চাকরির জন্য আলাদা করে মিনিস্ট্রি অফ ম্যানপাওয়ার-এর অনুমোদিত ওয়ার্ক পাস-এর জন্য আবেদন করতে হয়। এ ছাড়াও স্টুডেন্ট পাস থাকলে স্বল্প সময়ের চুক্তিতেও কাজ করতে পারবেন পড়ুয়ারা।
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং কানাডা-র মতোই এশিয়ার দেশগুলিতে ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। তবে, মেধাবী পড়ুয়ারা সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া-তে স্কলারশিপ কিংবা ফেলোশিপের সুযোগও পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে, উচ্চশিক্ষার পরে গবেষণা কিংবা চুক্তিভিত্তিক চাকরিও দেওয়া হয় উত্তীর্ণদের।