Advertisement
E-Paper

আড্ডা হল মজারু

ব্যোমকেশ-এর বয়স হলেও আকর্ষণ আজও কমেনি। ‘শজারুর কাঁটা’ দেখে বললেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, কঙ্কনা সেন শর্মা, কৌশিক সেন। ছবি শেষে রাতের আড্ডায় মুখোমুখি স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।ব্যোমকেশ-এর বয়স হলেও আকর্ষণ আজও কমেনি। ‘শজারুর কাঁটা’ দেখে বললেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, কঙ্কনা সেন শর্মা, কৌশিক সেন। ছবি শেষে রাতের আড্ডায় মুখোমুখি স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০১:৩০
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

আবীর চট্টোপাধ্যায় থেকে সুশান্ত সিংহ রাজপুত— ব্যোমকেশের এমন ভরা যৌবনে বৃদ্ধ ব্যোমকেশকে লোকে নেবে কি?

কঙ্কনা: আমরা না বড্ড বেশি ‘ইয়ুথ অবসেসড্’ হয়ে যাচ্ছি। সিনেমা, গান, ফ্যাশন সব কিছুকেই নতুন প্রজন্মের পছন্দের মতো হতে হবে কেন? বরং ‘শজারুর কাঁটা’ দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল এই ব্যোমকেশটা একদম অন্য রকম। এখানে আমরা ওই অবসেসন থেকে বেরিয়ে একজন পরিণত, ফ্রেশ ব্যোমকেশকে পাচ্ছি। আর এটাই এই ছবির ইউএসপি।

কৌশিক: একদমই তাই। শরদিন্দুর রাখাল-এরও যে বয়স হয়, এই ছবিটা দেখতে দেখতে সেটা বুঝলাম।

ধৃতিমান: অজিতও তাই। আর শুধু চরিত্র নয়, আমার মনে হয় ‘শজারুর কাঁটা’ ষাট-সত্তর দশকের বাংলা ছবির ওই মেজাজটাকে ফিরিয়ে আনল। এই নিউ এজ বাংলা ছবির পাশে এই পুরনো ধাঁচটাও থাক না। লোকের সেটা ভাল লাগবে বলেই আমার মনে হয়। তবে ছবিটা দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল ব্যোমকেশের কোনও বয়স হয় না।

বয়স নয়, তা হলে সময়কেই বড় করে দেখা হয়েছে?

কৌশিক: ভাবুন তো ছবিতে যে অন্ধকার রাতের কথা বারবার বলা হচ্ছে, সেটা তো আজকের কলকাতার অসুখটাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে। আগে কলকাতায় রাত ১২-টা কোনও ব্যাপারই ছিল না। আর আজ ৯-টাতেই তো কেমন গা ছমছম করে।

ধৃতিমান: শহরের গভীর অসুখ আজ। আর এই অসুস্থ সময়ে জন্ম নেয় একজন সিরিয়াল কিলার।

কঙ্কনা: ছবিতেও সেই ফিল-টা রাখা হয়েছে। সত্যি! কলকাতাও কেমন বদলে গেল! কলকাতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে আগে এত কথা উঠতই না।

এই সময়কে ধরতে গিয়ে ছবিটা কি অনেক দীর্ঘ হল? হল থেকে বেরিয়ে দর্শকের অনেকেই বলছিলেন ছবিটা বেশ দীর্ঘ...

ধৃতিমান: মনে হতে পারে ছবিটা দীর্ঘ। আসলে কী জানেন, এখন বাংলা ছবির দর্শক বেশিক্ষণ ধরে ছবি দেখতে আর পছন্দ করেন না। মানুষের ধৈর্যটাই তো কমে গিয়েছে।

কৌশিক: ধৃতিমানদার কথা মেনে নিলেও একটা কথা না বলে পারছি না, ছবির চরিত্র আর অভিনয়ের ভিতরে যদি দর্শক ঢুকে যান, তা হলে কিন্তু ছবিটা দীর্ঘ মনে হবে না। ছবিতে কার অভিনয় ভাল লাগল আপনার?

কৌশিক: কঙ্কনা আর ইন্দ্রনীলের নাটকের দৃশ্যটা খুব নাড়া দিয়ে গেল। ইন্দ্রনীল কিন্তু দারুণ অভিনয় করেছে। ওকে এই আড্ডাটায় মিস করছি।

কঙ্কনা: হ্যাঁ, সত্যি। আমরা শ্যুট চলাকালীনও খুব মজা করেছি।

কী রকম মজা?

কঙ্কনা: প্রথম দিকে তো অভিনয় নিয়ে একটু টেন্সড থাকতাম আমি। আমার মনে আছে, প্রথম নন্দিনীর চরিত্রের যে শটটা দিয়েছিলাম, সেটা দেখে শৈবালদাও বোধহয় ভেবেছিল, ‘এই রে, কী হবে!’ কিন্তু ওই টেনশনটা কাটানোর জন্য আমি আর ইন্দ্রনীল সারাক্ষণ ক্যুইজ করে যেতাম। বেশ রিল্যাক্সড্ থাকতাম ওই খেলায়।

ধৃতিমান: কঙ্কনা যাই বলুক, নন্দিনী আর দীপা দু’টো চরিত্রেই ও দারুণ করেছে।

কঙ্কনা: (একটু অস্বস্তিতে) আরে কী হচ্ছে! কেবল আমার অভিনয়ের কথা আসছে কেন? এটা তো দারুণ একটা টিমওয়ার্ক।

আচ্ছা, আপনি কি জানতেন দীপা চরিত্রটি আপনি যে করতে রাজি হবেন সেটা পরিচালক শৈবাল মিত্র ভাবতেই পারেননি? এবং উনি রাধিকা আপ্তের কথাও ভেবে রেখেছিলেন?

কঙ্কনা: না, রাধিকা আপ্তের কথা জানতাম না। তবে শৈবালদা ভেবেছিলেন আমি ‘না’ বলতে পারি।

তা হলে রাজি হলেন কেন?

কঙ্কনা: দেখুন শরদিন্দুর চরিত্র করার একটা ইচ্ছে আমার ছিল। বাঙালি দর্শক শরদিন্দু, গোয়েন্দা খুব পছন্দ করেন। এই ছবির সে জন্যই একটা তৈরি দর্শক আছে। দ্বিতীয়ত, ছবির অন্যান্য চরিত্রে এত শক্তিশালী অভিনেতারা আছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করার লোভটাও আমার ষোলো আনা ছিল।

আপনি কি তা হলে অভিনেতা আর ব্যানার দেখে ছবি করেন? সেই কারণেই কি মেঘনা গুলজারের ছবি করলেন?

কঙ্কনা: ব্যানার না হলেও, কার সঙ্গে অভিনয় করছি সেটা তো ভাববই। মেঘনা গুলজারের ছবিটা প্রযোজনা করছেন গুলজার। বিশাল ভরদ্বাজের চিত্রনাট্য। ইরফান খানও আমার সঙ্গে অভিনয় করছে।

নূপুর তলওয়ারের চরিত্রটা করে কেমন লাগল?

কঙ্কনা: আপনি কী করে জানলেন? দেখুন, যে চরিত্রটা আমি করছি, সেটা বলা বারণ।

বেশ, তা হলে আপনার নতুন ছবি ‘লিপস্টিকওয়ালে সপনে’র কথা কিছু বলুন...

কঙ্কনা: ওই ছবিটা খুব ইন্টারেস্টিং জানেন? প্রকাশ ঝা প্রোডাকশনের ছবি। আমি এক মুসলমান মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছি। তার অনেকগুলো শেড আছে।

আর পরিচালনায় কবে আসছেন? স্ক্রিপ্ট তো রেডি?

কঙ্কনা: স্ক্রিপ্টটা খুব মন দিয়ে লিখেছি। আসলে আমি একটু চুজ করেই সব কিছু করতে চাই। তাড়াহুড়ো করতে চাই না। চাই না চার বছরের ছেলেকে ছেড়ে থাকতে। তবে পরিচালনা নিশ্চয়ই করব। এনএফডিসি-তে স্ক্রিপ্টটাও পাঠিয়েছি। তবে এখনও তো প্রযোজকই জোগাড় করতে পারলাম না। দেখি, কী হয়! কাস্টিংটাও তো গুরুত্বপূর্ণ।

এই ছবিতে কার অভিনয় ভাল লাগল?

কঙ্কনা: সুন্দরদা (ধৃতিমান)। আমি তো ছোটবেলা থেকেই ওঁর ভক্ত। ওঁর ছবির সব সংলাপ আমার মুখস্থ।

ধৃতিমান: আরে আমরা তো সহ-অভিনেতা। এর আগেও তো দু’টো ছবিতে অভিনয় করেছি।

কঙ্কনা: হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু তার আগে আমি তোমার ফ্যান। পরে সহ-অভিনেতা। কৌশিকের সঙ্গেও কিন্তু আমার খুব ভাল যায়। এত অনায়াস অভিনয় ওর।

কৌশিক: সেই ‘ইতি মৃণালিনী’ থেকেই কঙ্কনা আর আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই না?

আপনারা তো একসঙ্গে ‘কাদম্বরী’ও করলেন?

কঙ্কনা: ওরে বাবা, ‘কাদম্বরী’তে তো কৌশিক জ্যোতিদাদা। কী ভীষণ রাগী! ওকে এর আগে এত রাগতে আমি কোনও দিন দেখিনি। (দু’জনের হাসি)

কঙ্কনা আর ইন্দ্রনীলের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রিটা দর্শকের বেশ মনে ধরেছে।

কঙ্কনা: সেটা হলে তো বেশ ভালই হয়। ইন্দ্রনীলের সঙ্গে জুটি বেঁধে আবার ছবি করা যাবে। সে জন্যই তো এত খেটে ছবিটা করা।

কৌশিক: বিশেষ করে ছবিতে ওই নাটকের জায়গাটায়...

কঙ্কনা: (কৌশিককে থামিয়ে দিয়ে) আবার শুরু করলে?

কেবলমাত্র কঙ্কনার বাঁ চোখ থেকে কী ভাবে জল গড়িয়ে পড়ল, সেটা দেখেও তো দর্শকেরা আপ্লুত!

কঙ্কনা: আমি ঠিক জানি না। চলে আসে ও রকম।

আচ্ছা আপনার কখনও মনে হয়নি যদি এই ছবিতে ব্যোমকেশের চরিত্রটা করতাম...

কৌশিক: না, কখনওই নয়। ব্যোমকেশ, অজিত ছাড়াও এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আছে যে আলাদা করে ব্যোমকেশ করতে ইচ্ছে হয় না। আমি ‘শজারুর কাঁটা’ করতে রাজি হয়েছিলাম ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করব বলে।

‘চিড়িয়াখানা’য় উত্তমকুমারের ব্যোমকেশ কি ‘শজারুর কাঁটা’র ব্যোমকেশকে প্রভাবিত করেছে?

ধৃতিমান: উত্তমকুমার যখন ব্যোমকেশ করছেন, তখন তাঁর মধ্যবয়স। অবিশ্যি আমার মতো বুড়ো তিনি নন। (সকলের হাসি) তবে ‘চিড়িয়াখানা’তেও গল্পের চরিত্রগুলোর মধ্যে যে সম্পর্কের জটিলতা ছিল, ‘শজারুর কাঁটা’তেও সেই চরিত্রগুলোই ছবির শরীরে রহস্যের জাল বুনছে।

এই রহস্যময়তায় রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী আর শরদিন্দুর দীপা কেমন করে মিলে গেল?

কঙ্কনা: এটার পুরো ক্রেডিট কিন্তু পরিচালক শৈবাল মিত্রের।

রোমানে ‘রক্তকরবী’র স্ক্রিপ্ট পড়ে জীবন্ত নন্দিনী সম্ভব হল কী করে?

কঙ্কনা: হুমম্, আমি তো বাংলা ভাল পড়তে পারি না। তাই রোমানে পড়েছিলাম ‘রক্তকরবী’। তবে সোহাগ মামণি ( সেন) না থাকলে এই চরিত্রটা করতে পারতাম না।

মায়ের কাছ থেকে টিপস নেননি?

কঙ্কনা: অবশ্যই। মা-ই তো আমার লুক-টা সেট করে দিয়েছিলেন প্রথমে।

কৌশিক: রিনাদি তো শটেও এসেছিলেন। তাই না?

কঙ্কনা: শটে? ওহ্, হ্যাঁ, যখন ছবিতে নাটকের দৃশ্যটা শ্যুট করা হয়েছিল, তখন মা এসেছিলেন।

‘রক্তকরবী’ আর নাটকের প্রসঙ্গ গল্পে ছিল না। অথচ ছবিতে এল...

কৌশিক: গল্পটাকে সমসাময়িক করে তোলার জন্যই কিন্তু নাটক, নাটকের রাজনীতি আর ‘রক্তকরবী’ ছবিতে এসেছে। খেয়াল করে দেখবেন, ছবিটা কিন্তু অসম্ভব ভায়োলেন্ট। রঞ্জনকে মারার মধ্যে দিয়ে সেই ভয়ানক ভাবটা বেরিয়ে এসেছে।

ছবিতে ‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছের লোককে জেলে পাঠানো যাবে না’ গোছের যে কড়া সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা সেন্সর বোর্ড পাস করল?

ধৃতিমান: খুব অবাক হয়েছি। সেন্সর বোর্ড-কে এ জন্য ধন্যবাদ। তবে ছবিতে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, নাটক, শরদিন্দুর গল্প, সব কিছু যে এত চমৎকার ভাবে মিশেছে, তার জন্য অনেকটাই কৃতিত্ব ছবির আবহসঙ্গীতের। ছবিটা দেখার পরে মনে হয় কৌশিককে গান গাইতেও ডাকবে...

কঙ্কনা: সত্যিই তাই।

ধৃতিমান: ছবির নাটকীয়তা কিন্তু গানের মধ্যে দিয়েই এসেছে।

আচ্ছা, আবার যদি আপনাকে ব্যোমকেশ করতে বলা হয়, করবেন?

ধৃতিমান: হুমম্, করতে পারি। সত্যবতী যদি সোনালি গুপ্ত হয়, তবেই ব্যোমকেশ করব (সকলের হাসি)। লং শট-এ ততক্ষণে সত্যবতী সোনালি গুপ্ত হাজির।

কঙ্কনা: আমার খুব খিদে পেয়েছে। নন-ভেজ কিছু পাওয়া যাবে?

এত ভাজা খাচ্ছেন। কিন্তু এমনিতে তো দেখছি অসম্ভব রোগা হয়েছেন। কী করে হলেন?

কঙ্কনা: আচ্ছা, ছেলেদের রোগা-মোটা নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন করে না? এই তো কৌশিক পাশে বসে আছে। বলছেন না তো একবারও, ও কত রোগা হয়েছে। নায়িকাদের রোগাও হতে হবে। আবার নায়কদের চেয়ে তারা কম পারিশ্রমিকও পাবে। যত চোটপাট নায়িকাদের ওপর...

এই ছবিতেও কি পারিশ্রমিক নায়কের বেশি? আর নায়িকার কম?

কৌশিক: একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আলাদা করে এ ছবিতে একমেবাদ্বিতীয়ম নায়ক কেউ নেই।

ধৃতিমান: শজারুই এ ছবির নায়ক।

kaushik sen ananda plus srobonti bandopadhyay bomkesh dhritiman chattopadhyay konkona sen sharma Abir Chattopadhyay Meghna Gulzar Vishal Bhardwaj Irrfan Khan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy