Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Mahanagar

Mahanagar Review: ‘মহানগর’ ওয়েব সিরিজের সম্পদ হয়ে থাকল অভিনয়

‘মহানগর’ সমাজ-বাস্তবতা তুলে ধরতে যতটা সফল, শিহরণময় ঘটনা দর্শকের মনে প্রবাহিত করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ততটা সফল নয়।

‘মহানগর’।

‘মহানগর’।

বিভাস রায়চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২১ ১৫:০৩
Share: Save:

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পটভূমিকায় তৈরি ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’। এখানে যে দুর্নীতির তুলে ধরা হয়েছে, তা অনেক দেশের মহানগরেই অহরহ ঘটে চলে। শহরের অভিজাত বৃত্তের এক রাতের পার্টি থেকে ঘটনা শুরু হয়। শিল্পপতি-রাজনীতিবিদ আলমগির চৌধুরীর দাপুটে ছেলে আফনান চৌধুরী ক্ষমতার দর্পে তাস খেলাতেও হারতে চায় না। এটুকুতেই তার মুড খারাপ হয়ে যায়। দেখা যায়, নিজের বান্ধবীকে তুচ্ছ করে সে পার্টি থেকে বেরিয়ে আসে। এর পর বেসামাল আফনানের গাড়িতে চাপা পড়ে একজন সাধারণ মানুষ। পুলিশ তাকে থানায় ধরে নিয়ে এলে চারদিকে হইচই পড়ে যায়। আলমগির চৌধুরী যে-কোনও মূল্যে ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য প্রতিনিধি পাঠায় থানায়। ওসি বড় অঙ্কের টাকা ঘুষ নেন। আফনানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু থানার এসি শাহানা সৎ, সে আফনান চৌধুরীকে প্রভাবশালী ব্যক্তির পুত্র হিসেবে কোনও ছাড় দিতে রাজি নয়। সাব-ইন্সপেক্টর মলয়ও ছুটে বেড়ায় সত্যের সন্ধানে। সারা রাত এই সব নিয়ে থানায় জমজমাট নাটক। ঘুষের টাকার জোরে আফনানকে কি থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে তার প্রভাবশালী বাবা? এখানেই চমক। দেখা যায়, আফনানকে পুলিশ শেষ পর্যন্ত ছাড়ে না। নিয়ে যায় আদালতে। ঘুষ নেওয়ার দায়ে ওসি হারুন গ্রেফতার হয় ঠিকই, কিন্তু তার বুদ্ধিতেই আফনানের অন্য অপরাধের কথা বেরিয়ে আসে। অ্যাক্সিডেন্টের থেকেও বড় অন্যায় সে করে এসেছিল পার্টিতে।

আট পর্বের এই ওয়েব সিরিজের পর্বগুলির নাম দিয়েছেন পরিচালক-- 'ঈশানের মেঘ', 'চিচিং ফাঁক', 'শাপে বর', 'গলার কাঁটা', 'অমাবস্যার চাঁদ', 'অন্ধের যষ্ঠি', 'গোড়ায় গলদ' এবং 'কিস্তিমাত'। পরিচালক একটি থ্রিলার নির্মাণ করতে চেয়েছেন বলেই সম্ভবত এই সব সাংকেতিক উপ-শিরোনাম। কিন্তু ‘মহানগর’ সমাজ-বাস্তবতা তুলে ধরতে যতটা সফল, শিহরণময় ঘটনা দর্শকের মনে প্রবাহিত করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ততটা সফল নয়। মাঝেমাঝেই অকারণে জলঘোলা করা হয়েছে। অপরাধী জয়নালকে তাড়া করা, ধরা এবং ছেড়ে দেওয়াকে কিন্তু অহেতুক দৃশ্য বলেই মনে হয় পরে। কিংবা আবির ও তার বান্ধবীকে নিয়ে যা যা দেখানো হয়েছে, তা না থাকলেও মূল কাহিনির কিছু এসে যেত না। আবির চরিত্রের সুঅভিনেতা খায়রুল বাশার অকারণে ব্যবহৃত হয়েছেন। এই সব বিক্ষিপ্ত ঘটনা এতটা জায়গা নিয়ে নিয়েছে যে, শেষে আফনান চৌধুরীর অধিক-গুরুতর অপরাধ আবিষ্কৃত হওয়ার চমকটি অতি মৃদু লাগে। অথচ এটাই ছিল মাস্টার স্ট্রোকের জায়গা। পরিচালক আশফাক নিপুণ যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখালেও চিত্রনাট্য আদৌ 'নিপুণ' নয়।

অন্যায়কারী সাজা পাক, এটাই সব মানুষেরই চাওয়া। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’। এখানে কী হবে? মানুষের এই স্বাভাবিক উৎকণ্ঠাকে মোটামুটি জাগিয়ে রাখতে পেরেই 'মহানগর' ওয়েব সিরিজটি দর্শক মহলে সাড়া ফেলেছে। ক্যামেরার চোখে টানা একটি রাতের কথা তুলে ধরা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে উন্নত প্রোডাকশন। আর অভিনয় এই সিরিজের বিশেষ সম্পদ। মোশারফ করিম সম্পর্কে নতুন করে কিছুই বলার নেই। ওসি হারুন তাঁর অভিনয়ে এখানে জীবন্ত এবং গোটা সিরিজের প্রধান আকর্ষণ। মাঝে মাঝেই তাঁর ‘দুইডা কথা মনে রাখবা’-জাতীয় সংলাপের আপাত-দার্শনিক লব্জ নিশ্চিত সবার মুখে মুখে ঘুরবে। সাব-ইন্সপেক্টর মলয়ের চরিত্রে মোস্তাফিজুর নুর ইমরান নিজস্বতায় ভরপুর, এই কারণেই মোশারফ করিমের পাশে তিনি হারিয়ে যাননি। ক্ষমতাদর্পী আফনানের ভূমিকায় শ্যামল মাওলা মানানসই। দাপুটে এসি শাহানার ভূমিকায় জাকিয়া বারী মম চমৎকার। তবে স্বল্প উপস্থিতিতেই নিখুঁত ও ধারালো অভিনয়ে দর্শকদের মন মাতিয়েছেন নাসিরউদ্দিন খান। মাঝে মাঝেই কয়েদ খাটা লোকটির ভূমিকায় নাসিরের ফিচেল হাসি ভোলা যায় না।

‘মহানগর’ সিরিজে মোশারফ করিম।

‘মহানগর’ সিরিজে মোশারফ করিম।

প্রথম সিজনের শেষ পর্বের শেষ মুহূর্তে ঘুষখোর দারোগা হারুনকে ঘিরে একটি রহস্য তৈরি করা হয়েছে। আসলে কি সে কৌশল হিসেবে ঘুষ নিয়েছিল, ভিতরে ভিতরে সৎ? শেষ সংলাপে হারুন বলতে চেয়েছে যে, সিস্টেমের ভিতরে এত ভূত… তাদের সঙ্গে লড়তে গেলে নিজেদেরও মাঝে মাঝে ভূত হতে হয়।

আশা করা যায়, দ্বিতীয় সিজনে হারুন-রূপী মোশারফ করিমের চরিত্রটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Web Series hoichoi Mahanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE