ভোরের দিকে হালকা ঠাণ্ডা লাগছে। দুপুরের রোদ্দুরটা বেশ চড়া। আর রাত বাড়লেই ছাতিম ফুলের মনকেমনের গন্ধ। পুজো যে এসে পড়ল তার মেসেজ ছড়ানো চার দিকে। তবে আমার এ বারের পুজো কাটবে প্রিয়জনকে হারানোর শোক নিয়ে। দাদু চলে গেলেন। নামকরা মানুষ ছিলেন আমার দাদু। অ্যাডভোকেট জেনারেল সাধন গুপ্ত। দাদুর খোলা গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথা খুব মনে পড়ছে। দাদু গাইতেন, আর বাড়িতে যে যেখানে আছে একজোট হয়ে বসে শুনতাম। সব পুজোতেই যে দাদুর বাড়ি যাওয়া হত এমন নয়। কিন্তু আর কখনও বিজয়ার প্রণাম করতে দাদুর কাছে যাওয়া হবে না ভাবলেই একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে। যোধপুর পার্কের বাড়ির মায়াই আর থাকল না।
আমার পুজোর শপিং বলতে আলাদা কিছু নেই। এ বার তো কিছুই কেনা হয়নি। সারা বছরই কিছু না কিছু কেনা হয়। শাড়িতে আমি সবচেয়ে কমফর্টেবল। এক এক সময়ে এক একটা রঙের উপর আমার ঝোঁক হয়। যখন নীল শাড়ি কিনছি একগাদা কিনে ফেললাম। আবার যখন ধূসরের উপর মন বসে তখন ধূসর পোশাক অনেক কেনা হয়ে যায়। এখন যেমন সাদা বা অফহোয়াইটের উপর ভালবাসা চলছে আমার। শাড়ির সঙ্গে ছিমছাম সাধারণ গয়না পরতে ভাল লাগে। যদিও গয়না খুব কমই পরি। এখন যে সুতোর বুনোটে নানা গয়না বেরিয়েছে, ওগুলো শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে পরি।
বরং আমার ছেলে উজান এখন বেশ গুছিয়ে শপিং করতে শিখেছে। ক্লাস টুয়েলভ। বুঝতেই পারছেন টিনএজে সবারই সাজগোজে ঝোঁক হয়। এমনিতে ও নিজে অনলাইন শপিং পছন্দ করে। নিজের টেস্ট অনুযায়ী অনলাইন থেকে কেনে অনেক কিছু। আমি এর মধ্যে ওকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম একদিন। ওর জিন্স, জামা কিনে দিলাম। ও নিজেই বলল পাঞ্জাবির কথা। অষ্টমীর অঞ্জলির জন্য। তা-ও হল একটা। মা-ছেলেতে ঘুরে ঘুরে এই হল আমাদের পুজোর বাজার। কৌশিকের জন্য আমি নিজে থেকে কিছু কিনি না। মানে, কিনতে চাইলে ওকে সঙ্গে নিয়ে যাই। কারণ, আমি পছন্দ করে কিনে আনলে ওর সাইজে হয় না!
এ বার আসি খাবারের কথায়। পুজোর ভোগের মধ্যে তো নস্টালজিয়া জড়িয়ে আছে। ভোগ খেতে খুব ভাল লাগে আমার। আর বাকি মেনু ঠিক করে কৌশিক। এই একটা ব্যাপারে ও কাউকে ভরসা করে না। যদি কিছু পছন্দের জিনিস বাদ পড়ে যায়!
তবে কলকাতায় পুজোয় বড় ভিড় জানেন। আসলে আমার মেয়েবেলার পুজো নিরিবিলিতে পাহাড়ে কেটেছে। জীবনের অনেকগুলো বছর সেই শান্ত পরিবেশে কাটিয়ে আসা আমিটা এই ভিড়ে যেন হাঁপিয়ে ওঠে। কয়েকটা পরিবার মিলে ঘরোয়া পরিবেশে সেই পুজো হত। পুজোর এক মাস আগে থেকে মা, কাকিমারা আমাদের ছোটদের নিয়ে পড়তেন। নাচ, গান, নাটক— টানা রিহার্সাল চলত। তার পর পুজোর সময় মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠান। সে সময় পুজোয় হয়তো একটাই জামা হত আমাদের। কিন্তু আনন্দটা ছিল অপরিসীম। সে সব দিন বড্ড মিস করি জানেন। ওই দিনগুলো তো আর ফিরে পাব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy