ঘড়ি কাঁটায় সময় বাঁধা। একের পর এক সাক্ষাৎকার দিতে হচ্ছে। মুম্বইয়ে বসে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে কথা বললেন আরএস প্রসন্ন। আমির খানের ছবির দায়িত্ব নিয়েছেন নিজের কাঁধে, এমন এক সময়ে, যখন আমিরের একের পর ছবি ব্যর্থ হচ্ছে বক্স অফিসে। আসন্ন ছবি ‘সিতারে জ়মিন পর’ ছবিতে পরিচালক তিনি। ‘তারে জ়মিন পর’ ছবির সাফল্যের পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর। বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের কথা ফের পর্দায় তুলে ধরছেন প্রযোজক-অভিনেতা আমির। ২০ জুন ছবি মুক্তির আগে আনন্দবাজার ডট কমের মুখোমুখি ‘সিতারে জ়মিন পর’ ছবির পরিচালক আরএস প্রসন্ন।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে ঠিক কতটা ব্যস্ত আপনি?
প্রসন্ন: ব্যস্ত তো বটেই, কী ভাবে যে সময় কাটছে বুঝতেই পারছি না। একটা চাপা উত্তেজনাও কাজ করছে। ২০ জুন ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে। কত ক্ষণে যে দর্শকেরা তা দেখতে পাবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া দেবেন— সেই অপেক্ষাই করছি। ট্রেলার মুক্তির পর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। তাই আশায় বুক বেঁধেছি।
প্রশ্ন: ‘তারে জ়মিন পর’-এর বড় প্রভাব পড়েছিল দর্শকের মধ্যে, ‘সিতারে জ়মিন পর’-এর গল্প তৈরির ভাবনাটা এল কোথা থেকে?
প্রসন্ন: এই ছবির চিত্রনাট্য হাতে এসেছিল প্রায় পাঁচ বছর আগে। গল্পের মধ্যে হাস্যরস রয়েছে, আবেগ রয়েছে, আবার খেলার উপাদানও। পাশাপাশি প্রেম তো রয়েছেই। একটি ছবিতে একসঙ্গে চারটি উপাদান থাকাটা বেশ বিরল। বলা যায় দর্শক মনোরঞ্জনের সমস্ত রকম মশলাই রয়েছে। কিন্তু প্রথমে ভেবেছিলাম কার কাছে যাব গল্পটি নিয়ে। তখনই আমির খানের সহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তিনি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিতেই আমির স্যারকে চিত্রনাট্য শোনাই। গল্পটা ওঁর মনে ধরে যায়।
আরও পড়ুন:
প্রশ্ন: ‘তারে জ়মিন পর’-এর সঙ্গে কতটা মিল এই গল্পের?
প্রসন্ন: এ ছবির প্রস্তুতি পর্বেই আমির স্যার বলেন, “আচ্ছা জানো তো এই ছবির সঙ্গে কিন্তু ‘তারে জ়মিন পর’ ছবির মিল আছে। একই রকমের সংবেদনশীলতা, বৈষম্য কী ভাবে শিশুমনকে আহত করে...”। আসলে ভাবনার জায়গাতেই ছবি দুটোর মিল। আমি নিজে যখন কলেজ পড়ছি, তখন ‘তারে জ়মিন পর’ ছবিটা দেখি। এখন নিজে এমন এক ঐতিহ্যের অঙ্গ হতে পেরে গর্বিত।
প্রশ্ন: আমিরের শেষ ছবিগুলি বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি, তাই এই ছবিটিকে সফল করার বাড়তি চাপ রয়েছে?
প্রসন্ন: যে কোনও ছবি মুক্তির আগে চাপ থাকে। সকলেই চান তাঁর ছবি যাতে সাফল্য পায়। আমরা আজকাল বক্স অফিস নিয়ে বড় বেশি মাতামাতি করি। কিন্তু আমরা সকলে তো গল্পকার। আমাদের গল্প দর্শকের পছন্দ হোক সেটাই আসল চাওয়া। সেই চাপটা সব সময় থাকে। ছবি মুক্তি আগে দু’দিন যথেষ্ট চাপ থাকবে। আমরা যথেষ্ট ভালবাসা এবং যত্ন নিয়ে ছবি বানাই। দর্শক সেটা গ্রহণ করবে কি না সে ভয় তো থাকেই।
প্রশ্ন: শুটিং সেটে মানুষ আমির কেমন?
প্রসন্ন: দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা, প্রচুর প্রচুর গল্প থাকে ওঁর ঝুলিতে। ভীষণ মজার মানুষ। আমি তো আমির খানকে খুব জ্বালাতন করতাম। অবসর সময় পেলেই স্যারের কাছে মাস্টার ক্লাস সেরে নিতাম। একজন কিংবদন্তির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তাই সারাক্ষণ কিছু না কিছু শিখে নেওয়া চেষ্টা করতাম। ৫ বছর ধরে চিনি ওঁকে। এত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, অথচ, আজ পর্যন্ত কারও নিন্দা করতে শুনিনি। কোনও ‘গসিপ’-এ তিনি নেই। আমরা অন্যের সমালোচনায় অনেক সময় নষ্ট করি, কিন্তু আমির খান সেখানেই আলাদা। লোকের ভালটাই দেখেন সব সময়, অন্যকে অনুপ্রেরণা দেন।
আরও পড়ুন:
প্রশ্ন: আমির খানের মতো তারকা সে কি আদৌ পরিচালকের কথা শোনেন?
প্রসন্ন: আসলে আমার নিজের মনে এই প্রশ্নটা ছিল। কারণ তিনি এত বড় তারকা কী ভাবে ওঁর সঙ্গে কাজ করব! কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই আমাকে এতটা সহজ করে নিলেন যে কিছু ভাবতেই হল না। আসলে যাঁরা বড় তারকা, তাঁরা জানেন মানুষের সঙ্গে কী ভাবে মিশতে হয়। বড় তারকারা সব সময় নম্র হয়ে থাকেন। আমির খান হোন কিংবা কমল হাসন— সকলের কাছেই শেখার মতো হল তাঁদের এই নম্রতা। এখনও জানার আগ্রহ রয়েছে তাঁদের মধ্যে। আমির খানের মতো তারকা নিজস্ব মতামত দেবেন সেটাই স্বাভাবিক। শুধু আমির স্যারই নন, আমার ছবিতে যাঁরা অন্য চরিত্রে রয়েছেন, তাঁরাও তাঁদের মত জানান। আমাকে সকলেই প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্ন করছেন মানেই তাঁরা কাজটার সঙ্গে মন থেকে যুক্ত রয়েছেন। আমি সকলের কথা শুনি, দিগ্ভ্রান্ত হই না। কারণ আমি কী করছি, আর কী চাইছি সেটা আমার মাথায় গোছানো থাকে।
প্রশ্ন: অভিনেতা তো বুঝলাম, প্রযোজক আমির কি দরাজ? নাকি রাশ রাখেন নিজের হাতে?
প্রসন্ন: প্রযোজক আমির কেমন সেটা ওঁর সিনেমাগুলি দেখলেই বোঝা যায়। সব বড় বাজেটের ছবি, উনি যে কোনও পরিচালকের স্বপ্নের প্রযোজক। যাকে বলে একেবারে ‘গ্রিন ফরেস্ট’। উনি পরিচালকে এতটা সময় দেন, এতটা সাহায্য করেন— কাজটা এমনিতেই সহজ হয়ে যায়। আমি তো এই ছবিটির জন্য ১০ মাস ধরে প্রায় ২০০০ শিশু শিল্পীর অডিশন করেছি। এতটা সময় কোন প্রযোজক দেয় বলুন তো!
প্রশ্ন: সম্প্রতি মুম্বইয়ে এই ছবির বিশেষ প্রদর্শন ছিল, গৌরী স্প্র্যাট এসেছিলেন আমিরের সঙ্গে। তাঁর কেমন লাগল ছবিটি?
প্রসন্ন: বলতে পারব না। কথা হয়নি এ বিষয়ে।
প্রশ্ন: আপনার ছবির একটা চরিত্রে নাকি কলকাতার ভাইরাল পরোটা বিক্রেটা রাজুদা আছেন?
প্রসন্ন: (অট্টহাসি) আমি বিষয়টি জানতামই না। পরে দেখলাম একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। তখন জানলাম, কলকাতায় রাজুদা নামে এক পরোটা বিক্রেতা রয়েছেন। আমরাও দেখে বিস্মিত হয়েছি, এক রকম দেখতে! তবে আমার ছবিতে যিনি কাজ করেছেন তিনি ‘রাজুদা’ নন।