অনু আগরওয়াল। —ফাইল চিত্র।
বাঁচার কথাই ছিল না তাঁর! নয়ের দশকের শেষে বিশাল দুর্ঘটনা। স্মৃতি হারিয়ে নিজেকেই বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। ডাক্তারবাবুরা নিদান দিয়েছিলেন, মেরেকেটে তিন বছর আয়ু অনু আগরওয়ালের। তার পরেও মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে, তাকে জয় করে, ঘুরে দাঁড়িয়ে আজও বহাল তবিয়তে ‘আশিকী গার্ল’!
কিসের জোরে?
অতি সম্প্রতি, এই প্রশ্ন তাঁর সামনে রেখেছিল সংবাদমাধ্যম। হাসিমুখে নয়ের দশকের ‘গোল্ডেন গার্ল’-এর জবাব, মন আর যোগাভ্যাসের জোরে। সব হারিয়েও তিনি আত্মবিশ্বাস হারাননি। তার জোরে নিজেকে ভুলে গিয়েও আবার মনে পড়িয়েছেন। ডাক্তারবাবুরা যখন জবাব দিয়েছেন তখনও হাল না ছেড়ে নিয়মিত যোগব্যায়াম করেছেন। যার সুফলে তিনি আবার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে।
১৯৯০-এ মহেশ ভাটের ‘আশিকী’ রাতারাতি স্টার বানিয়েছিল অনু আগরওয়ালকে। মাত্র তিন বছরে তিনি ‘খলনায়িকা’র মতো ছবির মুখ্য চরিত্রাভিনেতা। অভিনেত্রীর কথায়: ‘‘আশিকী এবং এম টিভির দৌলতে আমি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত দম ফেলার ফুরসত পাইনি। এক দিকে চ্যানেলের কাজ। সঙ্গে মণিরত্নম, রাকেশ রোশনের মতো পরিচালকের ছবিতে কাজ। মডেলিংয়েও দুর্দান্ত অফার পাচ্ছি...।’’
আরও পড়ুন: গত এক মাসে আত্মঘাতী সুশান্তের আরও তিন ঘনিষ্ঠ, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রূপার
আক্ষরিক অর্থেই অনুর যখন ধুলোমুঠি সোনা হচ্ছে তখনই আচমকা ছন্দপতন। দুর্ঘটনার জেরে সেই যে ইঁদুরদৌড় থেকে ছিটকে গেলেন, আর ফিরতেই পারলেন না মায়ানগরীতে।
অনুও সুশান্তের মতোই বলিউডে ‘আউটসাইডার’। —ফাইল চিত্র।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সঙ্গে অদ্ভুত মিল অনু আগরওয়ালের। রাতারাতি খ্যাতি, অর্থ, প্রতিপত্তি। তিনিও সুশান্তের মতোই বলিউডে ‘আউটসাইডার’। তাঁকেও পদে পদে অপমানিত হতে হয়েছে বি টাউনে।
কী ভাবে? নায়িকার স্মৃতিচারণ: ‘খলনায়িকা’য় দুর্দান্ত অভিনয়ের জোরে অনু একটি নামিদামী অ্যাওয়ার্ড ফাংশনে সেরা নায়িকা বিভাগের নমিনেশন পেয়েছিলেন। বলিউডের ‘আউটসাইডার’ হওয়ায় সেই বিভাগ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেরা সহ-নায়িকা বিভাগে। বিচারকেরা নাকি নাম দেখে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘এ কে? মা-বাবা কে? কোথা থেকে এসেছে? চিনি না তো! কোথা থেকে যে সব চলে আসে, কে জানে।’’
এই একই ব্যবহার সুশান্তও তো পেয়েছিলেন আলিয়া ভট্ট, সোনম কপূরের কাছ থেকে? নাম শুনে অভিনেতাকে চিনতেই পারেননি এই দুই স্টার কিড!
সুশান্তের কথা উঠতেই তাই বিষণ্ণ অনুর মুখ, ‘‘আমি অনুভব করতে পারি সুশান্তের যন্ত্রণা। যেই নাম-যশ হবে অমনি সবাই হিংসে করতে শুরু করবে। বাজে রটনা ছড়াবে। খারাপ ব্যবহার করবে। এক এক সময় ভীষণ অসহ্য লাগত। জানি না, কী করে ৯ বছর কাজ করেছি ইন্ডাস্ট্রিতে। গোদের উপর বিষফোঁড়া সিঙ্গল উইমেন হওয়ার জ্বালা।’’
আরও পড়ুন: ‘স্বজনপোষণকে আমরাই আদর করে বয়ে বেড়াচ্ছি’, টুইটে বলিউডকে দুষলেন সুস্মিতা সেন
দু’জনের এই মিলই সম্ভবত অনুকে চর্চায় এনেছে আবার। মিলের পাশাপাশি অবশ্য বড় ব্যতিক্রমও আছে দু’জনের মধ্যে। কী সেটা?
সুশান্ত একটা সময়ের পর আর লড়তে পারেননি। হার মেনে বেছে নিয়েছেন মৃত্যুকে। অনু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ফিরেছেন জীবনের পথে। একা একা। আজও বিয়ে-থা করেননি অনু।
সদ্য সুশান্তের মৃত্যু দেখা বলিউডের তাই অবাক প্রশ্ন, এ ভাবেও ফিরে আসা যায়?
অনুর যাপিত জীবন বলছে, যায়। অনু আর বি-টাউনের কেউ নন। মুম্বইতে যোগা স্কুল খুলেছেন। যেখানে ধনীদের সঙ্গে বস্তির বাচ্চারাও আসে ক্লাস করতে। খুব সাধারণ জীবন কাটান। তার মধ্যেও ফের প্রচারে এসে সবাইকে দেখিয়ে দিলেন, মানুষ চাইলে কী না পারে!
আফশোস, বেঁচে থাকার এই মন্ত্রগুপ্তির হদিস যদি সুশান্ত পেতেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy