‘কলঙ্ক’ ছবির দৃশ্য।
বড়রা কেমন খসখস করে অনায়াস আঁচড়ে পাতায় সই ফুটিয়ে তোলেন। ছোটবেলায় ভারী ইচ্ছে করত ওই রকম সই করার। ‘কলঙ্ক’ দেখতে দেখতে মনে হবে, অভিষেক বর্মণও বোধহয় বড়দের সিগনেচার অনুকরণ করতে ভালবাসেন। নয়তো গোটা ছবি জুড়ে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর সিগনেচার অনুকরণের প্রাণান্তকর চেষ্টা তিনি করতেন না। কিন্তু মুশকিল হল, অভিষেক ঠিক করতে পারেননি তিনি মেন্টর কর্ণ জোহরকে অনুসরণ করবেন, না কি ভন্সালীকে! দুই লেজেন্ডের সিগনেচার স্টাইলের মাঝে তিনি ফেঁসে গিয়েছেন।
ছবির আলোচনায় গল্প বলতে যাওয়া বৃথা। কারণ, ‘কলঙ্ক’-এর সবচেয়ে দুর্বল জায়গা এর গল্প। প্রেম-প্রতিহিংসার গল্প বলার জন্য পরিচালক ১৯৪৫-৪৬ সালের প্রেক্ষাপট বেছে নিয়েছেন। না বাছলেও ক্ষতি হতো না। ছবি দেখে মনে হয় বড় সেট, জাঁকজমক, পোশাকের আড়ম্বর দেখাবেন বলেই দেশভাগকে প্রেক্ষাপট হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পরিচালক অনেক চেষ্টা করেছেন ইতিহাসের ফাঁকে ফাঁকে জ়াফর (বরুণ) আর রূপের (আলিয়া) প্রেম কাহিনিকে গুঁজে দিতে। সেখানে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। যে কারণে গল্প হিরা মণ্ডি, হভেলি এবং সংবাদপত্রের দফতরের বাইরে যেতে পারেনি। গ্ল্যাডিয়েটর স্টাইলে বরুণের সঙ্গে ষাঁড়ের লড়াই দেখানোর অংশটিও ছবিকে কোনও মাইলেজ দেয় না।
এই ধরনের ছবিতে যুক্তি খুঁজতে যাওয়া যুক্তিহীন। কিন্তু যেখানে ইতিহাসকে আধার করে ছবি বানানো হচ্ছে, সেখানে কিছু কৈফিয়ত দিতে হয় বইকি। দেব চৌধুরী (আদিত্য রায় কপূর) এবং তার পরিবারের পিছনে আব্দুলের (কুণাল খেমু) হাত ধুয়ে পড়ার যুক্তি ভারী ঠুনকো। যে ঘটনা কাহিনিকে ক্ল্যাইম্যাক্সের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, সেখানে একটা পোক্ত জমির প্রয়োজন ছিল।
কলঙ্ক
পরিচালনা: অভিষেক বর্মণ
অভিনয়: আলিয়া, বরুণ, মাধুরী, সঞ্জয়, আদিত্য, সোনাক্ষী, কুণাল
৫/১০
অনেক দিন পরে মাধুরী দীক্ষিত এবং সঞ্জয় দত্ত একসঙ্গে পর্দায়। একটি দৃশ্যেই যুগলে ফ্রেমে এসেছেন। ছবির অল্প কিছু ভাল মুহূর্তের মধ্যে এটি একটি। ‘কলঙ্ক’-এর ইউএসপি হতে পারত বরুণ-আলিয়ার প্রেম। কিন্তু সেখানেও পরিচালক নিরাশ করলেন। যে প্যাশনেট প্রেমের প্রত্যাশা ছিল, তেমন কোনও মুহূর্ত গড়ে উঠল কই?
ছবি শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে দর্শক গোটা গল্প এবং পরিণতি আঁচ করে নিতে পারবেন। সেই আধঘণ্টায় কিন্তু দুটো গানও হয়ে গিয়েছে। নয়তো দু’ঘন্টা আটচল্লিশ মিনিটের ছবির বাকি সময়টায় চরিত্রগুলির চলনে কোনও মোচড় নেই। তার উপরে অভিষেক দোলাচলে ভুগেছেন, তিনি ভন্সালী হবেন না কি কর্ণ। ত্রিকোণ প্রেমের নিষ্পত্তি করতে কর্ণ সাধারণত যে পন্থা নেন, অভিষেকও তাই নিয়েছেন। একটু স্পয়েলার দেওয়া রইল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তা হলে কি গোটা ছবি জুড়ে ভাল কিছুই নেই? অবশ্যই আছে। কর্ণ বরাবরই ছবির লুকের দিকে গুরুত্ব দেন। অভিষেক সেই জিনিসটা বহাল রাখতে পেরেছেন। ভন্সালীর মতো রোম্যান্স তৈরি করতে না পারলেও সেটের আড়ম্বর দেখার মতো। বাহার বেগমের মহল যেন একটা স্বপ্নপুরী। দশেরার দিনের সেটসজ্জাও দুর্দান্ত। দশেরার প্রেক্ষাপটে বরুণ-আলিয়ার প্রথম দেখা হওয়ার দৃশ্যটা যে কারণে ভাল লাগার মুহূর্ত তৈরি করে...
বিনোদ প্রধানের ক্যামেরা যে মায়া তৈরি করেছে, তার সঙ্গে শ্বেতা ভেঙ্কটের এডিট যোগ্য সঙ্গত করতে পারলে ছবির জন্য ভালই হতো।
‘কলঙ্ক’-এ নামজাদা সব অভিনেতা রয়েছেন। মাধুরী, সঞ্জয়ের কথা নতুন করে বলার নেই। আলিয়া ভট্ট এমন এক জন অভিনেতা, তাঁকে যে পাত্রেই রাখা হোক, তিনি সেই পাত্রের আকার ধারণ করেন। বরুণের মধ্যে একটা রাগেড ব্যাপার আনার চেষ্টা করা হয়েছে। নিজের লুক এবং অভিনয় দিয়ে তিনি সেখানে সফল। ছবিতে সোনাক্ষী সিংহ খুব কম সময়ের জন্য রয়েছেন। সেই সময়টুকু তাঁর সৌন্দর্যের মাধুর্য মুগ্ধ করে রাখে। আদিত্য রায় কপূরকেও ভাল লাগে।
ছবির গল্প দর্শকের চেনা। সত্তরের দশকের অনেক ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে। বলিউড যেখানে ‘স্ত্রী’, ‘অন্ধাধুন’, ‘বধাই হো’, ‘গাল্লি বয়’-এর মতো চ্যালেঞ্জিং কনটেন্ট তুলে আনছে, সেখানে স্রেফ পিরিয়ড ড্রামা বানানোর তাগিদে ফের পিছনে হেঁটে যাওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy