Advertisement
E-Paper

প্রভাতদার ছবিতে আমার পরে বুম্বা-ভিক্টর, হীনম্মন্যতায় ভুগেছি এমন নয়: চিরঞ্জিৎ

প্রভাতদা উত্তমদাকে বুঝিয়েছিলেন, অ্যাকশন দৃশ্যে ও ভাবে সত্যিকারের মারতে নেই! বিষয়টি উপলব্ধি করার পর তিনিও অপ্রস্তুত। এ দিকে, উৎপলবাবু উত্তমকুমারকে দেখলেই ভয়ে ছিটকে সরে যাচ্ছেন! পরিচালকের জন্মদিনে লিখলেন চিরঞ্জিৎ

চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫ ১৭:২৫
ছবি পরিচালনার ক্ষেত্রে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর শিক্ষাগুরু প্রভাত রায় ।

ছবি পরিচালনার ক্ষেত্রে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর শিক্ষাগুরু প্রভাত রায় ।

প্রভাত রায়ের ৮১ বছর! ভাবাই যায় না। একটা সময় আমি আর দাদা জুটি বেঁধে অনেক ছবি করেছি। ‘পাপী’, ‘প্রতীক’, ‘প্রতিকার’, ‘সেদিন চৈত্রমাস’— আরও ছবি ঝুলিতে। আমাদের প্রতিটি ছবিই সফল। কত আড্ডা হত তখন। ভীষণ ঠান্ডা মাথার মানুষ তো, মন দিয়ে শুটিং করতেন। আর ফাঁক পেলে আড্ডা দিতেন। পুরনো দিনের কত গল্প যে দাদার কাছে শুনেছি। তার মধ্যে থেকে দুটো মজার গল্প পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। প্রভাতদা পরিচালক শক্তি সামন্তের সহকারী পরিচালক ছিলেন। উত্তমকুমারকে ‘অমানুষ’ ছবিতে পরিচালনা করেছিলেন। উত্তমদা খুব বেশি অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করেননি। ফলে, ও রকম কোনও দৃশ্য এলে দাদা নাকি খুব সচেতন হয়ে যেতেন। মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরত, দৃশ্যটা খুবই ভাল। আরও ভাল ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে।

‘অমানুষ’ ছবিতে খলনায়ক উৎপল দত্ত। একটা দৃশ্য আছে, উত্তমদা ঘুষি মারবেন তাঁকে। বাস্তবে তিনি কুস্তি শিখেছেন। গায়ে খুব জোর। ব্যস, সিরিয়াস হয়ে সজোরে ঘুষি উৎপল দত্তের মুখে! তিনি আঘাত পেয়ে বসে পড়েছেন! ছবিতে আরও দৃশ্যগ্রহণ বাকি। এ বার কী হবে? প্রভাতদা উত্তমদাকে বুঝিয়েছিলেন, অ্যাকশন দৃশ্যে ও ভাবে সত্যিকারের মারতে নেই! বিষয়টি উপলব্ধি করার পর তিনিও অপ্রস্তুত। এ দিকে, উত্তমকুমারকে দেখলেই উৎপলবাবু ভয়ে ছিটকে সরে যাচ্ছেন! আর বলছেন, “আর মারবেন না! অত জোরে মারবেন না...।” প্রভাতদা রসিয়ে রসিয়ে বলছেন আর আমরা হেসে গড়িয়ে পড়ছি।

মারামারি প্রসঙ্গে মনে পড়ল, দাদা অ্যাকশন দৃশ্য খুব ভাল বুঝতেন। ওঁর ছবিতে গল্পের পাশাপাশি তাই মারপিটের দৃশ্যগুলোর আলাদা আবেদন ছিল। বিশেষ দৃশ্যগুলো শুট করে খুব তৃপ্তি পেতাম। এ ভাবেই প্রভাত রায় বাংলা ছবির দুনিয়ায় আলাদা ঘরানা তৈরি করেছিলেন। সেই ঘরানার সার্থক উত্তরসূরি রাজ চক্রবর্তী। আমার পরে প্রভাতদা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেন। ওঁদের দিয়েও দাদা প্রচুর অ্যাকশন করিয়েছেন।

এ বার দ্বিতীয় মজার গল্প। অমিতাভ বচ্চন ‘অনুসন্ধান’-এ অভিনয় করছেন। বাংলা তাঁর আসেই না। এ দিকে হিন্দির পর বাংলায় যখন ছবিটি তৈরি হল তখন তো বাংলা বলতেই হবে। অনেক ভেবে অমিতাভ উপায় বার করলেন। দূরের শটে তিনি ইংরেজিতে ‘১ থেকে ৬’ আউড়ে যেতেন! দূর থেকে শট নেওয়ার ফলে, বোঝা যেত না তিনি হিন্দি বলছেন না বাংলা। পরে ভয়েস আর্টিস্ট সেটা ডাব করে দিতেন। সিনেমার ভাষায় এগুলোকে বলে ‘চিট সিন’। ক্লোজ় আপ শটে বাংলা বলতেই হত তাঁকে। ওইটুকু কোনও মতে বলে ফেলতেন অমিতাভ। বাকিটা প্রভাতদার কেরামতি।

প্রভাত রায়ের ৮১ তম জন্মদিনে মেয়ে একতা ভট্টাচার্য, পরিচালক বন্ধু প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী।

প্রভাত রায়ের ৮১ তম জন্মদিনে মেয়ে একতা ভট্টাচার্য, পরিচালক বন্ধু প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী। ছবি: সংগৃহীত।

এই হলেন জনপ্রিয় পরিচালক প্রভাত রায়। প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী তৈরি করেছেন। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, টোটা রায়চৌধুরী, সঞ্জীব দাশগুপ্ত— এ রকম আরও অনেক শিল্পী ওঁর হাতে তৈরি। আর আমার ছবি পরিচালনার শিক্ষাগুরু দাদা। প্রথম ছবি ‘মর্যাদা’ পরিচালনা করব। দাদা ক্ল্যাপস্টিক দিয়েছিলেন। ভীষণ ভদ্র, অমায়িক। আমার পরে ভিক্টর, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় দাদার অনেক ছবিতে কাজ করেছেন। অনেকেই জানতে চান, সেই সময় হীনম্মন্যতায় ভুগেছি কি না। না, ভুগিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখিইনি ওঁদের। ভিক্টর বা বুম্বাকে অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে মানিয়েছে বলেই না প্রভাতদা ওঁদের ডেকেছিলেন!

মাঝে অনেকটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন দাদা। জয়শ্রী রায়, দাদার স্ত্রীবিয়োগের পর খুব একা হয়ে গিয়েছিলেন। দেখার কেউ নেই! কেউ খোঁজ নিতেন না। ক্রমাগত অসুখে ভুগছিলেন। সেই সময় ওঁর জীবনে ঈশ্বরের দূত হয়ে আসে একতা ভট্টাচার্য। বলতে দ্বিধা নেই, একতা প্রভাতদার মেয়ের থেকেও বেশি। সারা ক্ষণ আগলে রেখেছে। শরীর খারাপ হলে চিকিৎসা করাচ্ছে। বৃদ্ধ মানুষটিকে দিয়ে আত্মজীবনী ‘ক্ল্যাপস্টিক’ তো লিখিয়ে নিল! আজকের দিনে নিঃস্বার্থ ভাবে এটাই বা ক’জন করে?

Chiranjeet Chakraborty Prabhat Roy Birthday Celebration Ekta Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy