Advertisement
E-Paper

মাতৃতান্ত্রিকতা ফিরে এলে কি সমাজেরই উন্নতি? আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে কী বললেন টলি তারকারা

মহাকাশে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাপটের সঙ্গে মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছেন কোনও নারী। তবু এই একবিংশ শতকে এই বিশ্বে আজও পুরুষদেরই প্রাধান্য। কিন্তু বছরের একটি দিন কি তাদের জন্য থাকা দরকার? মতামত জানালেন চিরঞ্জিৎ, শ্রীলেখা, রূপাঞ্জনা, তথাগত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:০৬
চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী এবং শ্রীলেখা মিত্র।

চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী এবং শ্রীলেখা মিত্র। ছবি: ফেসবুক।

নারী দিবস নিয়ে যত আড়ম্বর পুরুষ দিবস নিয়েও কি ততটা হয়? কিংবা এখনও, ৩৬৫ দিনে যাদের রাজপাট, বছরের একটি দিন কি তাদের জন্য থাকা দরকার? একুশ শতকের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

যেমন, সংসার থেকে পেশাজীবনে পুরুষদের এত দিনের একচ্ছত্র আধিপত্যে কি নারী একটুও ভাগ বসাতে পেরেছে? পুরুষের চোখে নারী প্রতিদ্বন্দ্বী, সহযাত্রী না কি শাসিত?

পরিস্থিতি বলছে, সমাজের বাকি স্তরের মতো ‘গ্ল্যামার ওয়র্ল্ড’ এখনও পুরুষশাসিত। আর তাই, নায়িকাকেন্দ্রিক ছবি এখনও কম তৈরি হয়। মহিলা পরিচালকের সংখ্যা যেন তুলনায় কম। অক্ষয় কুমার আট ঘণ্টা কাজ করে পার পেয়ে গেলেও দীপিকা পাড়ুকোন সে প্রসঙ্গ তুললে তাঁকে সমালোচিত হতে হয়। নায়ক যা পারিশ্রমিক পান তার চেয়ে অনেক কম পান নায়িকা।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে এই সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে আনন্দবাজার ডট কম প্রশ্ন করেছিল তিন অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র, রূপাঞ্জনা মিত্র এবং অভিনেতা-পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়কে।

কথা শুরুতেই চিরঞ্জিৎ যেমন রসিকতা জুড়লেন, “নারীদের কি উদ্‌যাপনের জন্য আরও একটি দিনের প্রয়োজন?” পর ক্ষণেই তাঁর বক্তব্য, সত্যিই, নারীদের জন্য আরও দিন থাকা উচিত। কারণ, তাঁদের অগ্রগতি। অভিনেতা রাজনীতি এবং বিনোদন— দুই পেশার সঙ্গেই জড়িত। তাঁর উপলব্ধি, “হ্যাঁ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখনও হয়তো নারীর আধিপত্য কম। কিন্তু নারীরা আগের তুলনায় অনেকটাই এগিয়েছে। বিমান চালানো থেকে মহিলা সেনাবাহিনী— সবেতেই মেয়েরা এগিয়ে আসছে। বাংলায় মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।”

প্রত্যেক নারীকে শিক্ষিত হওয়ার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। “মা শিক্ষিত হলে সন্তান শিক্ষিত হবেই। শিক্ষিত সমাজ পেতে গেলে মায়ের শিক্ষা সকলের আগে প্রয়োজন। একজন পুরুষ বা পিতা কিন্তু মায়ের মতো সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে নাও পারেন।” পাশাপাশি, আত্মরক্ষায় মেয়েদের মার্শাল আর্ট শেখাকেও তিনি নারীর অগ্রগতি বলেই মানেন। “আর একটি বিষয় জরুরি। প্রত্যেক নারীকে স্বনির্ভর হতে হবে। আর্থিক স্বাধীনতা যে কোনও নারীকে স্বাধীন মতামত দিতে শেখায়।” এত দিন যার অভাব ছিল বলে চিরঞ্জিৎ মনে করেন। তার জন্যই নারীকে ছেলেবেলায় বাবা বা দাদা, বিয়ের পর স্বামী এবং বৃদ্ধাবস্থায় সন্তানের মুখাপেক্ষী হতে হত।

পরিচালক-অভিনেতা তথাগত একটু ভিন্ন ভাবে এই উদ্‌যাপনকে দেখতে ভালবাসেন। তাঁর কথায়, “সে ভাবে দেখতে গেলে কারও, কোনও দিবস থাকা উচিত নয়। যেমন, আমরা শিশুদের এমনিই ভালবাসি। তাদের জন্য তা হলে আলাদা করে শিশু দিবস থাকবে কেন? আমার মনে হয়, ভাল-মন্দ সকলের মধ্যে থাকে। ভাল দিকটিকে আমরা উদ্‌যাপন করতেই পারি। সেই জায়গা থেকে হোক না পুরুষ দিবসের উদ্‌যাপন!”

রূপাঞ্জনা মিত্র এবং তথাগত মুখোপাধ্যায়।

রূপাঞ্জনা মিত্র এবং তথাগত মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

তথাগতের মতে, একটি পুরুষের মধ্যে যেমন খারাপ দিক রয়েছে তেমন ভাল দিকও আছে। না হলে পৃথিবী বসবাসের যোগ্য হত না। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ শুধুই অত্যাচার করলে বিশ্ব হয়তো ধ্বংস হয়ে যেত। পাশাপাশি এও স্বীকার করেছেন, ছবির ‘টাইটেল কার্ড’ হোক বা বাড়ির ‘লেটার বক্স’, এখনও পুরুষের নাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগে যায়। রেস্তরাঁর বিল এগিয়ে দেওয়া হয় পুরুষের দিকে। একই ভাবে দোকানে কত দামের জিনিস দেখানো হবে সেটাও জিজ্ঞেস করা হয় পুরুষসঙ্গীকেই। তথাগতের মতে, সমাজের প্রত্যেকে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সব কিছু দেখে বা বিচার করে বলেই এটা ঘটে আসছে।

সেই জায়গা থেকে পরিচালক-অভিনেতার উপলব্ধি, মাতৃতান্ত্রিকতা ফিরে এলে সমাজেরই উন্নতি। তাঁর উপলব্ধি, “মেয়েরা আগে নিজের ঘর সামলায়, তার পর অন্যের।” আবার এই ভয়টাও পেয়েছেন, মেয়েরাই মেয়েদের প্রধান শত্রু। কোনও মেয়ে ছোট পোশাকে বাইরে বেরোলে তাঁকে কটাক্ষ করেন অন্য মেয়েরাই। এই ভাবনার বদল না ঘটলে মাতৃতান্ত্রিক সমাজও নারী অগ্রগতি ঘটাতে পারবে না।

এটা পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি। বিশেষ দিন নিয়ে কী মতামত শ্রীলেখা, রূপাঞ্জনার? তাঁরা পুরুষের থেকে কী চাইছেন?

শ্রীলেখার কথায়, “একটা দিন নারীদের। তাই সে দিন সাড়ম্বর উদ্‌যাপন। আমি নারীবাদী নই। তাই লিঙ্গ বিভাজন ছাড়া আর কোনও ফারাক আমার চোখে পড়ে না। তার পরেও বলব, নারীর থেকেই পুরুষের জন্ম। তাই কোথাও তো তাকে এগিয়ে রাখবই।” একই ভাবে তিনি এও জানিয়েছেন, অনুভূতি বা শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় নারী একটু বেশি স্পর্শকাতর। কারণ, তাদের এমন অনেক কিছু সহ্য করতে হয়, যা পুরুষদের জীবনে ঘটে না। সেটা সন্তানধারণ হোক বা ঋতুস্রাব। শ্রীলেখা তাই মন থেকে চান, শারীরবৃত্তীয় কিছু প্রক্রিয়া ছা়ড়া উভয় লিঙ্গের মধ্যে আর কোনও ফারাক নেই। তাই এ বার লিঙ্গসাম্য আসুক।

একই ভাবে নারীর পাশে পুরুষকে ‘সহচর’ হিসাবে পেতে চান রূপাঞ্জনা। তিনি বলেছেন, “পুরুষ মানেই অত্যাচারী, পুরুষ মানেই ভয়ঙ্কর— এই ভাবনা থেকে নারীকেও বেরোতে হবে। সেটা বার করে নিয়ে আসতে পারে একমাত্র পুরুষই।” নিজের জীবন দিয়ে তিনি বুঝেছেন, পুরুষ মাত্রেই খারাপ নয়। একটা শ্রেণির পুরুষ হয়তো এখনও নিজেকে বদলাতে পারেননি। হয়তো তাঁদের বেড়ে ওঠার পদ্ধতি সঠিক ছিল না। তাঁদের নিরিখে গোটা পুরুষসমাজকে ‘অত্যাচারী’ দাগিয়ে দেওয়া মনে হয় ঠিক নয়।

Chiranjeet Chakraborty Sreelekha Mitra Rupanjana Mitra Tathagata Mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy