Advertisement
E-Paper

মনের কথা বলার লোক নেই, ভয় হয় যদি কেউ আমার আবেগ নিয়ে খেলা করে, তাই ছুটে যাই মায়ের কাছে: দেব

দুর্গাপুজোর রেশ এখনও কাটেনি। এখন থেকেই কালীপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিজের কাজে ফিরেছেন দেব। অভিনয় জীবনের ২০ বছর কাটিয়ে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কি তিনি কষেছেন?

উৎসা হাজরা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫২
মনের কথা বলতে কার কাছে ছুটে যান দেব?

মনের কথা বলতে কার কাছে ছুটে যান দেব? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনাকে দেখে অনেকেই বলছেন ঘুমোনো ছেড়ে দিয়েছেন, চোখেমুখে ছাপ পড়ছে?

দেব: সত্যি, সময়ই পাচ্ছিলাম না। তবে অষ্টমী থেকে টানা ঘুম দিয়েছি কয়েকটা দিন। এত কাজ পর পর। প্রচারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া। আর সিনেমা রিলিজ় করানো তো এখন যুদ্ধ।

প্রশ্ন: দেবকে যুদ্ধ করতে হয়?

দেব: নিজের বন্ধুদের সঙ্গেই যুদ্ধ করতে হয়, বিশেষত মানসিক ভাবে। তা নিয়ে অবশ্য আমার কোনও অভিযোগ নেই। এখন এটাই তো প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। সিনেমা তৈরি করা সহজ। বরং প্রচার আর মুক্তি দেওয়া কঠিন।

প্রশ্ন: আর এই যু্দ্ধে জেতার মনোবল কি ‘বড়মা’র থেকে পান?

দেব: আমি আগে তারাপীঠে যেতাম। ‘খোকাবাবু’ বা ওই ছবিগুলো তৈরির সময় তো শুভশ্রীও (গঙ্গোপাধ্যায়) আমার সঙ্গে যেত। একটা বড় দল ছিল আমাদের, প্রায়ই তারাপীঠে যেতাম। দক্ষিণেশ্বরেও গিয়েছি অনেক বার। দেখুন, কোথাও তো গিয়ে মাথা নিচু করতে হবে, মনের কথা বলতে হবে। কারণ, আমার মনের কথা বলার লোক নেই। যদি কাউকে বলি, তার হয়তো আমার চেয়েও বেশি মনখারাপ হবে। ভাববে দেবের মনে এই কষ্ট! মা-বাবাকেও বলতে পারি না। যখনই মনে হয় আর পারছি না, তখনই ছুটে যাই মায়ের কাছে। মা কালী আমায় টানেও। আমাদের বাড়িতেও পুজোপাঠের চল আছে। স্নান করে, পুজো না করে কেউ বেরোই না।

প্রশ্ন: তা হলে সাফল্য এলে কি মনের কথা বলার মানুষ কমে যায়?

দেব: কমে যায় না। কিন্তু মনে হয়, আমার আবেগটা বিক্রি করে মানুষ হয়তো নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করবে। আর সেই ভয়টাই সারা ক্ষণ কাজ করে। আমার সঙ্গে ঘটেছেও। কে কোথায় আমায় ব্যবহার করবে সেটা বোঝা খুব কঠিন।

মানুষ হিসাবে অনেক বেশি ভালবাসা পাচ্ছি আমি। সেটাই এত বছরে আমার প্রাপ্তি।

মানুষ হিসাবে অনেক বেশি ভালবাসা পাচ্ছি আমি। সেটাই এত বছরে আমার প্রাপ্তি। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: তা হলে জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে দেব কিসে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়?

দেব: এক দিন না এক দিন সব চলে যাবে। এই যে যশ, খ্যাতি, মানুষের ভালবাসা— সবটা। এক দিন না এক দিন অন্য কেউ এসে আমার জায়গাটা নেবে। ভয় নয়, লড়াইটা একটাই, সেই সময়টা যেন দেরিতে আসে আমার জীবনে। নিজেকে সেই ভাবে ধরে রাখতে চাই। আসলে আমি এখন যে জায়গায় আছি তার উপরে আর যাওয়ার জায়গা নেই। সেখানে থেকে পড়লে খুব জোরে লাগবে। তাই পুজোর এক দিন কাটতে না কাটতেই ‘রঘু ডাকাত’-এর প্রচারে। আর পড়ব তো বটেই, আজ নয়তো কাল। তবে যে আসবে তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে আমায় ফেলার জন্য।

প্রশ্ন: এখন তো সবচেয়ে আলোচিত ছবির পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাচ।

দেব: জেলা, শহরতলি, গ্রামে যে আমাদের এত বড় দর্শক রয়েছে সেই অভিজ্ঞতা ধ্রুবদার প্রথম বার হল।

যাঁরা মূলত শহরকেন্দ্রিক ছবি তৈরি করেন তাঁদের পক্ষে এই বিষয়টা বোঝা খুব কঠিন ব্যাপার। ধ্রুবদা নিজেই জানিয়েছেন আমায়, তাঁর এই ধারণা ছিল না।

প্রশ্ন: শহরকেন্দ্রিক পরিচালকদের তা হলে দেবের মতো ‘স্ট্র্যাটেজিস্ট’ দরকার?

দেব: প্রচারই তো সব। ভাল ছবি তৈরি করতে হবে। সঠিক ভাবে প্রচার করতে হবে। সিনেমা ভাল চললে আমারই প্রচার বাড়বে। যেমনটা হচ্ছে। আসলে আমরা পরস্পরের পরিপূরক। খালি ভয়টা একটাই, যে ভাবে খেয়োখেয়ি হচ্ছে! নিজে উঠতে না পারলে অন্যকে টেনে নীচে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আমার এটাই ভয় লাগে। আর এ বার যেন একটু বেশিই হল।

সমালোচনা না হলে ভয় লাগে। মনে হয়, কিছু ভুল করলাম না তো!

সমালোচনা না হলে ভয় লাগে। মনে হয়, কিছু ভুল করলাম না তো! ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: যদি কেউ এসে বলে আপনার অভিনীত ছবি তাঁর ভাল লাগেনি। তা হলে সেটা শুনতে পারবেন?

দেব: আমি তো ছোটবেলা থেকে ট্রোলড হচ্ছি। সুতরাং খারাপ শুনতে আমি অভ্যস্ত। বরং সমালোচনা না হলে ভয় লাগে। মনে হয়, কিছু ভুল করলাম না তো! আমার নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে ভাল লাগে।

প্রশ্ন: বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন এই ছবির জন্য। যেহেতু রাজনৈতিক সত্তাও রয়েছে আপনার। সে ক্ষেত্রে কি মানুষের কাছে পৌঁছোনো সহজ হয়েছে?

দেব: আমার মনে হয় না রাজনৈতিক সত্তার জন্য মানুষের কাছে পৌঁছোনো সহজ হয়েছে। সে তো অনেক নেতাই আছে। যাঁরা পারছেন না তাঁরা বলছেন আমি রাজনীতিক, তাই সুবিধা পাচ্ছি। খাদানের সময় থেকে হঠাৎই উপলব্ধি করেছিলাম যে আমায় জেলায় জেলায় পৌঁছোতে হবে। এখন এটা ধারা। কুণালদা তো প্রকাশ্যে শিবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুজোর শ্রেষ্ঠ ছবি বলেছেন ওই ছবি। উনিও তো দলের বড় অংশ। সুতরাং,মানুষের কাছে সবাই পৌঁছোতে পারবে। কিন্তু আলোচনা হচ্ছে দেবকে নিয়ে। এটাই গত ২০ বছরে আমি অর্জন করেছি। অন্য দলের সদস্যেরা আমাকে সম্মান করেন। কিন্তু নিজের দল থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়।

প্রশ্ন: মনে নিশ্চয়ই অনেক অভিমান জমেছে?

দেব: না, আমার কোনও অভিমান নেই। তবে হ্যাঁ অন্য দলের তরফে হয়তো অনেক প্রশ্ন উঠতে পারত। কিন্তু সেই প্রশ্ন উঠেছে আমার নিজের দলের তরফে। শুধু দল নয়, যাঁরা অন্য নায়কের ভক্ত তাঁরাও কিন্তু আমার ছবির প্রচারে আসেন। মানুষ হিসাবে অনেক বেশি ভালবাসা পাচ্ছি আমি। সেটাই এত বছরে আমার প্রাপ্তি।

নিজেকে চাঙ্গা রাখতে দেবের সম্বল হল কফি।

নিজেকে চাঙ্গা রাখতে দেবের সম্বল হল কফি। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: এখন দেব নিজের দিন কী ভাবে সাজায়? কী খান সারা দিনে?

দেব: গত কয়েক মাস সারা দিন তো ‘রঘু ডাকাত’ নিয়েই কেটে যাচ্ছিল। কখন দিন হচ্ছে, রাত হচ্ছে সেটা বুঝতেই পারিনি। আর নিজেকে চাঙ্গা রাখতে আমার সম্বল কফি। অনেক কাপ কফি হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ‘ড্রাউজ়ি’ লাগে। আবার কফি খেয়ে ঠিক হয়ে যাই। এখন আমার শরীরও বুঝে গিয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার অনেক ছবির প্রচারে তো দেখা যায় বাবা-মাকে। বড় হলে বা সফল হলে কি আরও বেশি পরিবারকে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছা হয়?

দেব: কী ভাবে উত্তর দেব এটার! আসলে সারাক্ষণ তো আমার চাপটা ওরা দেখতে পাচ্ছে। রবিবারও বাড়িতে মিটিং চলে অনেক সময়। নিজেদের কথা বলতে পারে না ভয়ে, যদি আমার চিন্তা আরও বেড়ে যায়। এখন চেষ্টা করি যতটা বেশি সময় দেওয়া যায়। এই তো আমার সঙ্গে দুবাই যাবে মা-বাবা, বোন,‘রঘু ডাকাত’-এর প্রদর্শনে। আমার মা তো সমাজমাধ্যমেও খুব সক্রিয়, সব লক্ষ রাখে।

যদি কাউকে মনের কথা বলি, তার হয়তো আমার চেয়েও বেশি মনখারাপ হবে।

যদি কাউকে মনের কথা বলি, তার হয়তো আমার চেয়েও বেশি মনখারাপ হবে। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনার সব ভিডিয়ো, ইন্টারভিউ তা হলে মায়ের জানা।

দেব: মা নিজে কিছু পোস্ট করেন না। কিন্তু সব খেয়াল রাখেন। এই তো আমায় বলছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কী সব হচ্ছে দেখছি। দিদির সঙ্গে কথা বল। আমি মাকে বোঝালাম। গুরুত্ব দিতে বারণ করলাম। কী আর বলব! আমরা ভাল আছি।

প্রশ্ন: আপনি নিজেকে কি সফল বলে মনে করেন?

দেব: স্বপ্ন অনেক বড়। আমি নিজেকে যে জায়গায় দেখতে চাই, এখনও ৫০ শতাংশও সেখানে পৌঁছোতে পারিনি বলে আমার মনে হয়। আরও অনেক দূর যেতে হবে। সবে শুরু করলাম মনে হল।

Celebrity Interview Dev Tollywood Actor Raghu Dakat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy