বলিউডের যদি ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ হয়, বাংলার তা হলে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’।
২৫ বছর পরে এ বছরের জামাইষষ্ঠীতে প্রেক্ষাগৃহে আবার বাজবে, ‘চোখ তুলে দেখো না কে এসেছে’। ফিরছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ফিরছে হরনাথ চক্রবর্তী পরিচালিত, এসভিএফ প্রযোজিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’। “হরদার হাত ধরে সেই যে বুম্বা-ঋতু জুটির যাত্রা শুরু হল, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অযোগ্য’ ছবিতেও তারা হিট! আমাদের ৫০তম ছবি সেটা!” আক্ষরিক অর্থে ‘ব্লকবাস্টার’ ছবির পুনর্মুক্তি প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডট কমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে শিহরিত খোদ প্রসেনজিৎ, বাংলার বিনোদন দুনিয়ার ‘ইন্ডাস্ট্রি’! একটু থেমে দম নিলেন। তার পর যোগ করলেন, “আমাদের নিয়ে যে যতই বলুক, কিছু তো একটা ব্যাপার আছে। নইলে এক এক জন প্রযোজকের ৯টা, ১০টা ১২টা করে ছবিতে আমরাই জুটি? লোকে আমাদের সেই সময় ‘লক্ষ্মীমন্ত পেয়ার (জুটি) বলে ডাকত।”
ফিরে যাওয়া যাক ২৫ বছর আগে। সাল ২০০০। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি...
ধরিয়ে দিতেই ফের অনর্গল প্রসেনজিৎ। বললেন, “সপ্তাহের পর সপ্তাহ যাচ্ছে। কাতারে কাতারে লোক প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করছেন! ১৬ সপ্তাহের পরেও সে সময়ের এই ছবি লোকে লরিতে চেপে দেখতে আসতেন। যাতে এক সঙ্গে অনেকে আসতে পারেন। তখন তো ছিলই, এখনও বিয়ে বাড়িতে ‘চোখ তুলে দেখো না’ গান বাজবেই। ঋতুকে সে কথাই বলছিলাম।” ছবির চাহিদা দেখে মাঝপথে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও দর্শকসংখ্যা কমেনি, গর্বের সঙ্গে জানালেন টলিউডের ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’। “এ সব তো এখনকার বলিউডে দেখা যায়। আমরা তখনই করেছিলাম”, আত্মপ্রসাদের হাসি হেসে দাবি তাঁর। নিজের মনেই বলে চলেছেন, “একটি হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবি। তার চাহিদা আকাশছোঁয়া। এখনকার প্রজন্ম ভাবতেই পারে না!” কেবল প্রেক্ষাগৃহ থেকে কোটি কোটি টাকা উপার্জন, পরিবেশক, প্রযোজক, হলমালিকদের।
প্রসেনজিৎ এই প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তাই বার্তা দিয়েছেন, “যাঁরা আমাকে ‘অটোগ্রাফ’, ‘২২শে শ্রাবণ’ দেখে চেনেন, তাঁদেরকে অনুরোধ, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর প্রসেনজিৎকেও দেখে আসুন।” জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে তৃষাণজিৎ, ঋতুপর্ণার ছেলে অঙ্কনের জন্য এটাই মা-বাবাদের তরফ থেকে ‘উপহার’ হতে চলেছে।
এই ছবির শুটিং চলাকালীন ঋতুপর্ণা ডাক পেয়েছিলেন অপর্ণা সেনের ‘পারমিতার একদিন’ ছবিতে। সেখানেও তিনি নায়িকা। অভিনেতার কথায়, “রিনাদিকে লুকিয়ে আমাদের ছবির শুটিং করত ঋতু। দিনে রিনাদির ছবির শুটিং। রাতে আমাদের। আমি ওকে বলি, একই সঙ্গে দুই ভিন্ন ধারার, ভিন্ন স্বাদের নায়িকার চরিত্রে অভিনয় অভিনেতাদের ভাগ্যে খুব কম জোটে। সেই দিক থেকে তুমি ভাগ্যবতী।”
আরও পড়ুন:
জুটির চাহিদা আজও বর্তমান। এখনও কোনও ছবিতে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার নাম শুনলে দর্শক হলে দৌড়ন। অস্বীকার করেননি অভিনেতাও। দীর্ঘ জনপ্রিয়তার নেপথ্য রহস্য কী? অভিনেতার দাবি, “এক সঙ্গে কাজ করতে করতে করতে ঋতুর মধ্যে প্রফেশনালিজ়ম আরও বেড়ে গিয়েছিল। আমরা শুধুই আমাদের কাজ দেখতাম না। প্রযোজক-পরিচালকের স্বার্থ বেশি করে দেখতাম। যাতে ছবি হিট হয়। বাণিজ্য বাড়ে। তা হলে আরও ছবি তৈরি হবে। আমরা আরও বেশি করে সুযোগ পাব।”
অভিনেতার উপলব্ধি, এখনকার দিনে কেউ আর সেটা ভাবেন না! সকলে শুধুই ‘আমি’ আর ‘আমি’।