বাংলা সিনেমা নিয়ে বাঙালির আবেগ বরাবরই ছিল। সম্প্রতি, সেই বিশ্বাসে কি চিড় ধরেছে? একের পর এক বাংলা ছবির মুক্তি এবং বাণিজ্যে ব্যর্থতা— প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের অভাব সে দিকেই যেন ইঙ্গিত করছে। বাড়তি সমস্যা, পরিচালক-টেকনিশিয়ান দ্বন্দ্ব। যে কারণে, যখন-তখন বাংলা ছবির শুটিং বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবু প্রচেষ্টার অন্ত নেই। যেমন, সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট দু’দিন ব্যাপী ছোট ছবি এবং তথ্যচিত্রের উৎসবের আয়োজন করেছে। তারই প্রচারে উপস্থিত পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেত্রী পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত-সহ আরও অনেকে।
বিনোদন দুনিয়া কি ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে? বড় ছবির উৎসব থেকে ছোট ছবির উদ্যাপন। সমস্ত কিছুই কি আস্তে আস্তে গুটিয়ে যাচ্ছে?
আনন্দবাজার ডট কম জানতে চেয়েছিল ‘ছবিওয়ালা’র কাছে। অদ্ভুত সুন্দর যুক্তি দিয়েছেন তিনি। কৌশিকের কথায়, “বিরিয়ানি, মাংস-ভাত আর ফুচকা। কিংবা গাঠিয়া, চানাচুর— কোনওটার বিক্রি কি কমেছে? সমস্তটাই সমান্তরাল ভাবে রয়েছে, সব গুলোই প্রাসঙ্গিক।” তার পরেও পরিচালকের ষষ্ঠেন্দ্রিয় অনুভব করতে পারছে, ছোট ছবির বাজার ভীষণ ভাবে বাড়তে চলেছে। তাঁর মতে, “অনেকেই এখন হয়তো বুঝতে পারছেন না। খুব শীঘ্রই বুঝতে পারবেন। তখন আমার এই বক্তব্য ভবিষ্যদ্বাণী বলে মনে হবে সকলের।”
আরও পড়ুন:
নিজের বক্তব্যের সপক্ষে পরিচালকের ঝুলিতে যুক্তির অভাব নেই। কেন ছোট ছবির বাজার বা চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কৌশিকের মত, “বড় ছবির অবশ্যই আলাদা কদর। কিন্তু দু’ঘণ্টা ধরে যে বিষয় আমরা দেখি সেটা দু’মিনিটে যদি কেউ দেখতে পান তা হলে পাল্লা তো ক্রমশ তারই ভারী হবে।” কৌশিক তাই ছোট ছবির প্রতি ক্রমশ আসক্ত হয়ে পড়ছেন। কথা বলতে বলতে তিনি ফিরে দেখেছেন অতীত। যখন ছোট পর্দায় চ্যানেল বলতে বাংলা দূরদর্শন। সেখানে মিনিট দুয়েকের একটা করে ছোট ছবি বানাতেন। সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে। নাম ছিল ‘একেই কি বলে সভ্যতা’। “ছোট ছোট এই ছবিগুলো সে সময়েও দর্শকমনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলত”, বলছেন তিনি।
সেই যুগ যে আবার ফিরছে এবং প্রবল ভাবে— এ বিষয়ে আশাবাদী তিনি। কৌশিক এর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মকেও। পরিচালকের মতে, বিনোদন এখন মুঠোবন্দি। অফিস যেতে-আসতে যদি ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা মনোরঞ্জন মাত্র কয়েক মিনিটে দেখে ফেলা যায় তা হলে মন্দ কী? “এই ভাবনা থেকেই ক্রমশ দর্শক ছোট ছবিতে বুঁদ হবেন। ছবির সংখ্যা বাড়বে। পরিচালকেরাও আগ্রহী হবেন।” একটু থেমে আরও যোগ করেছেন, এই ধরনের ছবি বানানোর খরচও কম। মাত্র দু’লক্ষ টাকায় ছোট ছবি হয়ে যায়।