ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্মদিনে স্মৃতিচারণায় ঋতুপর্ণা।
ঋতুদা সম্পর্কে যা-ই বলি না কেন, মনে হয় সব সময় কম বলছি। ঋতুপর্ণ ঘোষের কখনও মৃত্যু হতে পারে না। আমার তাকে দেখা একটু অন্য ভাবে। মাত্র দু’টো ছবি করেছিলাম একসঙ্গে। কিন্তু সম্পর্কটা ছিল অ্যাকশন-কাটের পরিধির চেয়ে অনেকটা বড়। ঋতুদার পরিচালনায় অভিনয় করা, সে এক অন্য অনুভূতি।
ছোটদের ছবি ‘হীরের আংটি’র হাত ধরে ঋতুদার যাত্রা শুরু। শেষ ছবি ‘চিত্রাঙ্গদা’। প্রতিটা ছবিতে সম্পর্ককে এক অন্য আঙ্গিকে দর্শকের কাছে তুলে ধরেছিল ঋতুদা। গল্পের ছলে প্রতিটা সম্পর্কের গভীরতাকে এ ভাবে তুলে ধরা— ঋতুদা ছাড়া কেউ পারবে না। মনের কথাগুলো খুব সহজেই যেন পড়ে ফেলতে পারত আমার ঋতুদা।
মহিলাদের তাদের মতো করে উপলব্ধি করত। আমার একটা আক্ষেপ রয়ে যাবে সারা জীবন। শেষ যে চিত্রনাট্যটা শুনিয়েছিল, সেই কাজটা সম্পন্ন হল না। দেব, প্রিয়াংশু আর আমায় নিয়ে একটা দারুণ গল্প ভেবেছিল। তার পর তো আচমকাই যেন এক দমকা হাওয়া এসে সব উল্টেপাল্টে দিল। এখনও আমার মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছে রয়ে গিয়েছে। যদি সেই চিত্রনাট্যটা হাতে পেতাম, তা হলে নিজের মতো করে শুরু করতাম কাজটা।
মানুষ ঋতু আমার কাছে ধরা দিয়েছিল একটু অন্য ভাবেই। আমার বিয়েতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ওর। বিয়ের কার্ড আঁকা থেকে আমায় চন্দন পরানো— সবটাই করেছিল নিজে হাতে। ওঁর জন্মদিনে এই কথাগুলোই বার বার মনে পড়ে যায়। আর যত মনে পড়ে, তত বার মন খারাপ হয়।
তখন বাংলা ছবির এত বিদেশে প্রদর্শনীর চল ছিল না। সেই প্রথম ‘উৎসব’ নিয়ে যাওয়া হল। বিদেশের বহু শহরে প্রদর্শনী হল। বিশ্বের দরবারে বাংলা ছবিকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিল ঋতুদাই। ‘দহন’-এর রোমিতা হোক কিংবা ‘উৎসব’ ছবির কেয়া— প্রতিটা চরিত্রকে নিজের মধ্যে প্রথমে বপন করত। আমি এখনও বিশ্বাস করি, নারী মনকে ঋতুদার চেয়ে বেশি ভাল কেউ জানতেই পারেনি, পারবেও না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy