ন’বছর লম্বা সময়। দীর্ঘ দূরত্ব সরিয়ে আবার ছোট পর্দায় প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী। এই ন’বছরে তিনি বেশ কিছু সিরিজ় প্রযোজনা করেছেন। সিরিজ় পরিচালনাও করেছেন। তাঁর হাত ধরে সিরিজ় ‘কেমিস্ট্রি মাসি’ দিয়ে অভিনয়ে ফিরেছেন দেবশ্রী রায়। আর প্রচুর প্রেমের কবিতা লিখেছেন। অভিনেতার বেশ কিছু কবিতা ভাইরাল। সৌরভের অনুরাগীরা ভেবেছিলেন, আর অভিনয় নয়, আগামী দিনে হয়তো তিনি পাকাপাকি ভাবে পরিচালনায় আসবেন।
সেই হিসাব বদলে দিয়ে সৌরভ ধারাবাহিক ‘লক্ষ্মীর ঝাঁপি’র নায়ক ‘গভীর’। ছোট পর্দায় এত বছর পরে প্রত্যাবর্তন। ভাল লাগছে?
শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে নিতেই সৌরভ বললেন, “সত্যিই ভাল লাগছে। বাস্তব থেকে তুলে আনা বিষয় ধারাবাহিকের পটভূমিকায়। নিজে দেখেছি, চিট ফান্ড সংস্থার সঙ্গে যুক্তদের কী দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে!” অভিনেতা হিসাবে প্রত্যাবর্তনের আগে যদিও বেশ ভয়েই ছিলেন তিনি। তাঁর মনে হয়েছিল, পরিস্থিতি, পরিবেশ, ছোট পর্দায় কাজের ধরন ন’বছরে বদলে গিয়েছে। তাঁকে এত বছর পরে দর্শকেরা কতটা গ্রহণ করবেন, সেই দ্বিধাও কাজ করেছে। অভিনেতার মতে, তিনি ভাগ্যবান। তাই এত দিন পরেও দর্শক তাঁকে মনে রেখেছেন। তাঁর অভিনয় নিয়মিত দেখছেন।
ধারাবাহিকে কাজ করতে করতে মনে হয়েছে পরিচালনার কথা? “ধারাবাহিক পরিচালনা করব এ রকম ইচ্ছা নেই। কারণ, ধারাবাহিকের পরিচালকদের কাঁধে গুরুদায়িত্ব। রোজ একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পর্ব তুলতে হবে, তার রেটিং নম্বর নিয়ে ভাবতে হবে— এই ক্ষমতা আমার নেই। বদলে ধারাবাহিক প্রযোজনায় বেশি আগ্রহী আমি,” বললেন সৌরভ। তিনি একটি চ্যানেলের জন্য সম্প্রতি ১০০ দিনের একটি ধারাবাহিক প্রযোজনাও করেছেন। ধারাবাহিকে ফিরলে ‘নায়ক’ হয়েই ফিরবেন, এমনই ইচ্ছা ছিল তাঁর।
প্রত্যাবর্তনের পরেই বড় চ্যালেঞ্জ। নায়িকা শুভস্মিতা মুখোপাধ্যায় বয়সে অনেক ছোট। ধারাবাহিকের দুনিয়াতেও অনেক দিন আসেননি। ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ দিয়ে ছোট পর্দায় তাঁর হাতেখড়ি। বন্ধুত্ব হয়েছে?
“আমাকে নিয়ে আমার বেশি ভয়। এত বছর পরে আমি কতটা পারব? কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক টেনে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, শুভস্মিতা খুবই পরিশ্রমী এবং মিশুকে। শান্ত স্বভাবের। অসুবিধা হচ্ছে না,” বললেন ‘লক্ষ্মীর ঝাঁপি’র নায়ক। জানালেন, আদতে ধারাবাহিকটি প্রেমের। নায়িকার সঙ্গে দ্রুত পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। প্রথম দিন থেকে তাই তাঁদের রসায়ন নিয়ে চর্চা হচ্ছে। সৌরভ নাকি নিজেও খুবই প্রেমিক স্বভাবের। তাই প্রেমের গল্প, প্রেমের ধারাবাহিকে কাজ তাঁর খুব ভাল লাগে। টেলিপাড়ার প্রসঙ্গ এনে তাঁকে প্রশ্ন করা হল, তাঁদের জুটির মতোই আরও এক নায়ক-নায়িকা এখন ‘টক অফ দ্য টাউন’! তড়িঘড়ি অভিনেতা বলে উঠলেন, “আমি বহিরাগত। আমার এ বিষয়ে বলা উচিত নয়। এটুকু বলতে পারি, আমার ধারাবাহিকে নায়িকা খুবই পরিণত। ফলে, এই ধরনের কোনও সমস্যা আমাদের নেই।”
সৌরভের যেমন প্রেম পছন্দ, এই প্রজন্মেরও বোধহয় ততটাই। তাই তাঁর লেখা কবিতা এই প্রজন্মের খুব পছন্দ। যেমন পছন্দ প্রেমের ছবি ‘সইয়ারা’। বাস্তবের সঙ্গে প্রেমকে তিনি মিলিয়ে মিশিয়ে দেন কাব্যিক ছন্দে। তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে ফুটে ওঠে, ‘বুকের ভিতর নৌকাগুলোর বাড়ছে দাবি/ আর কত দিন মেঘগুলোকে বলতে যাবি/ বৃষ্টি হতে... আর্দ্রতাহীন এই মাটিতে এখনও কিছু গোলাপ ফোটে...’।
যাঁর বুকে এত প্রেম, ভালবাসার সৌরভ তিনি কি কোনও দিন ‘সইয়ারা’র মতো ছবি বানাবেন?
“অবশ্যই বানাব”, প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতার দাবি। মৃদু স্বরে যোগ করলেন, “দর্শকদের এই ধরনের ছবি এত কেন পছন্দ জানেন? কেন সব বয়সিরা প্রেমের ছবি এলে দর্শকেরা হল ভরান? কারণ, যন্ত্রসর্বস্ব যুগে মানুষ প্রেম থেকে দূরে থাকে, তাই। যত লোকে প্রেম থেকে দূরে যাবে ততই প্রেমের ছবি বেশি করে দেখবে। প্রেমের ছবি তৈরিও হবে।”
আরও পড়ুন:
আপনার ‘প্রাক্তন স্ত্রী’ মধুমিতা সরকার বিয়ে করছেন। সৌরভ প্রেমিক পুরুষ, তবু আজও তিনি ‘একা’! কেন?
অভিনেতা কিন্তু জবাব দিতে একটুও সময় নেননি। হাসতে হাসতে অনায়াসে বলেছেন, “জানি তো। খুব ভাল।” নিজেকে বিশ্লেষণ করতে একটু সময় নিয়েছেন। তার পর জানিয়েছেন, তিনি প্রেম করতে নয়, প্রেমে পড়ায় বিশ্বাসী। একই সঙ্গে দুমদাম প্রেমে পড়ায় বিশ্বাসী নন। রয়েসয়ে সবটা হলে খুশি। আবার সম্বন্ধ করে বিয়েও তিনি করবেন না। তাই সবটাই সময়ের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। “অনেকেই যে কোনও বয়সে ঝটপট প্রেমে পড়তে পারেন। আমায় হয় না। আমি তাই সময়ের অপেক্ষায় চুপচাপ থাকি।”