Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আমার রাসমেলা

ছোট একটা শহরেও এত বড় মেলার আয়োজনের এমন নজির বোধহয় অন্যত্রও খুব বেশি নেই। মুম্বইয়ে বসেও তাই রাসমেলার কথা মনে পড়ে।

স্মৃতি: ছোটবেলায় বাড়ির সকলের সঙ্গে মৌনী। নিজস্ব চিত্র

স্মৃতি: ছোটবেলায় বাড়ির সকলের সঙ্গে মৌনী। নিজস্ব চিত্র

মৌনী রায়
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:২১
Share: Save:

রাসমেলা মানেই আমার কাছে একরাশ সোনালি স্মৃতির অ্যালবাম। যেখানে পরপর সাজানো আনন্দঘন মূহূর্তের নানা ছবি। সেই ছবিগুলি আজও উজ্জ্বল। তাই রাসমেলার কথা মনে পড়লেই ছুটে যেতে ইচ্ছে করে আমার প্রিয় শহর কোচবিহারে। আমার শৈশব, কৈশোরের অনেকগুলি বছর এই কোচবিহারে শহরেই কেটেছে।

এই শহরে রাজবাড়ি আছে, মদনমোহন মন্দির আছে। আর মদনমোহন দেবের রাস উৎসব ঘিরে আয়োজন হয় ঐতিহ্যের রাসমেলার। ছোট একটা শহরেও এত বড় মেলার আয়োজনের এমন নজির বোধহয় অন্যত্রও খুব বেশি নেই। মুম্বইয়ে বসেও তাই রাসমেলার কথা মনে পড়ে। বন্ধুমহলে আলোচনাতেও রাসের প্রসঙ্গ ওঠে। রাসমেলা নিয়ে যত বলি তত গর্বে ভরে যায় আমার মন। দারুণ দারুণ আনন্দ হয়। প্রিয় শহরের রাসমেলা যে আজও আমায় দারুণ ভাবে টানে। একদম মন থেকেই বলছি, পরবর্তীতে সুযোগ পেলে আবারও ঐতিহ্যের রাসমেলা দেখতে অবশ্যই যাব।

ছোটবেলায় তো বাবার কোলে চেপেই (প্রয়াত অনিলচন্দ্র রায়, কোচবিহার জেলা পরিষদের অফিস সুপারিন্টেনডেন্ট পদে চাকরি করতেন) রাসমেলায় যেতাম। বাবার কোল থেকে ছোট্ট হাতে মদনমোহন মন্দির চত্বরের রাসচক্র ঘোরাতাম আমি। নাগরদোলাও ছিল আমার ভীষণ প্রিয়। রাসমেলা এলে তাই আরও বেশি ভাল লাগত। নাগরদোলায় দোলার মজাটাই যে আলাদা! বান্ধবীদের সঙ্গে রাসমেলায় নাগরদোলায় চাপতে কি যে ভাল লাগত সেটা বলে বোঝাতে পারব না! এক অন্যরকম অনুভূতির মতো ব্যাপার। এখন তো নাগরদোলায় ওঠার সুযোগই হয়না। পৃথিবীর অনেক দেশেই ঘোরার সুযোগ, সৌভাগ্য হয়েছে, কিন্তু ছোটবেলার রাসমেলা ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটা ভুলতে পারি না। ওটা যেন আমার কাছে এখনও এক টুকরো কল্পনার জগতের মতো। কোনও কিছুর সঙ্গেই যার তুলনা করা যায় না।

রাসমেলা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আরও অজস্র স্মৃতি রয়েছে। ছোটবেলায় কখনও পুতুল কেনার বায়না করতাম, কখনও আবার এগরোল খাওয়ার। মা (মুক্তি রায়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা), ভাই মুখরের সঙ্গেও মেলার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আত্মীয়েরা এলেও তাদের সঙ্গে যেতাম। আমার মামার ছেলে, মানে বড়দাও (বিদ্যুৎ রায় সরকার) ছোটবেলায় অনেকবার রাসমেলা দেখতে নিয়ে গিয়েছেন। ছোটবেলায় পুতনা রাক্ষসীর মূর্তির সামনেও অনেক সময় দাঁড়িয়ে অবাক চোখে দেখতাম। বাবা, মাকে নাকি অজস্র প্রশ্নও করেছি। মেলা থেকে চুড়ি, মালার মত নানা সাজগোজের জিনিস কেনার শখ ছিল আমার। টুকরো টুকরো এমন নানা ছবিতে সাজানো আমার রাসের অ্যালবাম। রাসমেলা থেকে কেনা দু’একটা পুতুল বোধহয় এখনও বাড়িতে আছে। আর আছে অনেক অনেক সুন্দর স্মৃতি।

(সহায়তা: মুক্তি রায়, মুখর রায় ও বিদ্যুৎ রায়। অনুলিখন: অরিন্দম সাহা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mouni Roy Rash Festival Coochbihar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE